সড়ক সংস্কারের ধূলো-বালিতে ছেয়ে গেছে নোয়াখালীর চৌরাস্তা-সোনাপুর সড়ক। বায়ু দূষণে প্রতিনিয়তই বাড়ছে জনভোগান্তি, সর্দি-কাশিসহ নানা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অপরিকল্পিত ও ধীরগতির উন্নয়ন কাজ, যত্রতত্র আবর্জনা পোড়ানোর ধোঁয়াই এমন বায়ু দূষণের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে দূষণে বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচ এর তালিকায়ও স্থান পেয়েছে নোয়াখালী।
সরেজমিনে দেখা যায়, দিনের বেলায় এ সড়কটি যেন ধুলোয় ধূূসর অন্ধকার। গত ৬ বছর যাবত এমন দূর্ভোগ আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রী সাধারণ, পথচারী ও আশপাশের বাসিন্দাদের।
প্রসঙ্গত, এ সড়ক ১৩ কিলোমিটার ফোরলেন উন্নিতকরণের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ২০২১ এর জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বেশ কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। শুধু এ সড়কই নয়, জেলার বেগমগঞ্জ-কুমিল্লা, চৌমুহনী-ফেনী ও চৌমুহনী-লক্ষ্মীপুর সড়কেও চলছে উন্নয়ন কাজ। ফলে খোড়াখুঁড়ি, বহুতল ভবন ভাঙন, ইট-বালি ও পাথরের স্তুপ থেকে তৈরি হওয়া বালিতে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ।
এ সড়ক শুধু উন্নয়ন কাজে নয়, জনবহুল এলাকায় আবর্জনা পোড়ানোর কারণেও বাড়ছে দুষণ। চৌমুহনী-লক্ষ্মীপুর ও চৌমুহনী- সোনাইমুড়ি সড়ক ঘেঁষে পোড়ানো হচ্ছে আবর্জনা। একই দৃশ্য সোনাইমুড়ি-চাটখিল সড়ক ঘেঁষেও। ময়লার আগুনে পোড়া যাচ্ছে গাছও। এমন দৃশ্য নোয়াখালীর প্রত্যেক পৌর শহরে। এতে জনস্বাস্থ্য যেমন হুমকিতে রয়েছে, তেমনি বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ-প্রতিবেশও।
সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্ট্যামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ‘৬৪ জেলার বায়ু দুষণ সমীক্ষা ২০২১ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ওই প্রতিবেদনে দূষণ তালিকার শীর্ষে গাজীপুর। একই তালিকায় ৫ম স্থানে নোয়াখালী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বাস্তুকণার দৈনিক আদর্শমান ৬৫ মাইক্রোগ্রাম থাকার কথা থাকলেও নোয়াখালীর বায়ুতে প্রতি ঘনমিটারে রয়েছে ২০৪ দশমিক শূন্য ১ মাইক্রোগ্রাম। যা আদর্শ মানের তিনগুণেরও বেশি। এমন বায়ু দূষণ ফুসফুসের জটিলতাসহ মানুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। একই সঙ্গে পরাগায়ন সমস্যার কারণে ব্যাপক ফলন বিপর্যয়সহ পরিবেশ-প্রতিবেশও হুমকিতে পড়বে বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা।
নোয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম বলেন,এসড়কে ধুলাবালির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। বাইরে বের হলেই পোশাক ধুলাবালিতে ময়লা হয়ে পরিধানের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত চোখে মুখে ধুলোবালি ঢুকছে। এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, রাস্তায় প্রতিদিন যদি পানি ছিটানো হত, তাহলে কিছুটা ধুলোবালি কমে যেত। এদিকে, স্থানীয় বিশিষ্টজনরা নির্দিষ্ট সময়ে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজ শেষ করা এবং আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বায়ু দূষণে যুগপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
নোয়াখালী ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও সৈয়দ মহি উদ্দিন মো.আবদুল আজিম বলেন, ধুলার সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ ও জীবাণু মিশে গিয়ে খাদ্যদ্রব্যে কিংবা নাক-মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অপরদিকে, ধুলোবালি চোখে প্রবেশ করেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
নোয়াখালী সড়কের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাকিরুল ইসলাম বলেন, অতিদ্রুত চারলেন সড়কের কাজ শেষ হবে। পাথর সংকটের কারণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এ মাসের মধ্যে দুই লেনের কাজ শেষ হবে। বাকির ২ লেনের কাজও অতিদ্রুত শেষ করা হবে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, দূষণের তীব্রতা সাময়িক উল্লেখ করে দ্রুত উন্নয়ন কাজ শেষ করাসহ দুষণ রোধে নানা পদক্ষেপের কথা জানান তিনি।
বিবার্তা/সুমন/জামাল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]