‘আমার উদ্ভাবন, আমার স্বপ্ন’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে শুরু হল জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা “স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ” এর দ্বিতীয় অধ্যায়।
রবিবার আইসিটি টাওয়ারে অনুষ্ঠিত হয় এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর অধীনে “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ শীর্ষক প্রকল্প বা আইডিয়া প্রকল্প” এবং সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর আওতাধীন দেশের শীর্ষস্থানীয় তরুণদের প্ল্যাটফর্ম ‘ইয়াং বাংলা’ এর সহযোগিতায় এই উদ্যোগটি আয়োজিত হচ্ছে।
এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হল দেশের অগ্রগতি এবং উন্নয়নে অবদান রাখতে যাদের উদ্ভাবনী পরিকল্পনা আছে এমন তরুণ উদ্যোক্তা খুঁজে বের করা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি।
তিনি বলেন, বিশ্ব বর্তমানে তারুণ্যের সংকটে রয়েছে। আমরা সেখানে দারুণ এক অবস্থানে রয়েছি। আমাদের দেশের ৭ কোটির বেশি মানুষ বর্তমানে প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে লেখা পড়া করছে। প্রতি বছর কর্মক্ষেত্রে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ২০ লাখ মানুষ। এখন আমাদের লক্ষ্য, তারুণ্যের শক্তিকে কিভাবে বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতে আমরা ব্যবহার করতে পারব। কিন্তু এত মানুষ যদি শুধু চাকির করে, তাহলে সরকারি বা বেসরকারি কোন উদ্যোগেই কর্মসংস্থান প্রদান করা সম্ভব হবে না।
প্রিতমন্ত্রী বেলন, ইনক্লুসিভ ডেভলোপমেন্টে আমরা বর্তমানে এগিয়ে। এটা ইকোনমিকাল ফোরামের দাবি। বিগত ১০ বছর যাবত আমাদের জিডিপি ৬ শতাংশের বেশি। এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ৮ শতাংশ জিডিপি। বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের তৈরি করা এক প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে প্রায় ৫ কোটি মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরি হয়েছে যারা নতুন স্মার্টফোন কিনতে চায়, রেফ্রিজারেটর কিনতে চায়। উন্নত জীবনযাপন করতে চায়। আমাদের দেশের যে প্রয়োজন তা মেটাতে পণ্যের দরকার। এই পণ্য কোথা থেকে আসবে। একটা হতে পারে বিদেশী পণ্য দিয়ে এই চাহিদা পূরণ হবে, নয়ত দেশে এই পণ্য তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের মানুষকে সেই পণ্য সরবরাহ করবে। এখন আপনারা কি চান? আমরা কি বিদেশ নির্ভরশীল হব, নাকি আত্মনির্ভরশীল হব। যে সকল দেশ স্বল্প সময়ে উন্নতি করেছে তারা প্রত্যেকে নিজ দেশের নাগরিকদের চাহিদা পূরণের জন্য পণ্য তৈরি করেছে এবং সেই পণ্য বিদেশে রফতানি করেছে।
বিশ্বের সেরা উদ্যোক্তাদের কথা উল্লেখ করে পলক বলেন, বিল গেটস থেকে শুরু করে মার্ক জাকারবার্গ যার কথাই বলেন, তাদের ইনোভেশনগুলো শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় এসেছে। আর সে কারণেই আইডিয়া প্রকল্প থেকে আমরা 'স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ' এই থিম নিয়ে কাজ শুরু করেছি গত বছর থেকে। গত বার ২ হাজার ২০০টি আবেদন পেয়েছিলাম আমরা। এতগুলো স্বপ্ন। গতবারের সেই সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এটি আমাদের দ্বিতীয় আয়োজন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এর সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তারণ্যেই শক্তি। বাংলাদেশ সরকার ও আইসিটি মন্ত্রণালয় আছে তারণ্যের পাশে। তারণ্যকে নিয়েই সমৃদ্ধশালী হবে বাংলাদেশ ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর সহোযোগী সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদ বলেন, ইয়াং বাংলা দেশের তরুণদের জন্য কাজ করছে ২০১৪ সাল থেকে। তারুণ্যের সর্ববৃহৎ এই প্লটাফর্মের মূল লক্ষ্য দেশের তরুণদের কর্মক্ষম করে তুলতে উৎসাহিত করা এবং দেশ গঠনে তাদের উদ্যোগগুলোকে অনুপ্রাণিত করা। সেই লক্ষ্যেই আইডিয়া প্রকল্পের সাথে 'স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ' প্রতিযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছে ইয়াং বাংলা। দেশের তরুণদের অনেক উদ্যোগ অনেক স্বপ্ন রয়েছে। শিক্ষা জীবনে তাদের নেয়া এ সকল উদ্যোগ ও স্বপ্নকে গুরুত্ব দিয়ে কাজা লাগাতে স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব। তিনি বলেন, আইটি ও আইটিএস মার্কেট বিশাল এবং এখানে অফুন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। আমরা একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে চলেছি যেখানে উদ্যোক্তা তৈরি হবে, উদ্ভাবন হবে এবং এটি বাংলাদেশকে একটি অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ শীর্ষক প্রকল্প বা আইডিয়া প্রকল্প- এর পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) সৈয়দ মজিবুল হক আইডিয়া প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, স্টার্টআপ ইনকিউবেশন এবং স্টার্টআপদের উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি করার মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও ফান্ডিং করা হবে আইডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে। একই সাথে “স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ: অধ্যায় ২” এর কার্যক্রমটির সফলভাবে সমাপ্তকারী টিমগুলো দেশের পরবর্তী সফল এবং বৃহৎ স্টার্টআপ হবে বলেও তিনি আশা করেন। তিনি সকল শিক্ষার্থীদের তাদের উদ্ভাবন নিয়ে উক্ত “স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ’’ প্লাটফর্মে অংশগ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করেন।
সারাদেশের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। এ ছাড়াও দেশের ১০০টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত বুথের মাধ্যমেও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। ‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ’ এর দ্বিতীয় অধ্যায়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার থেকে শুরু হয়।
প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য ২৫ টি ভেন্যু থেকে ৭৫ টি প্রকল্প বাছাই করা হবে। সেখান থেকে বিজয়ী ১০ টি স্টার্টআপের প্রতিটিকে ১০ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেয়া হবে । সেই সঙ্গে শীর্ষ ৩০-এ থাকা অপর ২০ স্টার্টআপও রানারআপ হিসেবে আইডিয়া প্রকল্প থেকে গ্রুমিং ও বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পাবে।
প্রশিক্ষণ শেষে স্টার্টআপগুলো প্রস্তুত হলে তাদের জন্যও অনুদান প্রদান করবে আইডিয়া প্রকল্প। ‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ’ এর দ্বিতীয় অধ্যায়ে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য ভিজিট করতে হবে- www.s2s.startupbangladesh.gov.bd এছাড়া নিবন্ধনের লিংকটি স্টার্টআপ বাংলাদেশ এর ওয়েবসাইটেও (www.startupbangladesh.gov.bd ) পাওয়া যাবে।
এর আগে গত মে ২০১৯- এ “স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ” এর প্রথম অধ্যায় সফলভাবে সম্পন্ন হয় যেখানে মোট ৩০ টি স্টার্টআপ আইডিয়া প্রকল্পের অফিসিয়াল 'সিলেকশন কমিটি'র মুখোমুখি হয়। সবশেষে বিজয়ী হিসেবে সেরা ১০ টি স্টার্টআপকে ১০ লক্ষ টাকা করে সরাসরি অনুদান প্রদান করার পাশাপাশি বাকি ২০ টি স্টার্টআপকে গ্রুমিং এর জন্য নির্বাচিত হয়।
এবার বাছাইকৃত ভেন্যুগুলো হলো- চট্টগ্রাম-১ (চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), চট্টগ্রাম-২ (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), রাঙ্গামাটি (রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), রাজশাহী (রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), দিনাজপুর (হাজী মুহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), রংপুর (বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়), সিলেট (শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), যশোর (যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), খুলনা (খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), কুষ্টিয়া (ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়), বরিশাল (বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়), পটুয়াখালী (পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), নোয়াখালী (নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), পাবনা ( পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), কক্সবাজার (কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি), নাটোর (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), ঢাকা দক্ষিণ (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), ঢাকা নর্থ (ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ), গাজীপুর (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়), ময়মনসিংহ (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), টাঙ্গাইল (মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), গোপালগঞ্জ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), কুমিল্লা (কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়) ও ফেনী (ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়)।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও এর আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাগণ এর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অংশগ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। এছাড়াও প্রায় ১০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ও দেশের শীর্ষস্থানীয় তরুণদের প্ল্যাটফর্ম ‘ইয়াং বাংলা’ এর ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডরগণ এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে।
বিবার্তা/উজ্জ্বল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]