শিরোনাম
বাকরুদ্ধ তোহা মনির বাবা-মা
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:৩৮
বাকরুদ্ধ তোহা মনির বাবা-মা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর কদমতলী এলাকার মিরাজনগরে খালে পাড়ে নিখোঁজ হওয়া তোহা মনিকে (আশামনি) পাঁচ দিন বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) উদ্ধার করা হয়েছে।কিন্তু জীবিত নয়, তাকে মৃত অবস্থায় খাল থেকেই উদ্ধার করা হয়ে।তবে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তার বাবা-মা।আজ সকালে তাদের বাসায় গিয়ে এমনটা জানা গেছে।


তোহা মনির বাবা এরশাদ মিয়া মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরশেলই গ্রামের বাসিন্দা। তিনি রাজধানীর রায়েরবগের মিরাজনগর এলাকায় ব্যবসা করেন। সেই সুবাদে তিনি মিরাজনগরে ডি ব্লকে মোহাম্মদনগর কালভার্ট এলাকায় বিক্রমপুর হাউজ নামের একটি বাসায় বসবাস করেন। চার তলা বিশিষ্ট ওই বাসার নিচ তলার একটি রুমে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন তিনি।



তোহা মনির বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, তোহা মনির মা তানিয়া বেগমকে ঘিরে কয়েকজন নারী বসে আসেন।কিছুক্ষণ পরপর মা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।তবে কারো সাথে তিনি কথা বলছেন না। বাকরুদ্ধ অবস্থায় বসে থাকা মাকে সবাই সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। একই অবস্থা তোহা মনির বাবা এরশাদ মিয়ারও। তিনি বাসার বাহিরে ঘটনাস্থলের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তবে কারো সাথে কোনো কথা বলছেন না। তবে মাঝে মাঝে চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে দেখা গেছে।


তোহা মনির নানী মুরশেদা বেগম বিবার্তাকে জানান, ঘটনা শোনার পরপরই তারা গ্রাম থেকে ছুটে আসেন। তবে শনিবার পর থেকে তোহা মনির বাবা-মা ভেঙে পড়েছেন। তারা খাবারও খাইতে চাচ্ছেন না।



তিনি আরো জানান, তিন সপ্তাহ আগে ঘরোয়াভাবে তোহা মনির ৫ম জন্মদিন পালন করা করা হয়। সেই স্মৃতিগুলো বলে তার বাবা-মা কান্না করছেন।


সরজমিনে মিরাজনগর এলাকায় ডি ব্লকে গিয়ে দেখা গেছে, বিক্রমপুর হাউজের পাশে ঘিরে একটি খাল রয়েছে। সেটি ডিএনডি খাল নামে পরিচিত। ওই খালের পাড়ে কিছু খালি জায়গা রয়েছে। সেখানে ছোট একটি ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠ নির্মাণ করা হয়েছে। সেই মাঠে রাতে বয়স্করা খেলাধুলা করন বলে জানান স্থানীয়রা। আর প্রতিদিন বিকেলে স্থানীয় শিশুরা খেলাধুলা করেন। সেই সুবাধে গত শনিবার বিকেলেও শিশুরা খেলাধুলা করছিল। এ সময় পার্শ্ববর্তী খালে পড়ে যায় তোহা মনি। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।



যেভাবে নিখোঁজ হয়েছিল তোহা মনি:


গত শনিবার দুপুরে স্কুল থেকে আসার পর মায়ের সাথে খাওয়া-ধাওয়া করে তোহা মনি। পরে বিকেলে অন্য শিশুদের সাথে সেও বাসার পার্শ্ববর্তী খেলার মাঠে খেলতে যায়। কিন্তু সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে অন্য শিশুরা তোহা মনি পানিতে পড়ে গেছে বলে চিকিৎকার করে। এ সময় দ্রুত পার্শ্ববর্তী বাসার লোকজন ও এলাকার ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। কিন্তু এর আগেই খালের পানিতে তলিয়ে যায় সে। পরে তাকে উদ্ধারে তার বাবা ও এলাকার কয়েকজন লোক খালে নেমে সন্ধান করেন। অপরদিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরাও ঘটনাস্থলে যান এবং উদ্ধার কাজ শুরু করেন।


কিন্তু ওই দিন তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।পরে রাতে উদ্ধার কাজ স্থগিত করে পরদিন সকালে আবার উদ্ধার শুরু করা হয়। এভাবে টানা পাঁচ দিন চলে উদ্ধার কাজ। পরে ষষ্ঠ দিনের অভিযানে তার লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়।



তোহা মনির মামা মো. মোশারফ হোসেন জানান, প্রতিদিনের মত গত শনিবারও তোহা মনি অন্য শিশুদের সাথে বাসার পাশে খালি মাঠে খেলতে যায়। খেলা করতে গিয়ে তাদের একটি বল খালে পড়ে যায়। এ সময় তোহা মনি বলটি তুলতে খালের কিনারায় যায়। এরপর বুঝতে না পেরে ময়লায় ঢাকা একটি জায়গায় পা দেয়। তখনই সে খালে তলিয়ে যায়।


যেভাবে উদ্ধার হয় তোহা মনি:


তাকে উদ্ধারে গতকালও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা কাজ করেন। তবে খালে অতিরিক্ত ময়লা ও আর্বজনা থাকায় উদ্ধার কাজ ব্যহত হয় বলে জানান তারা। পরে সরজমিন ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খালে প্রচুর পরিমাণে ময়লা-আর্বজনা রয়েছে। এমনকি খালের পানি ঘন কালো সিরাপে পরিণত হয়েছে। এতে খাল সংলগ্ন এলাকায় খালের পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়া পানির স্রোত কমানোর জন্য ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী একটি কালভার্টের একপাশে টিন ও কাট দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। আর আশপাশ এলাকায় ময়লা ও আর্বজনাগুলো পরিষ্কার করছেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা।



উদ্ধার কাজে নেতৃত্বদানকারী ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান বিবার্তাকে জানান, পাঁচ দিন থেকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ডুবুরি দল কাজ করছে। প্রতিদিন সকালে উদ্ধার কাজ শুরু হয়। আর সন্ধ্যায় উদ্ধার কাজ স্থগিত করা হয়। তবে খালে ময়লা ও আর্বজনা বেশি থাকায় উদ্ধার কাজ ব্যহত হয়।


তিনি আরো বলেন, প্রতিদিনের মত আজ সকালে উদ্ধার কাজ শুরু হয়। এ সময় তল্লাশি করতে করতে ঘটনাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গিয়ে শিশুটির লাশ পাওয়া যায়। পরে স্থায়ীদের সহযোগিতায় ময়না তদন্ত ছাড়াই পরিবারের সদস্যদের কাছে তোহা মনির লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা।


বিবার্তা/খলিল/উজ্জ্বল/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com