বোরো রোপণে ব্যস্ত হিলির কৃষকরা, খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তা
প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:০৪
বোরো রোপণে ব্যস্ত হিলির কৃষকরা, খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তা
হিলি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী হিলি উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। বর্তমান সময়ে বিদ্যুৎ, ডিজেল, শ্রমিকসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার বোরো চাষে অতিরিক্ত খরচে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের কপালে।


শীত-কুয়াশাকে উপক্ষো করে জমি তৈরি ও বোরো ধানের চারা রোপণ শুরু করেছেন দিনাজপুরের চাষিরা। বোরো চারা রোপণে হিমসিম খাওয়া পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করছে নারী শ্রমিকরাও।


আবহাওয়া ভালো থাকলে বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পেলে অতিরিক্ত খরচ পুষিয়ে নিতে পারবে বলে আশা করছেন কৃষকরা ।


দিনাজপুর জেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমি।


মঙ্গলবার হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা । বিঘাপ্রতি ২০ কেজি ডেপ, ১২ কেজি পটাস, ৫ কেজি জিপসাম এবং ৫ থেকে ৭ ভ্যান গোবর সার মিশিয়ে জমি তৈরি করছেন তারা। আবার অনেকেই জমিতে চারা রোপণ করছেন। ইতোমধ্যে এ উপজেলায় ৫০-৬০ শতাংশ জমিতে চারা রোপণ শেষ হয়েছে।


উপজেলার সাতনী গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ মিয়া বলেন, আমি প্রায় ১০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করছি। প্রায় জমিতে চারা রোপণ হয়ে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ জমিতে চারা রোপণ শেষ হবে। গতবার ফসলের দাম ভালো পেয়েছি। আশা করছি এবারও বোরো ধানের ফলন ভালো হবে। দামটাও ভালো পাবো।


কোকতাড়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, হারা (আমরা) ছোট-খাটো কৃষক মানুষ, হামার (আমার) বেশি আবাদি জমি নাই, মিচ্চে এ্যানা (অল্প) জায়গা আছে, ওটায় আবাদ করি। মানুষোক (মানুষ) নিয়ে কাম করে নেউ না, নিজেই সব করি। বছরে ইরি আর আমন ধান লাগাউ (লাগাই), তাতে আল্লাহ দিলে ভালোই আবাদ হয়, ভালোই চলে। এবারও লাগাছি হারা (আমরা), দেখু কি হয়?


উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের বর্গাচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, হারা (আমরা) গরীব মানুষ নিজের আবাদি জমি নাই বললেই চলে। অন্যর জমি চানা (বর্গা) নেই ইরি আবাদের জন্য, এক বিঘা জমি (৩৩ শতক) দশ হাজার টাকা দিয়ে নিতে হয়েছে। আবার জমি সেচের বাড়তি খরচ, সারের দাম, শ্রমিকদের মজুরি বেশি, সবকিছু মিলে কি হবে আল্লাহ ভালো জানে! তবে আশা করছি আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং ধানের দাম ভালো পেলে খরচ পুষিয়ে নিতে পারবো ইনশাআল্লাহ!


উপজেলার কোকতাড়া গ্রামের শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে একটা দল তৈরি করেছি। দীর্ঘদিন থেকে বোরো ও আমন ধানের চারা রোপণ করে থাকি। এবার বোরো ধানের চারা রোপণ প্রতি বিঘা ৯০০-১০০০ টাকা করে নিচ্ছি। প্রতিদিন ৪ থকে ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করতেছি।


উপজেলার আরেক শ্রমিক শাপলা কুজুর বলেন, আমরা প্রতিদিন হাজিরা হিসেবে বোরো রোপণ করতেছি। প্রতিদিন হাজিরা হিসেবে ৪৫০ টাকা পাচ্ছি।


হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১০৫ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে চারা রোপণ শুরু হয়েছে। আশা করছি ৮ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হবে। ইতিমধ্যে উপজেলায় ৫০-৬০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করা শেষ হয়েছে।


সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলার প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করেছি। বোরো চাষে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সবধরনের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও মাঠ কর্মীরা। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে আশা করছি এবারও কাঙ্খিত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা। এবারও ধানের দাম ভালো পেলে অতিরিক্ত খরচ পুষিয়ে নিতে পারবে বলে আশা করছি আমরা।


বিবার্তা/রব্বানী/মাসুম/জেএইচ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com