হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও দোয়া
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪৫
হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও  দোয়া
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ইসলামে হারাম কোনও কিছু গ্রহণীয় নয়। তাই হালাল উপার্জন জরুরি। ইবাদত কবুল হওয়ার জন্যও হালাল উপার্জন গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে কোনও পেশাকে ছোট করা হয়নি। পৃথিবীতে যে যত পরিশ্রমী সে তত বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।


প্রখ্যাত সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রসুল সা. বলেছেন, ‘তোমাদের কারও পক্ষে এক বোঝা লাকড়ি সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে নেওয়া কারো কাছে চাওয়ার চেয়ে উত্তম। কেউ দিতেও পারে, না-ও দিতে পারে।’ (বুখারি ২০৭৪)


হালাল উপার্জন করার জন্য রসুল সা. সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। নিজেও ব্যবসা-বাণিজ্য করে উপার্জন করেছেন। উম্মতকেও হালাল উপার্জনের তাগিদ দিয়েছেন। দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন।


اللهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ،وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ উচ্চারণ: আল্লাহু লাতিফুম বি-ইদিহি ইয়ারজুকু মাই ইয়াশায়ু ওয়া হুয়াল ক্ববিউল আজিজ। অর্থ: আল্লাহ নিজ বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ, যাকে ইচ্ছা তিনি রিজিক দেন, তিনি শক্তিশালী, পরাক্রান্ত । (সুরা: আশশুরা ১৯)
ঋণ থাকলে পরিশোধ হয়ে যাবে, আর হালাল উপার্জনের তাওফিক পাবে এ দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করলে।
اَللّهُمَّ اكْفِنِى بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَاغْنِنِى بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ উচ্চারণ: আল্লাহুম মাকফিনি-বিহালালিকা ‘আন হারামিকা ওয়াগনিনী- বিফাদ্বলিকা ‘আম্মান ওয়াকা। অর্থ: হে আল্লাহ! হালাল কামাই যেন আমার জন্যে যথেষ্ট হয় । হারামের যেন দরকারই না হয়। আর তোমার অনুগ্রহের মাধ্যমে আমাকে অভাবমুক্ত কর, যাতে অন্য কারও মুখাপেক্ষী হতে না হয়। (তিরমিজি)
হালাল উপার্জন কাকে বলে?


হারাম বা অন্যায়ভাবে যে অর্থ উপার্জন করা হয় তাকেই হারাম উপার্জন বলে। শরিয়তের বিধি-বিধান অনুযায়ী হালাল-হারামের অবস্থান স্পষ্ট। কী কাজ করলে হারাম হবে কী কাজ করলে হালাল হবে এ বিষয়গুলো কোরআন, হাদিস অথবা ধর্মীয় স্কলারদের থেকে জেনে নিতে হবে। কোনও খটকা থাকলে শরিয়াহ জ্ঞানে জ্ঞানী ‍মুফতি থেকে জেনে নিতে হবে।


আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর সবার জন্যই তাদের আমল অনুসারে মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ যেনও তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিতে পারেন। আর তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা: আহকাফ ১৯)
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা. শ্রমকে ভালোবাসতেন। যিনি সব নবীর সরদার হয়েও নিজ হাতে জুতা মেরামত করেছেন, কাপড়ে তালি লাগিয়েছেন, ছোটবেলায় মাঠে মেষ চরিয়েছেন। নবীজি সা. ব্যবসা পরিচালনাও করেছেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. খন্দকের যুদ্ধে সাহাবাদের সঙ্গে নিজে পরিখা খনন করেছেন। বাড়িতে আগত মুসাফির কর্তৃক বিছানা অপবিত্র করে রেখে যাওয়ায় নিজ হাতে তিনি তা ধৌত করে মানবতা ও শ্রমের মর্যাদাকে সর্বোচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পরিশ্রমের গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী সা. বলেন, কিছু গুনাহ এমন আছে, যা হালাল রিজিক উপার্জনের চিন্তা ছাড়া মাফ হয় না। (তাবারানি, মুজামুল আওসআত ১০২)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, অন্যান্য ফরজ কাজ আদায়ের সঙ্গে হালাল রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা গ্রহণ করাও একটি ফরজ। (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান)


হে মানবজাতি। পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে তা হতে তোমরা খাও ও শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্যে শত্রু (সুরা: বাকারা ১৬৮)।
আল্লাহর রসুল সা হালাল রোজগারের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। হাদিসে এসেছে হযরত যুবায়ের ইবনুল আওয়াম রা. বলেন, হযরত রসুল সা. ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ তার রশি নিয়ে চলে যাক, পিঠে কাঠের বোঝা বহন করে এনে তা বিক্রি করুক এবং তার চেহারাকে আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা করুক।
এটা তার জন্য মানুষের কাছে ভিক্ষা করার চেয়ে উত্তম। চাই তাকে দান করুক বা না করুক (মুসলিম) রসুল সা. বলেন, ‘কেয়ামতের ময়দানে বনু আদমকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে। সেই পাঁচটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত কোনো মানুষ অর্ধ হাত পরিমাণ সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। তার মধ্যে একটি হলো-সে কোন পথে উপার্জন করেছে।’ (তিরমিজি)।
হালাল উপার্জন
হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, 'আল্লাহ তাআলা স্বয়ং পবিত্র এবং কেবলমাত্র পবিত্র বস্তুই তিনি গ্রহণ করে থাকেন।' আর আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে রসুল! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে খাদ্য গ্রহণ কর এবং নেক আমল কর। (অনুরূপভাবে) তিনি মুমিনদেরকে বলেছেন,
'হে ঈমানদারেরা! আমার দেয়া পবিত্র খাদ্য থেকে আহার গ্রহণ করো। এরপর নবী করিম সা. এমন এক ব্যক্তির প্রসঙ্গ বললেন, যে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ধুলি-মলিন অবস্থায় (কোন পবিত্র স্থানে উপস্থিত হয়ে) দু'হাত আকাশের দিকে তুলে (দোয়া করে) হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! অথচ তার খাদ্য, পানীয় ও লেবাস সবকিছু হারাম। এমনকি সে এ পর্যন্ত হারাম খাদ্যে জীবন ধারণ করেছে। সুতরাং তার দোয়া কিভাবে কবুল হবে!


এ হাদিসে মুমিনদেরকে হালাল উপায়ে উপার্জিত পবিত্র ও শরিয়ত অনুমোদিত খাদ্য গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com