শিরোনাম
রাজধানীতে বাসায় বাসায় ‘টু লেট’, বিপাকে বাড়িওয়ালারা
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২০, ১৯:৩৭
রাজধানীতে বাসায় বাসায় ‘টু লেট’, বিপাকে বাড়িওয়ালারা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

জাদুর নগরী ঢাকায় বাড়িভাড়া দিতে না পেরে পরিবারসহ গ্রামে ফিরে গেছেন লাখো মানুষ, কেউ কেউ অভিজাত এলাকা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ার এলাকায় চলে গেছেন, ফলে ভাড়াটিয়ার অভাবে খালি পড়ে আছে অসংখ্য ফ্ল্যাটবাড়ি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে রাজধানীর মানুষের জীবনের বাস্তবতা এমনই।


রাজধানীর পশ্চিম তেজতুরী বাজার। মেইন রাস্তা থেকে গলির ভেতর ঢুকতেই দেখা মিলছে ‘টু লেট’, বাসা ভাড়া হবে, সাবলেট ভাড়া হবে। শুধু তাই নয়, ওই মহল্লার প্রতিটি বাসার সামনেও ‘টু লেট’ সাটানো রয়েছে। তবে ওইসব ‘টু লেট’ দেখার কোনো লোক নেই। এতে বিপাকে পড়েছেন বাড়িওয়ালারা। বৃহস্পতিবার সকালে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, পূর্ব তেজতুরী বাজার, মুনিপুড়িপাড়া, রাজাবাজার এলাকায় জুন-জুলাই মাস আসলে বাসা ভাড়া পাওয়া যেত না। কারণ ওই সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও জন্য কোচিং করতে ঢাকায় অবস্থান নিত।


আর ঢাকার বেশিরভাগ কোচিং সেন্টার ফার্মগেট এলাকায় থাকায় এর আশপাশে বাসা নিত ছাত্ররা। তবে এবার করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এমনকি এখনো পর্যন্ত এইচএসসি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই কোনো শিক্ষার্থী ঢাকায় আসছে না। বরং ঢাকায় যারা ছিলেন; তারাও গ্রামে চলে গেছেন।


পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকার বাসিন্দা রমজান আলী নামের এক ব্যক্তি বিবার্তাকে জানান, তার একটি ছাত্র হোস্টেল ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস আসার পর ছাত্ররা বাড়ি চলে গেছে। কেউ কোনো ভাড়াও দেয়নি। পরে অনেক দিন টু-লেট সাটানো ছিল। তারপরও কোনো ভাড়াটিয়া পাননি। পরে নিরুপায় হয়ে হোস্টেলটি ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।


শুধু পশ্চিমতুরী বাজার নয়, রাজধানীর ধানমন্ডি, বনানী, কারাওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, খিলক্ষেত, যাত্রাবড়ি, গুলশান, পুরান ঢাকা, শাহবাগ, মগবাজার, মালিবাগ, বাড্ডা, নতুন বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাসার সামনে টু লেট সাটানো রয়েছে। কিন্তু কোনো ভাড়াটিয়া নেই। এছাড়াও ওই এলাকা থেকে এখনো ভাড়াটিয়ারা বাসা ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন।


কুমিল্লার বাসিন্দা রুস্তুম আলী। তিনি বাড্ডা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া দিয়ে থাকতেন। তিনি বিবার্তাকে জানান, করোনা আসার আগে আমি ব্যবসা করতাম। কিন্তু করোনা আসার পর থেকে আমার দোকান বন্ধ রয়েছে। এতে আমি গত তিন মাস বাসা ভাড়া দিতে পারি নাই। দোকান ভাড়াও না নিতে পেরে দোকান ছেড়ে দিছি। এখন ঢাকা থেকে গ্রামে চলে যাচ্ছি। তাই বাসাও ছেড়ে দিছি। এ জন্য মালিক টু লেট লাগিয়েছে।


তুহিন নামের আরেক ব্যক্তি বিবার্তাকে বলেন, তাদের বাসায় মোট ৩২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। কিন্তু করোনা আসার পর থেকে অনেক ভাড়াটিয়া চলে গেছে। ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটিয়াদের রাখা যায়নি। তারপরও চলে গেছে। গত দুই মাস থেকে টু লেট সাটানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো সাড়া মিলছে না।


মোহাম্মদপুরের একজন বাড়িওয়ালা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার সময় আমার একটা ফ্ল্যাট খালি হয়েছে। সেটা আর ভাড়াই দিতে পারিনি। যারা ছিলেন তারাও আস্তে আস্তে গ্রামে চলে গেছেন। ফলে আমাদের ৬টা ফ্ল্যাট খালি পড়ে আছে। কেউ ভাড়াও নিতে আসছেন না।


তিনি আরো জানান, এখন যা পাবেন তাতেই ভাড়া দেয়ার পরিকল্পনা করছেন। কারণ বাড়িটি বানাতে তাকে ঋণ নিতে হয়েছে। সেটা শোধ করতে কিস্তি দিতে হবে।


জানা গেছে, করোনার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব খাত স্থবির হয়ে পড়ায় গত কয়েক মাসে কর্মহীন ঢাকার লাখ লাখ মানুষ। কাজ হারিয়েছে দোকান কর্মচারী থেকে শুরু করে সব খাতের শ্রমজীবী। চাকরি হারিয়ে পরিবার নিয়ে বিপাকে মধ্যবিত্ত। কেউ কেউ পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে ফ্ল্যাট বাসা ছেড়ে উঠেছেন মেসে। কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন আসবাবপত্র। কেউ ভাড়া না দিতে পেরে মালামাল রেখে ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশায় জমানো টাকা খরচ করে টিকে থাকার সংগ্রামে মধ্যবিত্তের একটা অংশ।


বিবার্তা/খলিল/গমেজ/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com