গত বছর পানিতে ডুবে ১৬৭১ শিশুর মৃত্যু
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:৩৮
গত বছর পানিতে ডুবে ১৬৭১ শিশুর মৃত্যু
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে পানিতে ডুবে ১ হাজার ৬৭১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৩৬ শতাংশ ছেলে ও ৩৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ মেয়ে। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে শূন্য (০) থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু। এর সংখ্যা ৯৬০ জন। যা মোট মৃতের ৫৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।


সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে টাঙ্গাইলের শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘২০২২ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিবেদন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।


সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাখেন শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুরোধ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মুবাশ্বির খান।


সংবাদ সম্মেলনে মুবাশ্বির খান বলেন, সবচেয়ে বেশি শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চট্টগ্রাম জেলায় ১৩২, দ্বিতীয়তে নেত্রকোণা ৬৭, কক্সবাজারে ৬৫, চাঁদপুরে ৫৫ ও সুনামগঞ্জ রয়েছে ৫৪ জন। এছাড়া এসব মৃত্যুর জন্য মৃগী রোগী, আঘাতজনিত মৃত্যু বা দুর্ঘটনা, সাঁতার না জানা ও অসচেতনতাসহ চারটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।


তিনি বলেন, মোট ঘটনার ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ ঘটনার জন্য দায়ী অসচেতনতা। এমনকি দুই-একটি ঘটনা দেখা গেছে, বালতি কিংবা পাতিলের পানিতে ডুবেও শিশুর মৃত্যু ঘটেছে।


মুবাশ্বির খান বলেন, সাঁতার না জানার কারণে ৫ বছরের ওপরে ৩১ দশমিক ০৭ শতাংশ শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি শিশু মারা গেছে সেপ্টেম্বর মাসে ২২৮ জন, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে জুলাই মাসে ২০০ জন এবং সবচেয়ে কম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৫ জন।


তিনি বলেন, শীতকালের চেয়ে বর্ষা বা তুলনামূলক গরমের সময় পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। শহর ও গ্রামের তুলনায় গ্রামের শিশুদের নদী, পুকুর বা ডোবায় গোসল করতে গিয়ে বেশি মারা গেছে। শহরের মারা যাওয়া বেশির ভাগ শিশুই পাঁচ বছরের ওপরের এবং সিংহভাগ সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মারা যায়।


সংবাদ সম্মেলনে শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মুঈদ হাসান তড়িৎ বলেন, পত্রিকা ও অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংবাদ বিশ্লেষণ করে আমাদের এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। অনেক ঘটনাই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়নি, যেগুলো হিসাব করলে মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুরোধে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।


অন্যদিকে, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে সংবাদ সম্মেলনে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে— শিশুর যত্নে দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের সবসময় মা-বাবা বা অন্য কারও দায়িত্বে রাখা, পুকুর বা ডোবার চারপাশে বেড়া দেওয়া, দলবেঁধে বা একাকী শিশুকে জলাশয়ে গোসল করতে না দেওয়া, বালতি বা পানি পূর্ণ পাত্র সব সময় ঢেকে রাখা, পাঁচ বছর বয়স হলে শিশুকে সাঁতার শেখানো, সাঁতার শেখার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা।


নদীপথে যাত্রার সময় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা অবলম্বন করা, ঝুঁকিপূর্ণ নৌযাত্রা পরিহার করা, অভিভাবকদের সচেতন করা, পানিতে ডুবে যাওয়ার সময় ও পরে ভুক্তভোগী ও প্রতক্ষ্যদর্শীর করণীয় সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেওয়া, প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও তা ব্যবহার করার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, দেশব্যাপী গণসচেতনা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, শহরের শিশুদের বাধ্যতামূলক সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করা।


এর পাশাপাশি নিয়মিত তৃণমূল পর্যায়ে সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, যথাযথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করা, এ সম্পর্কিত কাজে আগ্রহী সমাজকর্মী ও সংগঠন সমূহকে যথাযথ সহযোগিতা করা।


সংবাদ সম্মেলনে শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধ প্রকল্পের সদস্য মির্জা রিয়ান ও আতিয়া আদিবা জারাসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/এসএফ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com