টাঙ্গাইলে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (সর্বহারা) অর্ধশতাধিক চরমপন্থি অপরাধের অন্ধকার পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন। আগামী সোমবার(২২ মে) র‌্যাবের মাধ্যমে তারা আত্মসমর্পন করতে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানা গেছে। এতদিন গ্রেফতার ও মৃত্যুর আতঙ্ক থেকে রক্ষা পেতে নিজেদের আত্মগোপনে রেখেছিলেন এসব চরমপন্থি সদস্য। র‌্যাব-১২’র অধিনায়ক মো. মারুফ হোসেন পিপিএম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, এক সময় টাঙ্গাইলের আতঙ্কের নাম ছিল পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (সর্বহারা)। লুটতরাজ, জিম্মি, অপহরণ ও খুনসহ নানা অপরাধ ছিল তাদের নেশা ও পেশা। এ অঞ্চলকে বলা হতো ‘রক্তাক্ত জনপদ’। এ অঞ্চলের চরমপন্থিদের দাপটে রাত গভীর হলেই কলাপসিবল (কেঁচি গেট) আটকে আতঙ্কে থাকতেন খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নব্বইয়ের দশক থেকে এ পর্যন্ত চরমপন্থিদের হাতে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকেও প্রাণ দিতে হয়েছে। এহেন অচলাবস্থায় সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফেরাতে কাজ শুরু করে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাবের অভিযানে বিভিন্ন চরমপন্থি গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ অনেক সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়। ওই সময় পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দে নিজেদের হাতেও একাধিক সদস্য নিহত হন। এক পর্যায়ে চরমপন্থি দলের বাকি সদস্যরা গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। ফলে টাঙ্গাইলের উত্তর-পশ্চিম অংশের চরা লে ধীরে ধীরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে।

তারপরও সাধারণ মানুষের মাঝ থেকে আতঙ্ক শেষ হয়নি। গোপনে নানা অপকর্ম অব্যাহত রাখে চরমপন্থিরা। র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ক্রমাগত আভিযান পরিচালনা করতে থাকে। অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার চাপ সইতে না পেরে চরমপন্থি দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ সদস্যরা অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণের সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এরই অংশ হিসেবে টাঙ্গাইলের অর্ধশতাধিক চরমপন্থি সদস্য আগামী সোমবার (২২ মে) ৩৬টি অস্ত্রসহ র‌্যাব-১২(সিরাজগঞ্জ ক্যাম্প) এর নিকট আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন।

একটি অসমর্থিত সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল সদর ও কালিহাতী উপজেলার চরাঞ্চলের পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির (লাল পতাকা) ৭৪ জন সদস্য আত্মসমর্পন করছেন। এরমধ্যে পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির কয়েকজন সমর্থকও রয়েছে। আত্মসমর্পনকারীরা ৩৬ বিভিন্ন ধরণের অস্ত্রও জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করে একাধিক ব্যক্তি জানান, তারা অনেকেই প্রলোভনে পড়ে ২০০১ সাল থেকে সর্বহারা গ্রুপের সদস্য হয়েছেন। হুগড়া ইউনিয়নের জনৈক ব্যক্তির নেতৃত্বে তারা পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টিতে (লাল পতাকা) যোগ দেন। তাদের অনেকের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। কেউ কেউ কারাভোগ করেছেন। এখন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ দেওয়ায় তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে র‌্যাব-১২ (সিরাজগঞ্জ ক্যাম্প)’র অধিনায়ক মো. মারুফ হোসেন পিপিএম জানান, সোমবার (২২ মে) তারা আত্মসমর্পন করার কথা রয়েছে। আত্মসমর্পনের পর তাদেরকে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে। তাদেরকে নানাভাবে প্রশিক্ষণ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিবার্তা/ইমরুল/এনএস