
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এর ৫৩তম সমাবর্তন ১৯ নভেম্বর, শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সমাবর্তনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সমাবর্তন পাওয়া গ্রাজুয়েটদের উচ্ছ্বাসে উচ্ছ্বসিত ঢাবি ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তনের মূল ভেন্যুর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে চলছে মহড়া।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবারের সমাবর্তনে ৩০ হাজার ৩৪৮ জন গ্রাজুয়েট অংশগ্রহণ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ ড. জঁ তিরোল।
উচ্ছ্বসিত গ্রাজুয়েটরা:
সরেজমিন দেখা যায়, গত ১৬ ও ১৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমাবর্তনের গাউন-হ্যাট প্রদান করে। এরপরই মূলত শুরু হয় সমাবর্তনের আমেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), কলাভবন, অপরাজেয় বাংলা, রাজু ভাস্কর্য, বটতলা, সিনেট ভবন, মল চত্বর, কার্জন হলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক হলের প্রায় সব জায়গায় গ্রাজুয়েটরা গাউন-হ্যাটে সজ্জিত হয়ে মহড়া দিচ্ছেন, উপযাপন করছেন, ছবিতে ধরে রাখছেন- শিক্ষা জীবনের ঐতিহাসিক অর্জনকে।
জীবনের এই মাহেন্দ্রক্ষণকে আরো অর্থবহ করে তুলতে অনেকে শিক্ষার্থী মা-বাবাকে সমাবর্তন উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাসে নিয়ে এসেছেন। তারা মা-বাবার গায়ে নিজেদের গাউন ও হ্যাট পরিয়ে ছবি তুলছেন। ছবি মহড়ায় প্রেমিক-যুগলও পিছিয়ে নেই। তারাও যেনো নিজেদের সেরা সময় কাটাচ্ছেন। এছাড়া জুনিয়র শিক্ষার্থীদেরও গ্রাজুয়েটদের গাউন, হ্যাট পরে ছবি তুলে নিজের ওয়ার্মআপটা সেরে নিচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীকে আবার ক্যাম্পাস জীবন শেষ হয়ে যাওয়ায় আবেগঘণ হতেও দেখা গেছে।
সমাবর্তনে অংশ নেয়া অর্থনীতি বিভাগের ২০১৫-১৬শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আসমাউল হুসনা সাইমা বিবার্তাকে বলেন, কালো গাউন আর টুপি হাতে পাওয়ার পরদিন থেকে সমাবর্তনের আগেরদিন পর্যন্ত সিডিউল করেছি এই তিনদিনে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরব বন্ধু-বান্ধবদের সাথে। ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই এই বিশেষ দিনটির প্রতীক্ষায় ছিলাম। আগামীকাল আমাদের সেই বিশেষ দিনটি অনুষ্ঠিত হবে। হাজারো স্মৃতিবিজড়িত এই ক্যাম্পাসের মায়া ছাড়তে আবেগী হয়ে পড়ছি। কিন্তু এটি অনেক আনন্দের, সম্মানের। নিজের বাবা-মাকে কক্সবাজার থেকে নিয়ে এসেছি এই মুহূর্তগুলো দেখাব বলে। আমি জিতে গেলে জিতে যায় তারাও।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৫-১৬শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শেখ তৈমুর বিবার্তাকে জানান, শুধু ছবি তোলার জন্য ক্যাম্পাসে যাচ্ছি না বরং এই ক্যাম্পাসের মায়া ছাড়তে পারছি না দেখে উৎসবমুখর পরিবেশে আরও একবার ক্যাম্পাসটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। দীর্ঘ পাঁছটি বছর এই ক্যাম্পাসে পদচারণা করেছি। শুরু থেকেই জানতাম- একদিন এই ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে। কিন্তু কেন, কোন মোহে এই ক্যাম্পাসের মায়া ছাড়তে মন চাইছে না। প্রথম দিনই বন্ধুদের সঙ্গে গাউন সংগ্রহ করেছি। দুদিন আগে পেয়ে ভালোই লাগছে। এমন সুন্দর মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।
ঢাবিতে সমাবর্তন মহড়া:
সরেজমিনে দেখা যায়, ৫৩তম সমাবর্তনের মহড়া ১৮ নভেম্বর, শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল সমাবর্তনের সভাপতি ও প্রধান অতিথির চেয়ার খালি রেখে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনেট, সিন্ডেকেট, একাডেমিক পরিষদের সদস্যগণ ও গ্র্যাজুয়েটরা এবং তাদের মাতা-পিতাদের উপস্থিত থাকতে।
যেখানে আগামীকালের মূল সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে সফল করার জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। বিভিন্ন রিহার্সালের মধ্যে রয়েছে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, কোরান তিলাওয়াত, গীতা পাঠ, বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষী সংগীত পরিবেশন ও নজরুল গীতি পরিবেশন। এছাড়াও প্রধান অতিথিকে ডক্টর অব ল'স ডিগ্রি প্রদানের বিভিন্ন অনুষঙ্গ এবং এই ডিগ্রি প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের সম্মতি ইত্যাদি রিহার্সেল করতে দেখা যায় মহড়ায়। এসময় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত গ্রাজুয়েটদেরও রিহার্সাল করানো হয়।
১৯ নভেম্বর, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত মূল সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢাবি শিক্ষার্থীরা ছাড়াও ভিডিও কনফারেন্সে সমাবর্তনে অংশ নেবেন অধিভুক্ত সাত কলেজ এবং ঢাবির উপাদানকল্পে পরিচালিত অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরাও। ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণ এবং ইডেন মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে গ্রাজুয়েটরা এই সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করবে।
এদিকে সমাবর্তন উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এসময় সমাবর্তনের বিস্তারিত তথ্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সামনে তুলে ধরবেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
এই সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য ৩০ হাজার ৩৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট ও গবেষক রেজিস্ট্রেশন করেছেন। অনুষ্ঠানে ১৩১ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ১৫৩টি স্বর্ণপদক, ৯৭ জনকে পিএইচডি, ২ জনকে ডিবিএ এবং ৩৫ জনকে এম ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হবে।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ৫৩তম সমাবর্তনের সব কর্মসূচি সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল ও সফলভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠান প্রবেশের সময়সীমা ও নিয়মাবলী:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা খেলার মাঠের (সুইমিংপুল সংলগ্ন) গেইট দিয়ে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করবেন। তাদের জন্য সকাল সাড়ে ৯টায় গেইট খোলা হবে এবং ১১টার মধ্যে অবশ্যই সমাবর্তনস্থলে আসন গ্রহণ করবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানস্থলে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করার পর কোনক্রমেই মঞ্চের আশেপাশে ও অন্যান্য স্থানে ঘুরাফেরা করা যাবে না।
আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ জিমনেসিয়াম সংলগ্ন গেইট দিয়ে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করবেন। তাদের জন্য সকাল ১০টায় গেইট খোলা হবে এবং সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে অবশ্যই সমাবর্তনস্থলে আসন গ্রহণ করবেন বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন।
স্বাস্থ্যসচেতনতার লক্ষ্যে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশের জন্য মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, সমাবর্তন উপলক্ষ্যে আগামীকাল ১৯ নভেম্বর, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে।
বিবার্তা/সাইদুল/রোমেল/জেএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]