দুই কর্মকর্তার দ্বন্দ্বের জেরে আমনুরা খাদ্য গুদামে হট্টগোল
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:৩২
দুই কর্মকর্তার দ্বন্দ্বের জেরে আমনুরা খাদ্য গুদামে হট্টগোল
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বদলি আদেশ পাওয়া দুই কর্মকর্তার দ্বন্দ্বের জেরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা খাদ্য গুদামে ব্যাপক হট্টগোল সৃষ্টি হয়েছে।


শনিবার (১৫ এপ্রিল) বেলা প্রায় ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে পৌঁছলে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানা পুলিশ ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পর্যন্ত গড়ায়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আমরা উভয়পক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখছি। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে।


আমনুরা খাদ্য গুদামের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সদ্য বদলি আদেশ পাওয়া) খন্দকার সাব্বির আহম্মেদ জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ভিজিএফের খাদ্য শস্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত চাল গোডাউন থেকে ট্রাকে লোডিংয়ের কাজ চলছিলো। এসময় রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের অধীন রাজশাহী মহানগর ওএমএস তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে সংযুক্তি থাকা গোমস্তাপুর উপজেলার দেওপুরা এলএসডির খাদ্য পরিদর্শক ও বর্তমানে আমনুরা খাদ্য গুদামে বদলি হয়ে আসা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকিলা নাসরিন এসে আমার কাজে বাধা প্রদান ও শ্রমিকদের সাথে খারাপ করতে থাকেন। তিনি মারমুখি আচরণ শুরু করেন। এক পর্যায় তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা পুলিশকে খবর দেন।


খন্দকার সাব্বির আহম্মেদ বলেন, বদলি হয়ে আসা খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকিলা নাসরিন আমনুরা খাদ্যগুদামে যোগদান করলেও তিনি এখনো দায়িত্বভার গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, সাকিলা নাসরিন আমার কাছে ৭ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেছেন। এই টাকা তাকে না দিলে তিনি দায়িত্ব বুঝে নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। সাকিলা তাকে বলেছেন আমাকে বদলি হয়ে আসতে ১২ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। তাই আপনি আমাকে ৭ লাখ টাকা দেবেন। অন্যথায় গুদামে চালের মজুদ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে তারতম্যে ব্যাপক ফারাক রয়েছে বলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করবেন। এছাড়া নানা ভয়ভীতি দেখিয়েছেন।


সাব্বির আহম্মেদ বলেন, আমি কোনো অনিয়মের সাথে জড়িত না। আমি কেন তাকে ৭ লাখ টাকা দেব। আমি দায়িত্ব হস্তান্তরে সব সময় প্রস্তত।


অভিযোগ উঠেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা খাদ্যগুদামে দেড় মাস পূর্বে বদলি হয়ে আসলেও ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছেন না খাদ্য পরিদর্শক সাকিলা নাসরিন।


এদিকে অফিস আদেশ ছাড়াই সাকিলা নাসরিন খাদ্য গুদামের স্টাফ কোয়ার্টার দখলে নিয়ে বসবাস শুরু করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও কোয়ার্টারটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেছে গণপূর্ত বিভাগ রাজশাহী। একপ্রকার ঝুঁকি নিয়ে এবং জেদাজেদির মধ্যেই কোয়ার্টারে উঠেছেন সাকিলা।


সাকিলার দাবি, গুদামে নিম্নমানের চাল ক্রয়, ওজনে কম এবং বস্তা পরিবর্তন করে কোটি টাকা লোপাট করেছেন বর্তমান খাদ্য পরিদর্শক খন্দকার সাব্বির আহম্মেদ। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাব্বির আহম্মেদ। যদিও অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। কোয়ার্টার বরাদ্দের ব্যাপারে সাকিলা বলেন, আমি নিয়ম অনুসারে কোয়ার্টার বরাদ্দ পেয়েছি। এছাড়া কোয়ার্টারে মিস্ত্রি দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। সেখানে এখন কোনো ঝুঁকি নেই। তিনি আরো বলেন, সাব্বির আহম্মেদ বস্তা পরিবর্তন করছিলেন। এসময় বিষয়টি আমার নজরে আসলে প্রতিবাদ করি। এসময় তিনি মেইন গেটে তালা দিয়ে আমাকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করছিলেন। পরে নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসনকে খবর দিয়েছি।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আমনুরা খাদ্যগুদামের বর্তমান কর্মকর্তা খন্দকার সাব্বির আহম্মেদকে সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। আর রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের অধীন রাজশাহী মহানগর ওএমএস তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে সংযুক্তি থাকা গোমস্তাপুর উপজেলার দেওপুরা এলএসডির খাদ্য পরিদর্শক সাকিলা নাসরিনকে আমনুরা এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। গত ২ মার্চ একই আদেশে তাদের বদলি করা হয়। তবে এই দুই কর্মকর্তার কেউই এখন পর্যন্ত বদলিকৃত নতুন কর্মস্থলে গিয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করেননি।


এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ রাজি হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এর আগে তারা পরস্পর পরস্পরের রিুদ্ধে অভিযোগ করেছেন এবং বিষয়গুলো তদন্তাধীন রয়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
বিবার্তা/মোস্তাফিজুর/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com