টাঙ্গাইলে হেলে পরার ৫ বছরেও পুণঃনির্মাণ হয়নি সেতু
প্রকাশ : ১০ মে ২০২৩, ১৪:০৩
টাঙ্গাইলে হেলে পরার ৫ বছরেও পুণঃনির্মাণ হয়নি সেতু
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় উদ্বোধনের আগেই হেলে পড়া সেতুটি ৫ বছরেও পুণঃনির্মাণ হয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। সেতু দিয়ে চলাচল করতে না পারায় পার্শ্ববর্তী ১০ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুন।


উদ্বোধনের পূর্বেই হেলে পড়া সেতুটি উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের নিরাইল গ্রামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিজ খরচে পুনরায় নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় প্রকল্প পরিচালক। কিন্তু সেই নির্দেশনা আলোর মুখ দেখেনি গত ৫ বছরেও।
অভিযোগ রয়েছে, বাসাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) যোগসাজসে পার পেয়ে গেছেন ওই ঠিকাদার।



সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি-ফুলবাড়ি সড়কের নিরাইল এলাকায় অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে উদ্বোধনের আগে হেলে পড়া সেই সেতুটি। দেখে মনে হয় এক অভিশপ্ত নগরির ধ্বংসাবশেষ। এলাকাবাসীর অভিযোগ বার বার জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সেতুটির বিষয়ে কোন প্রকার সুরাহা হয়নি।


সূত্রমতে, গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ১২৮টি সেতু নির্মাণ করে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়। বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের ফুলকি-ফুলবাড়ি সড়কের নিরাইল এলাকায় ৬০ ফুট দীর্ঘ সেতু নির্মানের কাজ পায় মেসার্স আব্দুল্লাহ এন্টারপাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।


নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় উদ্বোধনের পূর্বেই সেতুটি হেলে পড়ে। এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রচার হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিন তদন্ত শেষে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিজ খরচে সেতুটি পুণরায় নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।


এরপর পরই ঠিকারদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটি পুণরায় নির্মাণের লক্ষ্যে সেতুটির বিভিন্ন অংশ ভাঙ্গা শুরু করে। এর অংশ হিসাবে সেতুটির উপরের অংশ ভেঙ্গে রড বের করে নিয়ে যায়। কিন্তু এরপর ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটি পুনরায় নির্মাণ না করে বিল তুলে নেয়। ঐ সময় অভিযোগ ওঠে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন অর্থের বিনিময়ে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রতিবেদন দেন। এতে করে ওই প্রতিষ্ঠান পুনরায় কাজ শেষ না করেই সেতুটি ভেঙ্গে ব্যবহৃত রড ও কংক্রিট নিয়ে যায়। এতে করে সড়ক ব্যবহারকারীদের দূর্ভোগ চরম আকার ধারন করে।


এদিকে দীর্ঘ দিনেও ফুলকি-ফুলবাড়ি সড়কের নিরাইল এলাকায় সেতু নির্মাণ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী বালিয়া, ফুলকি, ফুলবাড়ি, বাঘিল, নিরাইলসহ অন্তত ১০ গ্রামের মানুষের।
১০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ।
স্থানীয় রবি মিয়া বলেন, হেলে পড়া সেতু দিয়ে বড় গাড়ি চলাচল না করতে পারলেও সাধারন মানুষ পাড় হতে পারতো। কিন্তু সেতুটি ভেঙ্গে ফেলায় এখন আমাদের দূর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। আমাদের এলাকা কৃষি প্রধান এলাকা। সেতুটি না থাকায় আমরা কৃষি পন্যেরও ন্যায্য মূল্য পাই না।


স্কুলছাত্র মো. রামিম বলে, বর্ষা মৌসুমে আমার দূর্ভোগের কোন সীমা থাকে না। বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় অনেক সময় আমাদের বই খাতা ভিজে যায়।


ফুলকি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সামছুল আলম (বিজু) বলেন, যখন ওই সেতুটি নির্মাণ হয়, তখন আমি চেয়ারম্যান ছিলাম না। তবে আমি চাই আমার এলাকার জনগনের সুবিধার জন্য ওই স্থানে একটি সেতু পুনরায় নির্মাণ হোক। এ জন্য আমি খুব শীঘ্রই জেলা প্রাশাসক বরাবর আবেদন করব।


এ ব্যাপারে জানতে বাসাইল উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) মো. সাখাওয়াত হোসেন ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্ষতি হবে জেনে সেতুটি পুনরায় নির্মাণ করে দেয়নি। এ ছাড়া ওই স্থানে প্রতিষ্ঠানই সেতু নির্মানের কোন প্রকার প্রকল্প পুনরায় হাতে নেয়নি বলেও তিনি জানান।


টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার জানান, দুর্নীতির বিষয়ে যাচাই বাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। জনগনের সুবিধার জন্য সেতুটি পুণরায় নির্মাণ করার জন্য খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


বিবার্তা/ইমরুল/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com