হাজারো মাইলের যাত্রা শুরু হয় একটি মাত্র পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে। রাজনীতির অঙ্গনে অসংখ্য মানুষের পদচারণা। কেউ কেউ একটি করে পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে রাজনীতির হাজার মাইল পথ অতিক্রম করেও হতাশায় নিমজ্জিত আবার কেউ কেউ বিনা পরিশ্রমে হাজার মাইল পথ এক লাফেই অতিক্রম করে ফেলে অদৃশ্য আশীর্বাদে। অসংখ্য ত্যাগী মেধাবী ছেলে-মেয়েরা রাজনীতি করতে এসে নিজের জীবনকে বাজি রেখেছেন। কিন্তু দিন শেষে ঘরে ফিরেছেন খালি হাতে। রাজনীতি আর হতাশা, অনিশ্চয়তা এক সাথে পথ চলে অনেক ত্যাগীদের জীবনে অভিমান থাকলেও প্রকাশ করে না। শুধু দেখে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
যে দলটির জন্য এতো ত্যাগ, এতো রক্ত, এতো তাজা প্রাণ ঝরে গেল সেই দলে দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের দৌরাত্ম সত্যি আতঙ্কিত করে তোলে আমাদের। সব অর্জন যদি ভেস্তে যায় ওই লুটেরাদের কারণে তাহলে হয়ত জীবন যৌবনের যে গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলো দলের পেছনে অতিবাহিত করেছিলাম তার জন্য শুধু আফসোস-ই থেকে যাবে। এই অভাগাদের উদ্দেশ্যই হয়তো কবি মহাদেব সাহা বলেছিলেন" একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কি গভীর দীর্ঘশ্বাস বয়ে বেড়ায়, কেউ জানে না; একেকটি মানুষ নিজের মধ্যে কিভাবে নিজেই মরে যায়, হায়, কেউ জানে না" বঙ্গবন্ধুর আদর্শের উত্তরাধীকারীদের প্রজন্ম আমরা। অন্যায়, অনাচার দেখে চুপ থাকাটা আমাদের প্রজন্মের সাথে যায় না।
এই দেশে অসংখ্য বার বিপর্যয় এসেছে প্রত্যেকটার পেছনে লুটেরাদের কর্মকাণ্ড বহুলাংশে দায়ী। বঙ্গবন্ধুকে সেদিন যেমন দূর্নীতিবাজদের হটাতে কেউ সহযোগীতা করেনি তেমনি আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও কেউ সহযোগীতা করছে বলে মনে হয় না। না সরকারের বাহিরে। খোঁজ নিয়ে হয়তো জানা যাবে তাদের অনেকের নামের উপর অভিযোগ আছে অনিয়মের। তাহলে এই যুদ্ধে জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সারথী কারা? দুর্দিনে যারা দলটার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে তাদের কে কোথায় এখন আছে, কি করছে, কেমন আছে এই খবর কেউ কি নিয়েছে? একটা বৃহৎ অংশই আজ অভিমান করে দূরে সরে আছে। তেলবাজী, চাটুকারীতা তারা করতে জানে না সেজন্য তাদের কদরও কারো কাছে নেই। মাননীয় নেত্রী দুর্দিনের কর্মীদের কথা বার বার স্মরণ করলেও বাস্তবে তাদের খবর অন্য কেউ নেয় না।
দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকার সুবাদে দেশের যেমন উন্নয়ন হয়েছে দলের ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্র ধারণ করেছে। অতি আমলাপ্রীতিও দলকে করেছে নড়বড়ে। রাজনীতি ব্যবসায়িক রূপ ধারণ করেছে। সবাই নৌকার বৈঠা ধরতে চাই। শুরু হয়েছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা।আদর্শিক, কর্মীবান্ধব, মুক্তমনা সংস্কৃতি সচেতন রাজনীতি হারিয়ে যাচ্ছে।
ত্যাগ, তিতিক্ষা আর দীর্ঘ সংগ্রাম, সাধনার রাজনীতি যারা কুলুষিত করছে তাদের চিহ্নিত করা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ের কয়েকটি আলোচিত ঘটনা অধিকতর চোখে পড়ার মত। সরকার ও দলের উচিৎ হবে এগুলির সমূলে উপড়ে ফেলা।
মিঠু, শাহেদ, পাপিয়া, জিকে শামিম ও তাদের প্রশ্রয় দাতাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে ভবিষ্যৎ পরিণাম অধিকতর ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। সাম্প্রতিক সময়ে একাত্তর টিভিতে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহল হকের বিবৃতিতে সরকার ও দলের দৈন্যদশার-ই বহিঃপ্রকাশ পায়। উনি বিবৃতিতে বলেছেন মিঠুরা নাকি মন্ত্রীর চেয়েও শক্তিশালী! মন্ত্রী বানায় মন্ত্রী সরাই! এরকম বক্তব্য রাজনীতিবিদদের হতাশ-ই করে। তারমানে এই দালাল কুচক্রীদের কাছে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান গুলি জিম্মি থাকবে? এরা রাষ্ট্রের চেয়েও শক্তিশালী? এই কুচক্রী দালাল মহলের পৃষ্ঠপোষকদের খুঁজে বের করে জাতির সামনে উন্মোচন করতে হবে। ওরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে কেন, কোথায় তাদের পাজরের শক্তি এই রহস্য বের করতে হবে।
শত অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ পাড়ি দিয়ে সুদীর্ঘকাল রাজনীতিতে টিকে থাকা নির্যাতিত কর্মিরা গণভবনে যেতে না পারলেও হাইব্রিড দালালচক্রের পদচারণা চোখে পড়ার মতন। যারা ওদের সুযোগ করে, বিভিন্ন ভাবে পদায়ন করে সেই হেড চক্রকে চিহ্নিত করতে হবে।ওদের ইমান-আদর্শ যথেষ্ট সন্দেহজনক। সর্ষের মধ্যই ভূত নাকি অন্যকিছু। ওরাও কি অদৃশ্য ক্ষমতাবান? সব অশুভ সিন্ডিকেটের জনক কারা বের করতে হবে। তা না হলে দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া মরীচিকাই থেকে যাবে। বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার দায়িত্ব এখনই নিতে হবে না হয় বড্ড দেরি হয়ে যাবে।
হাইব্রিড দালাল চক্র ধরা খেলেই চিনিনা, না হয় ওরাই সবচেয়ে আপন এরূপ হাস্যকর বিষয় গুলিও চোখে পড়ছে, মিডিয়ায় মিথ্যা বিবৃতি দিতে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব উন্নয়ন করে যাচ্ছেন ও বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রেখেছেন সবকিছুর অর্জন ও কৃতিত্ব এসব কর্মকাণ্ডে ধুলিসাৎ হচ্ছে। শেখ হাসিনা বিশ্বাস করে যে দায়িত্ব দিয়েছেন সে দায়িত্ব পবিত্রতার সাথে পালন না করে মৌজ মাস্তি, সেহেরি পার্টি, ডিনার পার্টি থেকে বিরত থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মুখে নয় আমাদের বুকে ধারণ করতে হবে।
যতই দিন যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে নিষ্ক্রিয় ও হতাশ নেতাকর্মীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কেন্দ্র থেকে তৃনমূল পর্যন্ত বাড়ছে ক্রমাগত হতাশা। ত্যাগী এবং পরীক্ষিতদের ফিরিয়ে আনতে না পারলে, ধরে রাখতে না পারলে চরম মূল্য দিতে হবে অদূর ভবিষ্যতে।সময় চলে যাচ্ছে হাইব্রিড, আগাছা ছেঁটে ফেলার, তেমনি দলের দুঃসময়ের ত্যাগীদের মূল্যায়ন করার।
শুভ কামনা জীবনভর। ভালো থাকুক প্রাণের সংগঠন, অনুভূতির সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
গোলাম বাকী চৌধুরী
সাবেক ছাত্রনেতা,
সাবেক সদস্য,
কৃষি ও সমবায় উপ-কমিটি,
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
বিবার্তা/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]