কিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদণ্ড
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৫১
কিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদণ্ড
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

তিরমিজি, হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার দুইজন ক্রীতদাস আমাকে মিথ্যাবাদী বলে, কাজে ফাঁকি দেয়, আমার আদেশ অমান্য করে। এ কারণে আমিও তাদের গালিগালাজ করি, মারপিট করি। আমার ও তাদের মাঝে ইনসাফ হবে কিভাবে?


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের অবাধ্যতা, কাজে ফাকিবাজি ওজন করা হবে। এরপর তোমার গালিগালাজ ও মারপিট ওজন করা হবে। তোমার শাস্তি ও তাদের অপরাধ সমান সমান হলে ব্যাপার মিটমাট হয়ে যাবে। আর তোমার শাস্তি তাদের অপরাধের তুলনায় কম হলে তা তোমার অনুগ্রহ বলে গণ্য হবে। আর যদি অপরাধের তুলনায় বেশি হয়, তবে বাড়াবাড়ি প্রতিশোধ ও প্রতিদান গ্রহণ করা হবে।


লোকটি একথা শুনে কান্নাকাটি শুরু করলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি কোরআনের এই আয়াত পাঠ করনি,


وَ نَضَعُ الۡمَوَازِیۡنَ الۡقِسۡطَ لِیَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ فَلَا تُظۡلَمُ نَفۡسٌ شَیۡئًا ؕ وَ اِنۡ کَانَ مِثۡقَالَ حَبَّۃٍ مِّنۡ خَرۡدَلٍ اَتَیۡنَا بِهَا ؕ وَ کَفٰی بِنَا حٰسِبِیۡنَ و نضع الموازین القسط لیوم القیمۃ فلا تظلم نفس شیئا و ان کان مثقال حبۃ من خردل اتینا بها و کفی بنا حسبین


আর কিয়ামতের দিন আমি ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। কারো কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট। (সূরা আম্বিয়া, (২১) আয়াত, ৪৭)


লোকটি বললো এখন তো আমার তাদের মুক্ত করে দেওয়া ছাড়া এই হিসাবের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই। (কুরতুবি, তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৮৩)


হজরত সালমান রা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমল ওজন করার জন্য এতো বড় ও বিস্তৃত দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে যে, এতে আকাশ ও পৃথিবীকে ওজন করতে চাইলে তারও সংকুলান হবে। (মাযহারী, মুস্তাদরেকে হাকেম)


আমলনামা দেখতে কেমন হবে - এ বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে, ফেরেশতাদের লিখিত আমলনামা ওজন করা হতে পারে অথবা এমনও হতে পারে যে, আমলগুলোকে স্বতন্ত্র আকৃতি দিয়ে সেগুলোর ওজন করা হবে।


হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দাঁড়িপাল্লায় একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবেন এবং প্রত্যেক মানুষকে সেখানে উপস্থিত করা হবে। যদি সৎকাজের পাল্লা ভারি হয় তবে ফেরেশতা ঘোষণা করবেন, অমুক ব্যক্তি সফল হয়েছে। সে আর কোনোদিন ব্যর্থ হবে না। হাশরের মাঠে উপস্থিত সবাই এই ঘোষণা শুনবে। এর বিপরীতে অসৎ কাজের পাল্লা ভারি হলে ফেরেশতা ঘোষণা করবেন, অমুক ব্যক্তি ব্যর্থ ও বঞ্চিত হয়েছে। সে আর কোনোদিন সফল হবে না।


হজরত হুজায়ফা রা. বলেছেন যে, দাঁড়িপাল্লার দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা আর কেউ নয়- হজরত জিবরাঈল আ.।


হজরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিগেস করলাম, কিয়ামতের দিন কি আপনি আপনার পরিবারের লোকদের স্মরণ করবেন? তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন তিন জায়গায় কেউ কাউকে স্মরণ করবে না।


১. যখন আমল ওজন করার জন্য দাঁড়িপাল্লা সামনে উপস্থিত করা হবে, তখন ভালো-মন্দ ফলাফল না জানা পর্যন্ত কেউ কারো কথা স্মরণ করবে না।


২. আমলনামা ডান অথবা বাম হাতে আসার বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কারো কথাই কারো মনে থাকবে না। ডান হাতে আমলনামা এলে মুক্তির লক্ষণ আর বাম হাতে এলে আজাবের লক্ষণ।


৩. পুলসিরাতে ওঠার পর তা সম্পূর্ণ পার না হওয়া পর্যন্ত কেউ কাউকে স্মরণ করবে না। -(মাযহারী, মুস্তাদরেকে হাকিম, বায়হাকী)


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com