পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় নদী ও খালে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধসে যাচ্ছে- হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। স্থানীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ড্রেজার দিয়ে নদী, খালবিল থেকে বালু উত্তোলন করায় আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ প্রশাসনের যোগসাজসে ড্রেজার মালিকরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলণ করছে।
জানা গেছে, ড্রেজার দিয়ে উত্তোলনকৃত বালুর বেশিরভাগই স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের টিআর, কাবিখা, ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও অনেকে কম খরচে নিচু জমিতে ভিটা তৈরিতে নদী ও খাল থেকে বালু উত্তোলন করছে।
এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি জানালেও তা কোনো কাজে আসছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। ড্রেজারের মালিকরা ঘুরে ঘুরে নদী ও খাল থেকে বালু উত্তোলন করছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকিতে পড়েছে সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দিরসহ বসতবাড়ি।
বিলডুমুরিয়া গ্রামের শাহাবুদ্দিন মেম্বারের বাড়ির দক্ষিণ পার্শ্বে মাহাবুব ড্রেজার ভাড়া করে খাল থেকে বালু উত্তোলন করছে।
ড্রেজার মালিক মো. আল-আমিন (৩৫) বিবার্তাকে জানান, আমরা চেয়ারম্যানের অনুমতিতে তার কর্মী মনির বালির মাধ্যমে ড্রেজার প্রতি ৩ হাজার টাকা করে নাজিরপুর থানার এস আই নাজমুলকে দেই, তবে আগে টাকা দেওয়া লাগত না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ইউনিয়নে ১৫-২০টি ড্রেজার রয়েছে। ডাক পড়লেই মেশিনপত্র নিয়ে গ্রামের আনাচে-কানাচে ছুঁটে যায় ড্রেজার মালিকরা। বেশ কিছুদিন আগে স্থানীয় ইউপি সদস্যরা ৪০ দিনের কর্মসূচীর কাজে খাল থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে রাস্তার কাজে ব্যবহার করে। তা নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেও কোন ভাবেই থামছে না বালুদস্যুরা। ড্রেজার মালিকদের মন্তব্য, সরকারি কাজে এ ড্রেজার ব্যবহারের ফলে দু’মাস বন্ধ ছিল আমাদের ড্রেজার। তবে আমাদের আগে কাউকে টাকা দেওয়া লাগত না। ড্রেজার বন্ধ হওয়ার পরে আবার চালু করার সময় স্থানীয় লোকজনদের টাকা দিয়ে পুনরায় ড্রেজার চালানোর অনুমতি পেয়েছি।
এবিষয়ে মনির বালির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিবার্তাকে জানান, পুলিশ অবৈধ ড্রেজার ধরে। সেজন্য জানুয়ারি মাসে আমার কাছে ওরা আসছিল চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে। ওরা থানায় টাকা পয়সা দেয় কী না দেয় তা আমি জানি না। তবে ওরা কেউই আমার কাছে কোন টাকা দেয় না। এবিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
৩নং দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল আলম বাবুল বিবার্তাকে জানান, আমি এবিষয়ে কিছু জানি না। আমাকে ফাঁসানের জন্য এমন গুজব রটানো হচ্ছে। আমি ড্রেজার বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করছি।
নাজিরপুর থানার এস আই নাজমুল হোসেন বিবার্তাকে বলেন, এবিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আর মনির বালি নামে কোন ব্যক্তিকে আমি চিনি না।
বালু উত্তোলনের বিষয়ে নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্জীব দাশ বিবার্তাকে জানান, আমি বিষয়টি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখব। ড্রেজার চলন্ত অবস্থায় আমাকে তাৎক্ষণিক খবর দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করব।
অবৈধভাবে বালু তোলার বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান (পিপিএম সেবা) বিবার্তাকে বলেন, পুলিশ প্রশাসন এবং চেয়ারম্যন যদি অর্থের বিনিময় এমন কাজ করে থাকে আমি তদন্ত করে বিষয়টি দেখব।
বিবার্তা/মশিউর/রোমেল/জবা
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]