সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন তামিম ইকবাল। বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) চট্টগ্রামের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন তিনি।
নানামুখী আলোচনার পর ২০২২ সালের ১৬ জুলাই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। ঠিক এক বছরের মাথায় ওয়ানডে ফরম্যাটসহ পুরো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই অবসরের ঘোষণা দিলেন তিনি।
অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে তামিম বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের ম্যাচটি ছিল আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেকদিন ধরেই আমি এটা নিয়ে ভাবছি। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।’
অবসরের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম এই ক্রিকেটার বলেছেন, ‘আমি সব সময় বলেছি ক্রিকেট খেলেই বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে গিয়ে অনেক পরিস্থিতির মুখে পড়েছি, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার ছোট চাচার হাত ধরেই ক্রিকেটে এসেছি। যারা আমাকে এই পর্যায়ে আনতে ভূমকিা রেখেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, যাদের সাথে খেলেছি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। অনূর্ধ্ব-১৩, ১৫, ১৭, ১৯, প্রিমিয়ার লিগ কিংবা জাতীয় দল- সব সতীর্থকে ধন্যবাদ জানাই। জাতীয় দলের সতীর্থদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দীর্ঘ সময় দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেয়ার জন্য ক্রিকেট বোর্ডকেও ধন্যবাদ জানাই।
তামিম ইকবাল বলেন, আমার আজ সত্যিকার অর্থে বেশি কিছু বলার নেই। একটি কথা আমি অবশ্যই বলবো, আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়েই চেষ্টা করেছি। হয়তো আমি যথেষ্ট ভালো করতে পারিনি। তবে, যখনই মাঠে থেকেছি, আমার শতভাগ দেয়ার চেষ্টাই করেছি।
তামিম বলেন, যদিও আমি কথা বলতে পারছি না তবে, আমি অনেক কিছুই বলতে চাই। আমি বলতে চাই, পরিস্থিতিকে সম্মান করুন। এভাবে কথা বলা সহজ নয় যখন, এতদিন খেলার পর বিদায় বলতে হয়। আমি সব গণমাধ্যমকেই ধন্যবাদ জানাই। তাদের প্রতি অনুরোধ, যারা ভবিষ্যতে খেলবে তাদের নিয়ে আপনারা ভালো লিখবেন, খারাপ লিখবেন, যা কিছুই লিখবেন; কিন্তু দয়া করে ক্রিকেট সম্পর্কেই লিখুন। সীমা অতিক্রম করাটা অনুচিত। কেউ ভালো খেললে ভালো বলবেন, খারাপ খেললে খারাপ। কিন্তু ক্রিকেট নিয়েই লিখুন। কিন্তু কখনও কখনও সীমা অতিক্রমের ঘটনাও ঘটে।
তামিম ইকবাল বলেন, যারা ক্রিকেট খেলছে তাদের প্রতি একটাই অনুরোধ, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বছর। এটা বিশ্বকাপের বছর। দলের সাথেই থাকুন। দলকে সমর্থন করুন।
তামিম বলেন, যারা আমাকে ক্রিকেটার এবং মানুষ হিসেবে বিকশিত হতে সাহায্য করেছেন, তাদের সবাইকে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ। আমার মা, আমার ভাই, আমার স্ত্রী সন্তান- আমার এই যাত্রায় তাদের সবাইকে কষ্ট করতে হয়েছে। তারা খুশিও হয়েছে। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই। আমার চ্যাপ্টার এখানেই শেষ করে দিন, অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্ষেত্রে। এটাই ‘দ্য এন্ড’।
বুধবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে হারের পরই বড় কোনো সিদ্ধান্তের গুঞ্জন ভাসছিল। শেষ পর্যন্ত গুঞ্জনই সত্যি হলো। তামিম ইকবাল অধিনাকত্বতো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। তাও আবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঠিক তিন মাস আগে! এই ঘোষণার আগে বিসিবি কিংবা ক্রিকেট বোর্ডের কোন পরিচালকের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেননি তিনি। একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে তামিম এই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।
গত পরশু সিরিজ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আনফিট হলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলবেন বলে ঘোষণা দেন ওয়ানডে অধিনায়ক। শতভাগ ফিট না হয়েও তামিমের ম্যাচ খেলার ঘোষণায় বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এবং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন৷
মাথার ওপর বিশাল চাপ নিয়ে বুধবার আফগানদের মুখোমুখি হয়ে ব্যর্থ হন তিনি। বুধবার প্রথম ওয়ানডেতে ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি ৷ দলও হেরেছে আফগানিস্তানের কাছে ৷ পরে ফিল্ডিংয়ে খুব ভালো অবস্থানে পাওয়া যায়নি তামিমকে। স্পষ্ট বোঝা যায় ফিটনেস ঘাটতি।
সব কিছু মিলিয়ে বাস্তবতা তামিমের বিপক্ষেই। ফিটনেসহীন তামিমের আত্মবিশ্বাসও ছিল তলানীতে। বিশ্বকাপের মাত্র তিন মাস আগে অধিনায়কের এমন অবস্থা চাইবে না কোন দল। তামিম হয়তো বিষয়টি উপলব্ধি করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গত বছর ১৬ জুলাই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী তামিম। এবার ওয়ানডে ও টেস্ট থেকেও অবসরের ঘোষণা দিলেন। ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। ২০০৭ সালের কেনিয়ার বিপক্ষে দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। সর্বশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম ওয়ানডেতে এই সংস্করণেই শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২৪১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬.৬২ গড়ে তিনি ৮ হাজার ৩১৩ রান করেছেন। সেঞ্চুরি ১৪টি, হাফ সেঞ্চুরি ৫৬টি।
এছাড়া ৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে তার সংগ্রহ ৫ হাজার ১৩৪ রান। ৩১ হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছেন ১০টি সেঞ্চুরি। সবার আগে ছেড়ে দেওয়া টি-টোয়েন্টিতে ৭৮ ম্যাচে করেছেন ১ হাজার ৭৫৮ রান। এক সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ৭টি হাফ সেঞ্চুরিও।
বিবার্তা/জবা
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]