হিলিতে ঊর্ধমুখী নিত্যপণ্যের বাজার সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ২৩:১৯
হিলিতে ঊর্ধমুখী নিত্যপণ্যের বাজার সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
হিলি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলিতে বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও উর্ধমুখী নিত্যপণ্যের বাজার। বিশেষ করে মসলা জাতীয় পণ্য জিরা ও রসুনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এছাড়া বাজারে চিনি, গুড়, শাক-সবজী, পেঁয়াজ কাঁচা পণ্য, পোটল, আলু, কাঁকরুল, ঢেঁড়স, বেগুন, করলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন মাছ, এর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সয়াবিন তেল, কাঁচামরিচ ও আদার দাম বাজারে কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বাজারে।


অন্য দিকে বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে বয়লার মুরগির ডিম। সপ্তাহের ব্যবধানে ৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সাধারণ ক্রেতাদের উঠেছে নাভিশ্বাস।


সোমবার (১৪ আগষ্ট) ও গত ১৩ আগষ্ট রবিবার সাপ্তাহিক হাটের দিন সরজমিনে হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চিনি ১৩০ টাকা, গুড় ১২০ টাকা, মসুর ডাল ৯০ টাকা ও ১৪০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ভারত থেকে কাঁচা মরিচের আমদানি অব্যাহত থাকায় ৪০০ টাকার কাঁচা মরিচ বর্তমানে প্রতি কেজি ১৪০ -১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকলেও কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা দরে। ঈদের আগে আদার দাম ৪০০ টাকা থাকলেও বর্তমানে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা। ভারতী জিরা প্যাকেট (১ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়। সোয়াবিন তেল বোতলজাত বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা লিটার (দুই লিটার) ৩৫০ টাকা এবং খোলা সোয়াবিন তেল কেজি ১৯০ -১৯৫ টাকা।
হিলি মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাঙ্গাশ মাছ প্রতি কেজি ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, রুই মাছ ৩০০ টাকা, সিলভার কপ ১৬০-১৭০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০-১৭০ টাকা, মাগুর ৫৫০-৬০০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গরুর গোস্ত ৬৫০-৭০০ টাকা কেজি, খাসির গোস্ত ৮৫০-৯০০ টাকা, বয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬৫-১৭০ টাকা, সোনালী মুরগি ২৭০-২৮০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে বাজারে দাম বৃদ্ধির তালিকায় নতুন নতুন করে যুক্ত হয়েছে বয়লার মুরগির ডিম। গত এক সপ্তাহ আগে এক হালি ৪৪ টাকা বিক্রি হলেও আজ এক হালি বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়।


অন্য দিকে হিলি কাঁচা সবজির বাজার ঘুরে দেখা, টানা বৃষ্টির কারণে সপ্তাহের ব্যবধান বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। গত রবিবার হাটের দিন বেগুন কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, আলু ১০ টাকা কেজি বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, কাঁকরুল ৪০-৪৫, করলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০-৩৫ টাকা, পেঁপে ৫০-৬০ টাকা, কচুর বই ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।


হিলি কাঁচাবাজার করতে আসা সবুজ মিয়া ও গৃহবধূ শাহনাজ পারভীন বলেন, বাজারে সব জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। বাজারে আসলে হিসাব মিলাতে পারছি না। কি যে করি! এক থেকে দুই সপ্তাহ আগে রসুন কিনেছি ১২০-১৩০ টাকা। আজ সেই রসুন ২৪০ টাকা কেজি। ভারতীয় পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ছিলো ৩০-৩২ টাকা আজ প্রতি কেজি ৫০ টাকা। দুই দিন আগে কিনলাম ৪০ টাকা কেজি পেঁয়াজ। অন্য দিকে মসুর ডাল ৯০ ও ১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চিনি ১৩০ টাকা ও গুড় ১২০ টাকা। তবে আদা ও কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৪০-১৫০ টাকা ও আদা ১৫০-১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ করে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার মনিটরিংও করা হয় না। যার জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজ খেয়াল খুশি মতো দাম বাড়িয়ে দেন।


হিলি মাছ বাজারে মাছ কিনতে আসা আব্দুল মজিদ মিয়া বলেন, প্রায় সব মাছের দাম বেড়েছে। পাঙ্গাশ মাছ ১৬০ টাকা কেজি ছিলো বর্তমানে ১৯০-২০০ টাকা, রুই মাছ ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্য মাছের দাম ও বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য দিকে বয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬৫-১৭০ টাকা ও সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ২৭০-২৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।


তিনি আরও বলেন, আজ বাজারে নতুন করে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বয়লার মুরগির ডিম। এক সপ্তাহ আগে ডিম কিনেছিলাম ১১ টাকা পিছ, এক হালি ৪৪ টাকা। আজ শুনলাম এক হালি ৫২ টাকা। তাহলে আমরা কিভাবে চলবো বুঝতে পারছি না।


হিলি বাজারের কয়েকজন কাঁচা পণ্য বিক্রেতা জানান, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে মোকামগুলোতে সব কিছুর দাম বেশি। আমরা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছি। দাম বেশির কারণে অনেক সময় ক্রেতাদের সঙ্গে তর্কে জড়াতে হচ্ছে। বেগুন, পটল, আলু, কাঁকরুল, করলাসহ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে কাঁচামরিচের সরবরাহ বৃদ্ধি হওয়ার কারণে ১৪০-১৫০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছ।


হিলি বাজারের পেঁয়াজ, রসুন ও আদা বিক্রেতা শাকিল আহম্মেদ বলেন, বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ আড়ৎ এ দাম বেশি। আমরা কি করবো। ওখানেই প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কিনতেছি। আর বাজারে বিক্রি করতেছি ৪৮-৫০ টাকা। রসুনের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি রসুন ২৪০ টাকা বিক্রি করছি। আদা প্রতি কেজি ১৫০-১৬০ টাকা বিক্রি করছি।


হিলি বাজারে ডিম বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে মোকাম গলোতে ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। এক সপ্তাহ আগে এক হালি ডিম বিক্রি করছি ৪৪ টাকা। আজ এক হালি ডিম বিক্রি করছি ৫২ টাকায়। আমাদের এখানে করণীয় কিছুই নাই। আমরা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছি।


বিবার্তা/গোলাম রব্বানী/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com