নবজাতক থেকেই শুরু হোক দীনমুখী শিক্ষা
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৩
নবজাতক থেকেই শুরু হোক দীনমুখী শিক্ষা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

শিশু হলো একটি নিষ্পাপ, নির্মল ও কোমল হৃদয়ের প্রতীক। শৈশবেই তার হৃদয়ে যেটি রোপণ করা হবে, সেটিই ভবিষ্যতে তার চিন্তা, চরিত্র ও জীবনধারার ভিত্তি হয়ে দাঁড়াবে। তাই ইসলাম প্রথম বয়স থেকেই শিশুদের মধ্যে ঈমান, আখলাক, ও দ্বীনি শিক্ষা গাঁথার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।


মান ও তাওহিদের শিক্ষা শৈশবেই দিন


আল্লাহ তাআলা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ও নিজেদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। (সুরা তাহরিম:৬) ইবনু আব্বাস রা. বলেন, এর অর্থ হলো, তাদেরকে দ্বীনের শিক্ষা দাও এবং আদব শিখাও। (তাফসিরে কুরতুবি)


নবজাতক থেকেই দীনমুখী শুরু হোক


রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, مَنْ وُلِدَ لَهُ مَوْلُودٌ فَأَذَّنَ فِي أُذُنِهِ الْيُمْنَى وَأَقَامَ فِي الْأُذُنِ الْيُسْرَى، لَمْ تَضُرَّهُ أُمُّ الصِّبْيَانِ যার সন্তান জন্ম নেয়, সে যদি তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেয়, তবে কোনো শয়তান তাকে ক্ষতি করতে পারবে না। (বাইহাকি শুআবুলি ঈমান:৮৭৩৯) এটি শিশুকে জন্ম থেকেই ইসলামের বার্তা শোনানো এবং আল্লাহর স্মরণে তার জীবন শুরু করার শিক্ষা দেয়।


ভাষা শেখার বয়সে দ্বীনি বীজ বপন করুন


শিশু যখন ভাষা শেখে, তখনই তার মনে যা গাঁথা হয়, তা সারাজীবন রয়ে যায়। তাই এই সময়েই তাকে শেখান। আল্লাহ এক, তিনি ছাড়া উপাস্য নেই, আমার রসুল মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি মুসলিম, আমার নামাজ, আমার কুরআন, শিশুকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ শেখানো। (বায়হাকি শুআবুল ঈমান: ৮৬১১)


ইসলামি আদব ও শিষ্টাচার শেখানো


রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, مَا نَحَلَ وَالِدٌ وَلَدَهُ نَحْلًا أَفْضَلَ مِنْ أَدَبٍ حَسَنٍ কোনো পিতা তার সন্তানকে উত্তম আদবের চেয়ে উত্তম কিছু দান করেনি। (সুনানুত তিরমিজি:১৯৫২) যেমন সালাম দেওয়া, বড়দের সম্মান করা, খাবারের আগে-পরে দুআ পড়া, খাবারের সময় ডান হাত দিয়ে খাওয়া, মিথ্যা না বলা, ইত্যাদি।


নামাজের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করা


مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও। (সুনানু আবি দাউদ:৪৯৫) ৭ বছর বয়স থেকে নামাজের প্রতি অভ্যাস করানো এবং ১০ বছর বয়সে কঠোরভাবে তাগিদ দেওয়া উচিত।


কুরআনের সাথে শিশুকে সম্পৃক্ত করা


তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে নিজে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শেখায়। (সহিহ বুখারি:৫০২৭) শিশুকে ছোট ছোট সুরা, দুআ এবং প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট কুরআন শেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।


দ্বীনদার পরিবেশ ও দ্বীনদার বন্ধু বান্ধব


শিশুর মানসিক গঠনে পরিবেশ সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। মানুষ তার বন্ধুদের দ্বীন অনুযায়ী হয়। তাই প্রত্যেকে দেখুক, সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে। (সুনানুত তিরমিজি:২৩৭৮) ইসলামি পরিবেশ, নেক কারীদের সাহচর্য এবং দ্বীনি গল্প নবিদের কাহিনী তার অন্তরে আল্লাহভীতি ও নেকির প্রতি আগ্রহ তৈরি করবে।


দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করা


رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী বানাও। (সুরা ইবরাহিম:৪০) সন্তানকে দ্বীনদার বানাতে চাইলে নিয়মিত দুআ করুন।


শৈশব মানে হলো একটি জমির মতো। আপনি যেমন বীজ বপন করবেন, সেভাবেই ফলাফল পাবেন। শিশুকে যদি ছোটবেলা থেকেই ঈমান, আখলাক ও ইবাদতের শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে সে বড় হয়ে ইসলামের আদর্শ বাহক হবে। আর তা না হলে সে সমাজের ঢেউয়ে ভেসে যাবে। আমরা আমাদের সন্তানদের শৈশবেই দ্বীন শেখাই, ইসলামি চরিত্র গড়তে সাহায্য করি এবং কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি।


বিবার্তা/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com