ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে উপজেলার বাগান মালিকদের মুখে হাসি ফুটেছে।

এই উপজেলায় প্রায় সব ধরনের কৃষিরই ভালো ফলন হয়ে থাকে। তার মধ্যে লিচুর সুনাম ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশ জুড়ে। এখানকার লিচু সুস্বাদু হওয়ায় সারা দেশেই এর কদরও রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৫০ বছর আগে থেকে বিজয়নগর উপজেলায় লিচু উৎপন্ন শুরু হয়। উৎপন্ন ভালো হয় বলে এখানে বেশির ভাগ জমিতে চাষিরা লিচু চাষ করে আসছেন।

লিচু গাছে ফলন হওয়ার পর থেকে দুই দফায় বিক্রি হয়। এরই মধ্যে গাছে যখন ফুল আসে প্রথম দফায় কৃষকদের কাছ থেকে গাছ কেনেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। গাছের ফুল যখন মুকুলে পরিণত হয় দ্বিতীয় দফায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে গাছের লিচু বিক্রি করেন।

উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, আদমপুর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমুড়া, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, বক্তারমুড়া, রূপা, শান্তামুড়া, কামালপুর, কচুয়ামুড়া, গোয়ালনগর, ভিটিদাউপুর, পত্তন, এলাকায় লিচুর উৎপন্ন হয়। উপজেলার প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই একটি করে লিচুর গাছ আছে। যাদের বাড়িতেই একটু জায়গা আছে, তারা প্রত্যেক বাড়িতে লিচুর গাছ লাগান। এসব গাছে পাটনাই, বম্বে, চায়না থ্রি, চায়না ২, এলাচি, ৫ধরনের জাতীয় লিচুর উৎপন্ন হয়।

উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে পরিচিত আউলিয়া বাজার। এছাড়াও সিংগারবিল, হরষপুর, চম্পকনগর এসব বাজারেও বিক্রি হয় অধিকাংশ লিচু। এ বাজারগুলো থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, ফেনী ও রাজধানীর ব্যবসায়ীরা পায়কারী দরে লিচু কিনে নিয়ে যায়।

সরেজমিনে মঙ্গলবার উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর, সেজামুড়া ও কামালমুড়ার বিভিন্ন বাগানে ঘুরে দেখা যায়, বাগান মালিকরা বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এসময় কথা হলে মুকুন্দপুর কামালমুড়া গ্রামের শাহাবুদ্দীন বলেন, আমার ৭০টি লিচু গাছ রয়েছে। এবছর আমার গাছে কোনো প্রাকৃতিক কারণে লিচু কম এসেছে। এমনিতেই অনেক বছর পর পর গাছে কম বেশি হয়ে থাকে। তিনি আরও জানান, লিচু গাছে এবার যে ফলন হয়েছে সেগুলাতে অনেক ভালো ফলন হয়েছে। এবছর তিনি ৫ লাখ টাকার লিটু বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ বা সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে শাহাবুদ্দীন আক্ষেপ করে বলেন, আমরা ১৫-২০ বছর ধরে লিচু বাগান করছি; কিন্তু কোনো দিন কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তা আমাদের বাগানে এসে খবর নেননি।

ভিটিদাউদপুর গ্রামের বাগান মালিক আবুল কাসেম মোল্লা বলেন, বাগানে লিচু এসেছে পর্যাপ্ত; কিন্তু সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এবং তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় অসময়ে লাল হয়ে যাচ্ছে আর ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু কৃষি অফিসাররা কোনো যোগাযোগ করেন না বলে তিনিও অভিযোগ করেন।

সেজামুড়া গ্রামের বাগান মালিক কাউছার ভূইয়া বলেন, আমার ৪টি বাগানে ১৭০টি গাছ আছে। গাছে এবছর ভালো লিচুর ফলন হয়েছে। কিন্তু গত দুইদিন ধরে গরমের তাপে হঠাৎ লিচু লাল হয়ে যাচ্ছে। তবে তিনি আশাবাদী এবছর ১২ লাখ টাকা লিচু বিক্রি করবেন।

সবচেয়ে বেশি পাহাড়পুর ইউনিয়নের লিচু বাগান রয়েছে। সেখানকার দায়িত্বরত কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলমকে তাপমাত্রার কারণে লিচু লাল হয়ে যাওয়া ও কৃষকদের বাগানে তদারকি করেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লিচু বেশি তাপমাত্রার কারণে লাল হয়ে যাচ্ছে। তবে বৃষ্টি হলে ঠিক হয়ে যাবে। কৃষকদের কাছাকাছি কম যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, পাহাড়পুর ইউনিয়নে ৩জন কর্মকর্তা থাকার কথা। সেখানে আমি একা কাজ করছি। যারা যোগাযোগ করেন শুধু তাদেরই বাগানে যান বলে তিনি জানান।

বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাব্বির আহমেদ বলেন, উপজেলায় এবছর ৪৩০ হেক্টর জায়গায় লিচুর আবাদ হয়েছে। লিচু বাগান আছে ৯০০টি।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার লিচু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলার সব বাগানে কর্মকর্তাদের তদারকি করেন না এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে এই কর্মকর্তা বলেন, উপজেলায় আমাদের ৩০ কর্মকর্তার প্রয়োজন। সে জায়গায় ১৮জন দিয়ে কাজ চলছে। জনবল কম হওয়ার ফলে সব বাগানে তদারকি করা যাচ্ছে না বলে তিনি স্বীকার করেছেন।

বিবার্তা/নিয়ামুল/কেআর