বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও আমাদের করণীয়
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৩, ১৬:০৩
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও আমাদের করণীয়
সাফওয়ান কবির প্রভাত
প্রিন্ট অ-অ+

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। এটি এমন নয় যে কেবলমাত্র তাপমাত্রা বাড়ছে, সেই সাথে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে এবং আবহাওয়াও প্রতিকূল হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে এই শতাব্দীর মধ্যে পৃথিবী আর বাসযোগ্য থাকবে না। 


সম্প্রতি কানাডার দক্ষিণ-পশ্চিম রাজ্যের একটি গ্রামে রেকর্ড করা তাপমাত্রা ছিল ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তুলনামূলকভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের এই বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা ছিল নাটোরের লালপুরে। কানাডা বিশ্বের শীতলতম দেশগুলির মধ্যে একটি যার গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৪-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপপ্রবাহের ফলে সেই স্থানে  ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, গবাদি পশু ও মানুষের মৃত্যু এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে যায়। এসবই ঘটছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন-এর জন্য। 


বিপর্যয়কর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন শুরু হয়েছিল ইউরোপের রেনেসাঁ বিপ্লবের পর। এরপর দ্রুত গতিতে শিল্পকার্য  বিস্তৃত হতে থাকে। বিদ্যুতের উদ্ভাবন বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে অন্য স্থানে নিয়ে যায়। ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে সারা বিশ্বে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আরো বৃদ্ধি পায়। বিজ্ঞানী মিকেল মান এর গবেষণা অনুসারে, ১৯৬০ সালের তুলনায় তাপ তরঙ্গের ঘনত্ব এখন তিনগুণ বেড়েছে। গত ২৩ বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। 


বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সারা বিশ্বে একটি বড় প্রভাব ফেলেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটছে, উপকূলের দেশগুলো পানির নিচে চলে যাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন শুধুমাত্র তাপমাত্রা বৃদ্ধি নয়, এটি অন্যান্য ঋতুতেও প্রভাব সৃষ্টি করে। তার মানে গ্রীষ্মে জ্বলন্ত তাপ থাকবে, আর শীতকালে হিমশীতল ঠাণ্ডা থাকবে। আবহাওয়ার কোনো ভারসাম্য থাকবে না। পৃথিবীর এক স্থানে প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা হবে এবং অন্য স্থানে প্রবল খরা হবে। প্রতি বছর, মেরু অঞ্চল থেকে 150 বিলিয়ন টন বরফ গলে যাচ্ছে। গত 30 বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় 12 ইঞ্চি বেড়েছে। খাদ্য শৃঙ্খল ধ্বংস হচ্ছে, বন পুড়ে যাচ্ছে। এগুলো গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য। 


আমরা অনেকেই মনে করি যদি আমরা এখনই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেই তাহলে ভবিষ্যতে  বৈশ্বিক উষ্ণায়ন থেকে আমরা নিরাপদ থাকতে পারব। কিন্তু ধারণাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। এই বিপর্যয় সম্পর্কে আমাদের আরো ২০ বছর আগে সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিলো। তবে এখন  থেকে আমরা যদি জীবাশ্ম জ্বালানির (কয়লা, ডিজেল, পেট্রোল) ব্যবহার বন্ধ করি, কার্বন নিঃসরণকারী যানবাহনের পরিবর্তে সাইকেল,ব্যাটারি চালিত যানবাহন ব্যবহার করা শুরু করি, কম পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ করি, বেশি বেশি গাছ লাগাই, তাও এর প্রভাব নগণ্য পরিমাণে কমবে। এজন্য  সরকারের পাশপাশি দেশের জনগণের কিছু উদ্যোগ নেওয়া উচিত  যার ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কার্বন নিঃসরণকারী পণ্য ব্যবহারে মানুষকে নিরুৎসাহিত করা। এছাড়াও, কার্বন ট্যাক্স ( জ্বালানি ব্যবহারের ফলে নির্গত কার্বনের উপর ধার্যকৃত ট্যাক্স/কর) থাকা উচিত যার জন্য কোম্পানিগুলিকে কার্বন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা যাবে। গ্রিন শক্তি ব্যবহারে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে যেমন সৌর শক্তি, ইলেকক্ট্রিক যান ইত্যাদি। এটি ভবিষ্যতে পরিবেশে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। 


মানবদেহে তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি বড় প্রভাব রয়েছে। কিন্তু অনেক মানুষ মরুভূমিতে ৬০+ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়  বেঁচে আছে। কিন্তু ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রায় সুস্থ বা অসুস্থ সব ধরনের মানুষ  মৃত্যুবরণ করতে পারে। যদি আর্দ্রতা ১০০% হয় এবং তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয় তবে মানুষ হঠাৎ মারা যাবে কারণ, আমাদের শরীর গরম হলে ঠান্ডা করার জন্য পানি ছেড়ে দেয় যাকে ঘাম বলে। কিন্তু বাতাসে আর্দ্রতা ১০০% হলে, সেই ঘাম ধরে রাখার জন্য বাতাসে কোন জায়গা থাকবে না। এর জন্য, ঘামের গ্রন্থি বন্ধ হয়ে যাবে। যদি তাপমাত্রা সেই সময়ে ৩৫ ডিগ্রি বা তার বেশি হয় তবে আমাদের শরীর শীতল হবে না যার জন্য আমরা হিট স্ট্রোক  বা শরীরের অন্যান্য জটিলতার জন্য মারা যাব। একে ওয়েট বাল্ব তাপমাত্রা বলা হয়। 


অনেকেই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এর খারাপ দিক সম্পর্কে জানেন কিন্তু তা অবহেলা করেন। তারা মনে করেন আমাদের ছোট পর্যায় থেকে এটা বন্ধ করা সম্ভব না। কিন্তু আমাদের ত্যাগই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের  সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে। এই পৃথিবীতে হয়তো আমরা এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কেবল বেঁচে থাকতে পারি। তাদের পরে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য মানব সভ্যতা ধ্বংস হবে। সুতরাং, গাছ লাগান, কার্বন নিঃসরণ  বন্ধ করুন এবং আপনার পরবর্তী প্রজন্মের ভাল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন। 


লেখক : সাফওয়ান কবির প্রভাত,
৮ম শ্রেণি, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com