ইছামতি প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী মোতায়নের দাবি আন্দোলনকারীদের
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:৫৩
ইছামতি প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী মোতায়নের দাবি আন্দোলনকারীদের
পাবনা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আইনী জটিলতা এবং পাউবো কর্তৃপক্ষসহ ঠিকাদারের উদাসীনতায় থেমে গেছে ইছামতি নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ খনন কাজ। ফলে এ খাতে সরকারি বরাদ্দের টাকা ফেরত যাবে কী না - এই নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পাবনার সর্বমহলে। বর্তমান নদী বান্ধব সরকার পাবনা ইছামতি নদীর সীমানা চিহ্নিত করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং খনন কাজের জন্য ১০ কেটি টাকা বরাদ্দ দিলে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকার নিয়োগ দেয় পাউবো কর্তৃপক্ষ। আংশীক কাজ করার পর রহস্যজনক কারণে থেমে যায় নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদাভিযান। সেই সাথে বন্ধ হয়ে যায় নদী খননের সকল কার্যক্রম। পাবনা জেলা প্রশাসনের নদী রক্ষা কমিটির মাসিক সভায় নদীর যাবতীয় কার্যক্রম থেমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও পউবো কর্তৃপক্ষ আইনী জটিলতা ও ঠিকাদারে উদাসীনতার কথা বার বার উল্লেখ করেন।


অন্যদিকে সরকারি টাকা ব্যয় করে একাধিকবার নদীর সীমানা চিহ্নিত করলেও নদী পাড়ের অনেক বসতীদের মধ্যেও রয়েছে আপিত্ত। পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে সিএস রেকর্ড ম্যাপ অনুযায়ী নদীর সীমানা চিহ্নিত করে সীমানা পিলার স্থাপন করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ খনন কাজ করা হবে। পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বলছে নদীর দুই পাড়ের ১০-১৫ জন বসতীর নিয়ে আদালতে দায়ের করা ৭৫টি মামলা চলমান থাকায় এবং ঠিকাদারের উদাসীনতায় ইছামতির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদাভিযান ও খনন কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে মামলা নিস্পত্তি হলে কাজ শুরু করা হবে বলে পাউবো কর্তৃপক্ষ জানান।


আদালতে দায়ের করা মামলার বাদীগণ যেসব দাগগুলো মালিকানা দাবী করছে সেই দাগগুলো বাদে নদীর কার্যক্রম পরিচালনার ব্যাপারে বাধা আছে কী না এ প্রশ্নের উত্তরে পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান সুজন বলেন, গত ২০২১ সালের মার্চ মাসে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে নদীর দুই পাড়ে ৫কিঃমিঃ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং খনন কাজ সম্পন্ন করার জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কার্যাদেশে প্রক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছে, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ২ কোটি টাকা এবং খনন কাজের জন্য ৫ কোটি টাকা। কার্যাদেশ প্রদানের পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নদীর ৫৮ ভাগ উচ্ছেদ এবং ৩০ ভাগ খনন কাজ চলমান অবস্থায় ৩০ জুন, ২০২২ বন্ধ হয়ে যায় সকল কার্যক্রম। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বর্তমান জ্বালানি ও লেবার খরচসহ দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে পূর্বের তৈরি প্রক্কলিত মূল্যের ব্যবধান হওয়ায় সিডিউল অনুযায়ী কাজ করছেনা ঠিকাদার। প্রকৌশলী বলেন, কাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব হওয়ায় সময়সীমা অতিক্রম করার পূর্বে নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করার জন্য ৪টি পত্রপ্রেরণ করা হলেও সারা দেয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তা হলে সরকারে নদী খননের বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত যাবে এমন প্রশ্নের সদুত্তোর দেননি পাউবো কর্তৃপক্ষ। এদিকে নদীর উদ্ধারকৃত জায়গায় নতুন করে ঘর-বাড়ি তৈরি ও আগাছার ব্যাপক বিস্তারে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়রা।


অন্যদিকে নদী উদ্ধার আন্দোলকারীরা সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইছামতি নদী প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবী করছেন। ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, কার্যাদেশ অনুযায়ী নদীর কাজ বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য পাউবো’র কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও রহস্যজনক ভূমিকা পাবনাবসীকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তিনি বলেন, পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী ইছামতি নদী সাবেক অবস্থায় ফিরে আসুক সেই লক্ষে আমরা আন্দোলন করছি। সাবেক পাবনা জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো ও কবীর মাহমুদ অত্যন্ত আন্তরিকতার সহিত আমাদের আন্দোলনে সহযোগীতা করেছেন। তিনি নদী খনন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দাবী করে বলেন, নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং খনন কাজের জন্য সরকার ১০ কোটি টাকার যে বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়নি। তিনি কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইছামতি নদীর সকল কার্যক্রম পরিচালনার দাবী করেন। এদিকে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইছামতি নদীসহ জেলার সকল নদীর অবৈধ দখল, দূষণমুক্ত করে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নদী দখল-দুষণের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা বাস্তবায়নের জন্য পাবনা জেলাবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।


বিবার্তা/পলাশ/জেএইচ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com