শিরোনাম
আত্মহত্যা করতে সেমন্তিকে কী প্ররোচিত করা হয়েছিল?
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০১৯, ১০:০০
আত্মহত্যা করতে সেমন্তিকে কী প্ররোচিত করা হয়েছিল?
আকরাম হোসেন
প্রিন্ট অ-অ+

বগুড়ায় মায়িশা ফাহমিদা সেমন্তি (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। কি কারণে সে এই পথ বেঁচে নিয়েছেন তার সঠিক কারণ জানেন না স্বজনরা। তবে একটি সুইসাইড নোটে সে আত্মহত্যার কারণ লিখে গেছেন বলে জানা গেছে। সেখানে ফেসবুক গ্রুপে আপত্তিকর ছবি ছড়ানোকে কেন্দ্র করে সেমন্তি আত্মহত্যা করেছে বলে লেখা আছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।


এদিকে সেমন্তি মারা যাওয়ার পর পুলিশ মামলা না দিলেও ঘটনার ১৭ দিন পর থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।


সেমন্তি বগুড়ার লতিফপুর গ্রামের হাসানুল মাশরেকের মেয়ে। সে বগুড়া শহরের ওয়াইএমসিএ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী।


জানা গেছে, ১৭ জুন ভোর রাতে নিজ বাসায় শয়নকক্ষে সেমন্তি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে। পরদিন সকালে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পর দিন তার লিখে যাওয়া সেই সুইসাইড নোটটি উদ্ধার করেন পরিবারের লোকজন। সুইসাইড নোটে সেমন্তি আত্মহত্যার বিস্তারিত কারণ উল্লেখ না করলেও আবির নামে এক বন্ধুর নাম লিখেছে।


সেমন্তির পরিবার সূত্রে জানা যায়, আবির নামে এক ছেলের সঙ্গে সেমন্তির সম্পর্ক ছিল। আবির বিভিন্ন সময় সেমন্তির মুঠোফোনে কথাও বলেছে। তার ফাহমিদা নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ম্যাসেঞ্জারে আবিরকে একান্ত কিছু ছবি আদান-প্রদান করে সেমন্তি। পরে সেই ছবি ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় অপমান সইতে না পেরে লজ্জা ও ক্ষোভে আত্মহত্যা করে সেমন্তি।


সেমন্তির আত্মহত্যার আগের দিন তার বাবা হাসানুল মাশরেককে ফোন করেছিল আবির। ফোন করে হাসানুলকে বলে, সেমন্তিকে দেখে রাখবেন, ও আত্মহত্যা করতে পারে। এখন প্রশ্ন উঠেছে সেমন্তি আত্মহত্যা করবে সেটা আবির আগে থেকেই জানলো কী করে?



হাসানুল বির্বাতাকে বলেন, আমার মেয়ের ফোন কল লিস্ট থেকে জানতে পারি, যে রাতে সেমন্তি আত্মহত্যা করে সেদিন রাত ২টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত আবিরের সাথে কথা বলেছে এবং পরে আরো কিছু সময় ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের কথা বলে। সেখানে খুব বাজেভাবে আমার মেয়েকে এসএমএস দিয়েছে আবির। যার কারণে সেমন্তি আত্মহত্যা করেছে।


তিনি আরো বলেন, আবির ছাড়াও শাহরিয়ার অন্তর নামে এক বখাটে সেমন্তিকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে যাই। কিন্তু তখন থানা থেকে মামলা নেয়নি। থানায় মামলা করতে গেলে সেখান থেকে কোর্টে মামলা করতে বলে।


হাসানুলের অভিযোগ, পুলিশের এক পদস্থ কর্মকর্তার ভাতিজা হওয়ায় আবিরের বিরুদ্ধে মামলা নিচ্ছিল না পুলিশ। পুলিশের ওই পদস্থ কর্মকর্তা আগে দিনাজপুর জেলায় ছিলেন। বদলি সূত্রে তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামে রয়েছেন। আবির তার ভাতিজা।


সেমন্তির প্রতিবেশী মেহেদি হাসান উদয় এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বিবার্তাকে বলেন, সেমন্তি আত্মহত্যা করলেও তাকে আত্মহত্যা করার প্ররোচনা দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত আবির প্রশাসনে একজন কর্মকর্তার ভাতিজা। যার কারণে হয়তো থানা থেকে প্রথমে মামলা নিতে চায়নি। অপরাধী যেই হোক সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ মামলার ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করি।


জানতে চাইলে বগুড়া সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম বদিউজ্জামান বিবার্তাকে বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। মামলা নেয়া হয়েছে। তার (সেমন্তি) ফোন নম্বরের কল লিস্ট অনুসন্ধানের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়েছি। অনুমতি পেলে ঢাকায় পাঠানো হবে।


আগে কেন মামলা নেয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা (বাদী পক্ষ) আগে মামলা করতে আসেনি। তারা তার মেয়ের মোবাইল নম্বর দিয়ে একটি অভিযোগ করতে আসেন। আমি নিজে সে অভিযোগপত্র গ্রহণ করি এবং এই অভিযোগ নিয়ে এখন তদন্ত করা হচ্ছে। মামলার তদন্তধীন আছে জানিয়ে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।


বিবার্তা/আকরাম/উজ্জ্বল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com