সাফ অনুর্ধ্ব ১৯: মাঠ কাঁপাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়েরা
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:২৭
সাফ অনুর্ধ্ব ১৯: মাঠ কাঁপাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়েরা
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ। আর এই কাঙ্ক্ষিত গোলটি আসে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার রাঙাটুঙ্গি ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমির খেলোয়াড় সাগরিকার পা থেকে। এর আগেও গত শুক্রবার অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে সাগরিকা করেছেন জোড়া গোল। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে জেতানোর বড় ভূমিকা রেখেছিল রাণীশংকৈলের এই নারী খেলোয়াড়।


এক অজপাড়াগাঁয়ে সাগরিকার বেড়ে ওঠা। বাবা লিটন আলী সামান্য একটি চায়ের দোকান করে সংসারের ভার টানেন। বড় ভাই সাগর আলী অর্থ সংকটে পড়াশোনা করতে পারেনি। সে এখন স্থানীয় এক ইটভাটায় দিনমজুরের কাজ করে।


নেপালের বিপক্ষে মাঠে যে দুরন্ত সাগরিকাকে দেখা গেছে, তাকে হয়ত দেশের ফুটবলে নাও পাওয়া যেত। তার মা-বাবা একেবারেই নাকি রাজি ছিলেন না মেয়ের ফুটবল খেলার ব্যাপারে। মেয়ে জার্সি ও হাফ প্যান্ট পরে ফুটবল খেলবে এটা ভালো চোখে দেখতো না গ্রামবাসী। কিন্তু কন্যার জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে বাবাকে। বাবাকে ভুল প্রমাণ করতে পেরে এবার সাগরিকা খুশি। যেন বলতে চেয়েছেন, বাবা, দেখো আমি পেরেছি।


রাণীশংকৈল রাঙাটুঙ্গি ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক তাজুল ইসলামের হাতে গড়া নারী খেলোয়াড় সাগরিকা। সাগরিকা মাঠে যত সাবলীল, ক্যামেরার সামনে ততটাই জড়সড়!


ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে একঝাঁক মেয়ে এসে ফুটবল রাঙাচ্ছেন জাতীয় দলে। সাগরিকা তাদেরই একজন। উঠে এসেছেন রাণীশংকৈল রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড ফুটবল একাডেমির পরিচালক তাজুল ইসলামের হাত ধরে। তিনি না থাকলে হয়ত সাগরিকার মতো প্রতিভাবান স্ট্রাইকার পেতো না বাংলাদেশের ফুটবল।


সাগরিকা বলেন, আমার মা–বাবা চাইতেন না আমি ফুটবল খেলি। তবে আমার ফুটবলার হওয়ার পেছনে খালার অবদান সবচেয়ে বেশি। তিনি মাকে বলেছিলেন, মেয়ে আমাকে দাও, সে ফুটবল খেলুক। বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার পর মা–বাবার ভুল ভেঙেছে। আমি এতেই খুশি। গ্রামের যারা সমালোচনা করেছেন তারাই এখন সাগরিকাকে নিয়ে গর্ব করে।


সাগরিকার বাবা লিটন আলী বলেন, মেয়েকে বলেছিলাম তুমি জীবনেও কিছু করতে পারবে না। খেলতে দিতাম না। এখন মনে হয় আমার সিদ্ধান্ত ভুল আর মেয়েই সঠিক।


রাঙ্গাটুঙ্গী একাডেমির ফুটবলার সাগরিকা বিকেএসপিতে সুযোগ পেয়ে ও যাননি। ২০২২ সালে হওয়া ঘরোয়া নারী ফুটবল লিগের সর্বশেষ আসরে জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের নজর কাড়েন। ওই বছর মেয়েদের লিগে খেলেন এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হয়ে। প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করে নজরে পড়েন কোচের। সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকার, সিরাত জাহান স্বপ্না, শামসুন্নাহার জুনিয়র, শাহেদা আক্তার রিপাদের মতো অভিজ্ঞদের সঙ্গে লড়াই করে তাদের সারিতে নাম লেখান সাগরিকা।


গত বছর কমলাপুর স্টেডিয়ামে হওয়া অনূর্ধ্ব-১৭ নারী সাফে খেলেছিলো রাশিয়া। যে টুর্নামেন্টে গোল পেতে রীতিমতো লড়াই করতে হয় বাংলাদেশকে। ওই টুর্নামেন্টে ভুটানের বিপক্ষে ১ গোল করেন সাগরিকা। নেপালের সঙ্গে হারতে বসা ম্যাচে বাংলাদেশ ১ পয়েন্ট পায় সাগরিকার গোলেই। এরপর সাগরিকা খেলেন এএফসির দুটি টুর্নামেন্টে সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামে। সেখানেও গোল পেয়েছেন ভিয়েতনামে। ফিলিপাইনের কাছে ৩-১ গোলে হারের ম্যাচে একমাত্র গোলটি সাগরিকার।


নেপালের বিপক্ষে সাগরিকার খেলা দেখে উচ্ছ্বসিত তাজুল ইসলাম, এই মেয়েদের নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম তাতে আমি সফল, সার্থক। তাজুলরা আছেন বলেই হয়ত চা-দোকানির সোনার মেয়েরা অবদান রাখে দেশের ফুটবলে।


বিবার্তা/মিলন/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com