বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় আতঙ্কে দিন পার করছে রাজধানীবাসী। একই ভাবে পথে-ঘাটে, স্কুল-কলেজ এমনকি যারা হাসপাতালে ভর্তি তারাও আছেন আতঙ্কে।
আজ সরেজমিনে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, করোনা মোকাবেলায় হাসপাতালটির ৫টি কেবিন ও কিছু ওয়ার্ড নিয়ে ভবন-১ এর ১১ তলায় ‘করোনা ওয়ার্ড’ খোলা হয়েছে। তবে এটি ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতালের বাকি সব রোগীর কাছে।
মিটফোর্ড-এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে পুরুষ ও মহিলাদের সার্জারি ওয়ার্ড, খাবার ক্যাফে, চতুর্থ তলায় কেবিন, ৬ তলা থেকে উপরে অপারেশন থিয়েটার, কেবিন, ওয়ার্ডসহ রয়েছে সাধারণ রোগী ও ডাক্তারদের অবাধ চলাফেরা।
এদিকে মিটফোর্ড হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে প্রবেশের জন্য নেই আলাদা কোনো সিঁড়ি বা বিশেষ কোনো লিফটের ব্যবস্থা। ভবন-১ এর চারটি লিফটের মধ্যে ২টি সচল, তার মাত্র ১টি ১১ তলা পর্যন্ত যায়। এই লিফট ১১ তলা ছাড়াও ৩, ৫, ৭, ৯ তলায় থামে। ফলে করোনা রোগী ভর্তি হলে এই সব ফ্লোর পেরিয়েই ১১ তলায় যেতে হবে। সিঁড়ি দিয়ে রোগী পরিবহন করা হলে সেটি হবে আরো ঝুঁকিপূর্ণ।
এসব কারণে হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই ভয়ে সময় কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ হাসপতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগও তুলছেন।
সম্প্রতি ছেলের পায়ের সার্জারি করিয়েছেন মেহেরপুরের নজরুল ইসলাম, ভর্তি ৩ তলার সার্জারি ওয়ার্ডে। তিনি বিবার্তাকে বলেন, রোগী আমার ছেলে। তবে আমাকেও গত ৪ দিন ধরে এখানে থাকতে হচ্ছে। লোক মুখে শুনলাম এখানে নাকি করোনা চিকিৎসাও দেয়া হবে। এই ভবনের উপরেই নাকি সেই ওয়ার্ড। কিন্তু এটি যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ, উচিত ছিল এটি আলাদা কোনো ভবনে করা। কারণ এখানে এত বেশি রোগী, ওয়ার্ড তো দূরে থাক, ফ্লোরেও জায়গা পায় না অনেকেই। এর মধ্যে যদি কোনোভাবে এখানে করোনা ছড়িয়ে পড়ে আল্লাহ জানে কি হবে। উপরে বা নিচে থেকে অবাধে ডাক্তার নার্স চলাচল করে। সুতরাং এতগুলা ওয়ার্ড ও রোগী যে ভবনে সেখানে কোনোভাবেই করোনা ওয়ার্ড করা উচিত হয়নি।
রাইসুল ইসলাম নামক এক ইন্টার্ন চিকিৎসক বিবার্তাকে বলেন, যারা ইন্টার্নি করেন তাদের একেক দিন একেক ওয়ার্ড বা ব্লকে ডিউটি থাকে। আমরা তো আর এটা ভেবে চলাচল করি না যে কোন ব্লকে কোন রোগী আছে। আমাদের কাছে সবাই সমান। হতে পারে এমন যে ভুল করে হলেও আমরা করোনা ওয়ার্ড বা আশপাশের কোনো ওয়ার্ড ভিজিট করে অন্য ওয়ার্ডে আসলাম। ভাইরাস ছড়াতে কিন্তু সময় নিবে না তখন। আইসোলেশন মানে আইসোলেশন, সে ক্ষেত্রে উচিত ছিল আলাদা বিল্ডিং বেছে নেয়া।
কথা হয় ৪ তলার মহিলা ওয়ার্ডের সদ্য অপারেশন হওয়া এক রোগীর স্বামীর সাথে। তিনি বলেন, ২ দিন হলো আমার স্ত্রীর অপারেশন হয়েছে। ডাক্তার বলছে কমপক্ষে ৭ দিন থাকতে। তবে এখানে যে পরিবেশ দেখছি, আমি চেষ্টা করব কাল বা পরশু রোগী নিয়ে চলে যেতে। কারণ শুনলাম এই ভবনের উপরের তলায় করোনা ওয়ার্ড। কিন্তু রোগী পরিবহনের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। সব রোগী যেভাবে করোনা রোগীও সেভাবেই। তাই আমি এখানে ঠিক বেশি দিন থাকার ভরসা পাচ্ছি না।
সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কথা হয় মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক শামসুল ইসলামের সাথে। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমাদের দেশের সাথে অন্যান্য দেশের তুলনা করলে বলতে হবে এখন পর্যন্ত করোনা নিয়ে আমরা অনেক ভাল আছি। আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মত আলাদা করে করোনা ওয়ার্ড চালু করেছি। তবে সে ধরনের কোনো রোগী আমরা এখনো পাইনি। তবে প্রতিদিনই কিছু না কিছু মানুষ সামান্য জ্বর ও সর্দি কাশি নিয়ে আমাদের কাছে আসে। আমরা পরীক্ষা করে তাদের সেইমত ওষুধ দিয়ে দেই। তবে করোনা আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি।
কমপ্লিট আইসোলেশন ও সাধারণ রোগীদের উদ্বিগ্নতা নিয়ে তিনি বলেন, এটি নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। প্রথমত, এখনো আমরা করোনার কোনো রোগী ভর্তি করিনি। সবেমাত্র ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। আর যদি সে ধরনের কোনো রোগী পাই, তবে রোগীকে আমরা সম্পূর্ণ অচ্ছাদিত করে নিয়ে আসব। করোনা ওয়ার্ডের জন্য নির্ধারিত ডাক্তার ও ওয়ার্ড বয় আছেন। তারা কোনোভাবেই অন্য কোনো ওয়ার্ডে যাবেন না যতক্ষক না পর্যন্ত তারা পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত না হয়। আর ১১ তলায় যাবার জন্য একটি লিফট আলাদা করার কথা চলছে। সেট হয়ে গেলে ওই লিফট দিয়ে শুধু করোনা ওয়ার্ডে চলাচল করা হবে।
আমাদের কিছু হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে যেখানে ফোন করলে আমারা গিয়ে রোগীর সোয়াপ (SWAP) টেস্ট করব। সন্দেহজনক কিছু পেলে হোম আইসোলেশন বা হাসপাতালে নিয়ে আসব। নম্বরগুলো হচ্ছে - ০১৯৩৭০০০০১১ , ০১৯৩৭১১০০১১ , ০১৯২৭৭১১৭৮৪ ও ০১৯২৭৭১১৭৮৫।
রবিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) দেয়া তথ্য মতে, দেশের বিভিন্ন জেলায় মোট ২ হাজার ৩১৪ জন কোয়ারেন্টাইনে এবং ১০ জন আইসোলেশনে রয়েছেন।
আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, ইতালি ফেরত ১৪২ জনের সবাই প্রশাসনের সহায়তায় বাড়ি ফিরেছেন। অন্য যেসব ফ্লাইটে ইতালি প্রবাসীরা ফিরেছেন তাদের সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে পূর্বে জানানো পাঁচজনের শরীরেই করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
তিনি আরো জানান, হোম কোয়ারেন্টাইনের ক্ষেত্রে আপোস করা হবে না। কেউ হোম কোয়ারেন্টাইন না মানলে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। গতকাল যে দুইজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল তারা সুস্থ রয়েছেন বলেও জানান সেব্রিনা।
বিবার্তা/আদনান/উজ্জ্বল/জাহিদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]