শিরোনাম
রাজধানীতে হঠাৎ করেই মাস্কের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২০, ১৮:০২
রাজধানীতে হঠাৎ করেই মাস্কের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে তিনজনের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর আতঙ্কিত পুরো ঢাকাবাসী। করোনাভাইরাসের হাত থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করতে তারা মরিয়া হয়ে ছুটছেন ফার্মেসি আর ফুটপাতের দোকানগুলোর দিকে। কেউ প্রত্যাশিত মাস্কটি পাচ্ছেন আবার কেউ পাচ্ছেন না। পেলেও সেটি কিনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে।



সোমবার (৯ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার নামি-দামি ফার্মেসি থেকে শুরু করে ফুটপাত ও অভিজাত মার্কেটগুলোর সরেজমিনে ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।


ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশে করোনাভাইরাস আতঙ্ককে ইস্যুকে করে এক শ্রেণির সুযোগ সন্ধানী মুনাফালোভী ব্যবসায়ী ক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। প্রতিটি মাস্কের দাম দুই থেকে তিনগুণ বেশি রাখছেন তারা। আবার কেউ কেউ এক মাস্কের দাম নিচ্ছেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্তও। যা আগে ৪০ থেকে ৫০ টাকা ছিল।


রাজধানীর ফার্মগেট, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, শাহবাগ, হাতিরপুল, নিউ মার্কেট, আজিমপুর, মতিঝিল, গুলশান, গুলিস্তান, বানানী, বঙ্গবাজার, চকবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাস্ক নিয়ে ফুটপাতে বসে আছেন ভাসমান বিক্রেতারা। আর তাদের কাছ থেকে পথচারীরা মাস্ক কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিক্রেতারা আগের দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম নিচ্ছেন। আগে যে মাস্ক বিক্রি হতো ১০ থেকে ১৫ টাকায়। সেই মাস্ক এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। এছাড়াও ৪০ টাকার মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।



বিবার্তার প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউ মার্কেট এলাকা ঘুরেছেন। এ সময় ফুটপাত ও ফার্মেসিগুলোতে মাস্ক বিক্রি হতে দেখেছেন।


তিনি জানান, মোহাম্মদপুরে প্রতিটি ফামের্সিতে মাস্ক বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে প্রতিটি ক্রেতার কাছে বিক্রেতারা বেশি দামে মাস্ক বিক্রি করছেন। দুপুর পর্যন্ত বেশিভাগ ফার্মেসি থেকে মাস্ক শেষ হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।


ফার্মেসি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এই প্রতিবেদক জানান, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত উদ্বেগে বাজারে মাস্কের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আগে সার্জিক্যাল মাস্ক প্রতিটি ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হতো। এখন তা ৮০ থেকে ১২০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।



রাজধানীর শাহবাগ, বঙ্গবাজার, ঢাকা মেডিকেলের আশপাশ এলাকা ঘুরে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদন মুহিউদ্দিন রাসেল জানান, শাহবাগ থেকে টিএসটি যাওয়ার পথে ফুটপাতে কয়েকটি দোকান বসে। সেই দোকানগুলোতে সকাল থেকে মাস্ক বিক্রি করা হয়। তবে সেখানে ১০ টার মাস্ক ৫০ টাকা, ২০টার মাস্ক ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও ৫০ টাকার মাস্ক ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। একই অবস্থা বঙ্গবাজার ও ঢাকা মেডিকেলের আশপাশ এলাকায়ও।


রাজধানীর মিরপুর, শেওরাপাড়া, কাজীপাড়া, পল্লবী, কচুক্ষেত এলাকা ঘুরে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক সৌখিন আদনান জানান, সেই এলাকা ফার্মেসিগুলোও মাস্কের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারপরও ক্রেতারা মাস্ক কিনে নিচ্ছেন। কিছু কিছু ফার্মেসিতে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।


একই অবস্থা রাজধানীর মতিঝিল, ফার্মগেট, মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা, খিলক্ষেত, যাত্রাবাড়ি, উত্তরাসহ অন্যান্য এলাকায়ও।



মতিঝিল এলাকার ফুটপাতের দোকানীরা জানান, আজ সকাল থেকে মাস্ক বিক্রি বেড়ে গেছে। পথচারীরা মাস্কের দোকানগুলোতে বেশি ভিড় করছেন। তাই আগের চেয়ে বেশি দামে মাস্ক বিক্রি করা হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন তারা।


মোস্তাফিজ নামের এক বিক্রিতা বিবার্তাকে জানান, তিনি সকালে ৫০০ মাস্ক নিয়ে মতিঝিল এলাকায় ফুটপাতে বসেন। কিন্তু দুপুর সাড়ে ১২টার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। পরে তিনি ফের আরো ৫০০ মাস্ক নিয়ে আসেন। তবে পাইকারি বাজারে মাস্কের দাম বৃদ্ধি করায় তিনিও বেশি দামে বিক্রি করছেন; এমনটাই জানান মোস্তাফিজ।


মো.সারোয়ার আলম নামের একজন ক্রেতা বিবার্তাকে বলেন, করোনা আক্রান্তের খবর শোনার পর মনে আতঙ্ক ধরে গেছে। যতোটা সম্ভব সতর্ক থাকার জন্য মাস্ক কিনতে এসেছি। নিজের এবং সন্তানের জন্য ৬টা মাস্ক কিনেছি।



রহিমা বেগম নামের এক নারী বিবার্তাকে জানান, তিনি ও তার পরিবারের জন্য মোট ১০টি মাস্ক কিনেছেন। প্রতিটি মাস্ক ১০০ টাকা করে কিনেছেন বলে জানান তিনি।


তিনি বলেন, মাস্ক না কিনে তো কোনো উপায় নাই, তাই বেশি দাম দিয়ে মাস্ক কিনেছি।


এর আগে রবিবার (৮ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর মহাখালিতে আইইডিসিআর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা জানান, বাংলাদেশে হানা দিয়েছে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস। ইতিমধ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তিনজন। তিনজনের মধ্যে দু’জন একই পরিবারের।



তিনি বলেন, ইতালি থেকে দুই বাংলাদেশী নাগরিক দেশে এলে পরীক্ষার পর তারা কভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়। এদের একজনের মাধ্যমে পরবর্তীকালে পরিবারের এক সদস্য আক্রান্ত হন। তিনজনের মধ্যে একজন নারী, দু’জন পুরুষ। এদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তবে আক্রান্তদের পরিচয় জানানো হয়নি। এমনকি তারা কোথায় তাও বলেননি তিনি।


এদিকে, করোনাভাইরাসের ঘটনায় দেশে যেন কেউ মাস্কসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের দাম বেশি না নিতে পারে এবং মজুদ করতে না পারে সে জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা বলেছেন হাইকোর্ট।


স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর সোমবার (৯ মার্চ) বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলেন। আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।


এদিকেদেশে করোনা আক্রান্ত ৩ জনের সংস্পর্শে এসেছে এমন ৪০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব মোহাম্মদ আসাদুল ইসলাম। সোমবার (৯ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এসব তথ্য জানান তিনি।



গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাস প্রথম দেখা দেয়। পরে চীনের অন্যান্য প্রদেশ এবং বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। ইতালি থেকে পুরো ইউরোপ এবং আফ্রিকা ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানে এ ভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।


দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতে আগেই পৌঁছেছে করোনাভাইরাস। এর মধ্যে ভারতে এ ভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ধরা পড়েছে। বাংলাদেশে সংক্রমণের খবর এলো রবিবার।


বিবার্তা/খলিলি/উজ্জ্বল/রাসেল/আদনান/জাহিদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com