শিরোনাম
নিউ নর্মালঃ ভিন্ন এক পৃথিবীতে বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ (পর্ব-২)
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২০, ২০:৫০
নিউ নর্মালঃ ভিন্ন এক পৃথিবীতে বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ  (পর্ব-২)
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

নিউ নর্মালে সম্প্রতি উপভোগ করলাম দর্শকবিহীন জার্মান লীগ। প্রানহীন মনে হয়েছে পুরো খেলাটাকে। মাঠে দর্শক গ্যালারীগুলো শুন্য থাকায় ঐ দিকেই বার বার দৃষ্টি চলে যেতো। চিৎকার চেঁচামিচি, বাদ-প্রতিবাদ ছাড়া ফুটবল জমে? ভেপু, জুজুবেলা আর হরেক রকমের বাঁশীর নন-ষ্টপ কান-ফাটা আওয়াজ ছাড়া কি আর মনে হয় যে এটা ফুটবল খেলা? যে খেলা দেখতে এসে মানুষ তার নিজের জীবন বাজী রাখে? নিজের দলকে মাঠে বসে জিতানোর একটি অদম্য ইচ্ছে নিয়ে ফুটবল-পাগল সমর্থকরা সবকিছু বিলিয়ে দেয় তার পছন্দের টিমের জন্য। মাঠের খেলায় দর্শক হচ্ছে প্রান।
অনেক দুর্বল টিমও মাঠে শুধুমাত্র বিপুল সংখ্যক দর্শকের সমর্থন নিয়ে হারা গেম জিতে আসে। খেলার মাঠে সমর্থকরাই হচ্ছে গেম-মেকার। জীবন-বাজি রেখে খেলায় গোল দেয়ার পর জার্সি খুলে লাখো দর্শকের গ্যালারীতে ছুঁড়ে দিয়ে মেসি, রোনালদো, নেইমাররা কতই না রঙ-ডঙ্গের অঙ্গভঙ্গির অবতারনা করতেন। উম্মাদ দর্শকগন মন্ত্রমুগ্ধের মতো তা উপভোগ করতেন, অনুকরণ করতেন এবং নিজ নিজ পরিমন্ডলে তা আবার চর্চাও করতেন। নিজের টিমকে জিতাতে উত্তেজনায় অন্যের পায়ের তলায় পিষ্ঠ হতে পর্যন্ত এরা পিছ পা হননা। সেই খেলা চার দেয়ালে বন্দী থেকে কি করে উপভোগ করবে মানুষ?


১৩ই জুন থেকে শুরু হচ্ছে স্প্যানিশ লীগ(লা-লিগা), ইটালীয়ান লীগ (সিরি-আ) এবং ১৭ জুন থেকে শুরু হচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ। ইউরোপের ফুটবল প্রিয় মানুষ উপাসনালয়ে যেতে সংকোচ বোধ করলেও ফুটবল হচ্ছে তাদের আরাধনা। মাঠে বসে খেলা উপভোগ করাকে তারা উপসানলয়ের চেয়েও পূণ্যের বলে মনে করে। বাম বায়ে বল ড্রিব্লিং করে ডান পায়ে শর্ট নিয়ে প্রতিপক্ষের জালে বল ছোঁড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাড়া স্টেডিয়াম জুড়ে যে গগন-বিদারী চীৎকার হতো এখন আর তা শোনা যাবে না। ধারাভাষ্যকার আর দর্শকের কন্ঠ একাকার হয়ে আর আমাদের উত্তেজনা বাড়াবে না। দর্শক গ্যালারীতে আর দেখা যাবে না সুন্দরী অর্ধনগ্ন সুপার মডেলদের। যারা প্লেয়ার-পত্নী/সঙ্গী হয়ে মাঠে এসে কেড়ে নিতেন লাখো দর্শকের রাতের ঘুম। দেখা যাবে না মাঠে হলুদ কার্ড, লাল কার্ড দেখানোর দ্বায়ে মারমুখী খেলোয়াড় আর দর্শকের রেফারীর দিকে তেড়ে আসার দৃশ্য। টান-টান উত্তেজনায় উভয় দলের কোচের সীমানা লঙ্ঘন করে মাঠে নেমে পড়ার দৃশ্য স্থান পাবে এখন স্মৃতির পাতায়। প্রিয় টিমের সমর্থনে যেমন খুশী তেমন সাজো ভঙ্গিতে দর্শকদের আর দেখা যাবে না গ্যালারীতে।


ভাবছি আমাদের টাইগাররা যদি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে টাইগার সদৃশ সমর্থকগোষ্ঠী গ্যালারীতে দেখতে না পায় তাহলে খেলবে কি করে? কে শক্তি দিবে মাশরাফি সেনাদের? ম্যাজিক বয় মুস্তাফিজ আর হঠাৎ ঝলসে ওঠা তামিমের চার ছয় হাকানোর পর মাঠের পাল্টে যাওয়া দৃশ্য কে প্রত্যক্ষ করবে এখন? দুর্লভ সব উইকেট বাগানোর পর সাকিব-সাইফরা যদি গ্যালারীর টাইগারদের হুঙ্কারের তালে তাল মিলিয়ে এগিয়ে না যায়, তাহলে প্রতিপক্ষ ঘায়েল হবে কি করে? কি করে ম্যাচটা চমক দিয়ে বের করে আনবে লিটন-মিঠুনরা? কত কথা মনে আসে। হায়রে করোনা তুই এভাবে কেনো কোটি মানুষের হৃদয়ে এমন ন্যাক্কাররজনক আঘাত হানলি? সব কিছু কেনো চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী করে দিলি? এতো গেলো বদলে যাওয়া বিশ্বে খেলার মাঠের পালটে যাওয়া চিত্রের কথা। এবার শিক্ষা- প্রতিষ্ঠানের কথায় আসা যাক।


শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিসে মিটিং-সিটিং নিয়ে এতদিন কারো কোনো সুচিবায়ু ছিল না। কিন্ত এখন সর্বত্র অজানা এক ভয় বিরাজমান। প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় সভা করতে অভ্যস্ত ঊর্ধ্বতন কর্তা-ব্যক্তিদের আসন বদল হয়না। শুধু কমিটির সদস্য বদল হয়। এতে করে তাদের কক্ষের সামনে লম্বা লাইন জমে যায়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা হয়তো এমনটা আর করতে চাইবেন না। প্রতি সভায় কাছাকাছি বসে কাগজ কলম আর গোল হয়ে বসে বক্তব্য প্রদানের রীতি থাকলেও এখন সীমিত হবে সে সুযোগ। ড্রপলেট আতংক কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে সবাইকে। হাঁচি-কাশির আতংক বার বার করোনার কথা মনে করিয়ে দিবে। আগে হাঁচি-কাশিতে কি দারুণ প্রশান্তি ছিল। এখন করোনা সন্দেহের কারনে তা জলাঞ্জলি দিতে হবে।
তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা-পরবর্তীতে করতে হবে সিনেট, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, ফাই্ন্যান্স কমিটি সহ প্ল্যানিং কমিটি ও একাডেমিক কমিটির সকল সভা। সমস্যা হলো, যে অফিস-সহায়ক এতদিন পৃষ্ঠা উল্টে-উল্টে আপনাকে ফাইল স্বাক্ষরে সহায়তা করে এসেছে এখন আর তার সহায়তা আপনার কাম্য নয়। করোনা পরবতী যুগে এসব সার্ভিস-প্রোভাইডার এর আর আপনার দরকার নাও হতে পারে। অনুরুপ, অন্যের হাতে চা-নাস্তা খাওয়াতেও আপনার আপত্তি থাকবে। এসব এখন আপনি নিজেই করে খেতে অভ্যাস্ত হবেন। অফিসের এ অভ্যাস আপনি ব্যক্তি জীবিনেও চর্চা করবেন। ফলে নিজ থেকেই আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন যে করোনা পরবর্তী আপনি মালী, কাজের বুয়া, কিংবা ড্রাইভার এর মতো লোক নিয়োগ দিবেন কিনা? এসবের মাঝে কিছুটা অমানবিকতা থাকলেও করার কিছু নেই। কারণ, নিরাপদে থাকাটা জরুরী।


এবার একনজরে দেখা যাক করোনা পরবর্তী উচ্চ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কি কি পরিবর্তন হতে পারেঃ ১)। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমাতে হবে ফলে বাড়াতে হবে সেকশন। ২)। শ্রেণীকক্ষে সকলকে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করতে হবে ৩)। শিক্ষার্থীদের পকেটে পকেটে থাকতে হবে হ্যান্ডস্যানিটাইজার কিংবা এর বিকল্প হিসেবে প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে সামনে স্থাপন করতে বেসিন এবং রাখতে হবে সাবান পানিতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ৪)। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ঢুকতেই থার্মাল দিয়ে তাপমাত্রা নির্ণয় করতে হবে। ৫)। কমপক্ষে ৫০% ক্লাস পরীক্ষা অন-লাইনে নেয়ার প্র্যাকটিস করতে হবে ৬)। সবচেয়ে বেশী সমস্যা দেখা দিবে ব্যবহারিক ক্লাসে। এমনিতেই অপ্রতুল ইক্যুইভমেন্ট। তার ওপর আবার অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীদের তা অনবরত ব্যবহার করতে হবে। ফলে রিস্ক থেকেই যাবে। অতএব এখানেও পরিবর্তন আনতে হবে।


৭)। মাস্ক পড়ে গলা ফাটিয়ে তিন’শ শিক্ষার্থীসমেত শ্রেণিকক্ষে লেকচার দেয়ার দিন বোধ হয় ইতিহাসের পাতায় স্থান পেতে যাচ্ছে। কারণ এটা অসম্ভব। তাই নিউ নর্মালে এসব টিকবে না। ৮)। সেমিনার লাইব্রেরীতে একসাথে গ্রুপ করে পড়াশোনার ক্ষেত্রেও বিধি নিষেধ আরোপিত হবে। ৯)। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর বই ব্যবহারের ক্ষেত্রে বার বার ক্লিন করার অপশন রাখতে হবে। লাইব্রেরী ব্যবহারের নীতিমালায় যোগ হবে নতুন বিধি-নিষেধ। ১০)। কম্পিউটার ল্যাব বা সাইবার সেন্টার ব্যবহারের নীতিমালাতেও করোনা পরবর্তী পরিবর্তন সময়ের দাবী মাত্র। ১১)। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে আবাসন সমস্যা আরো প্রকট হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসন বণ্টনে কর্তৃপক্ষকে পড়তে হবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।


১২)। ডাইনিং, ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়ার বেহাল অবস্থা জরুরী পরিবর্তন করে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও হাইজিন মেইনটেইন করতে হবে। রন্ধনশালার বর্তমান অবস্থার উন্নয়ন ও তৈজসপত্র ব্যবহারে অধিকতর যত্নবান হতে হবে। করোনা-পূর্ববর্তী উদাহরণ টানা এক্ষেত্রে বিপদ ডেকে আনবে। ১৩)।শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে থাকবে ভয়। তাই শ্রেনীকক্ষের পাঠদান বিতরণ ও গ্রহণে বিঘ্ন ঘটবে দারুণ ভাবে। শ্রেণীকক্ষে ফেস-টু-ফেস শিক্ষা কার্যক্রম আর আগের মতো ইন্টারেক্টিভ হবে না এটা মোটামুটি নিশ্চিত। ১৪)। যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অভিভাবকগন তাদের সন্তানদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে চাইবেন না। যেমনটা সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ঘটেছে। তারা মনে করছে সরকার লকডাউন তুলে নিয়ে খুব তড়িঘড়ি করে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুলে দিচ্ছে। ফলে তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যসেবা হুমকির সম্মুখীন। এমনকি তারা দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের আশঙ্কাও করছে। ১৫)। অবস্থা এমন হতে পারে যে বিমানের যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চালু করার মাত্র ০৩ দিনের মাথায় তা আবার বন্ধ করে দিতে হয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষকে। অনুরুপ, প্রস্ততিবিহীন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খোলা হলে অবস্থা একই হতে পারে।


১৬)। শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ একটি অন্যতম ফ্যাক্টর। শিক্ষকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন গোটা ক্লাসের দু থেকে তিন’শ শিক্ষার্থী। পিছনে বসা শিক্ষার্থীরা অনেক সময় শিক্ষকের লেকচার পুরোপুরি সঠিকভাবে শুনতে পায়না। শিক্ষকের বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ এসময় তার কাছে সেটি বোধগম্য করে তোলে। অথচ এখন মুখোশ পড়ে, চশমা লাগিয়ে, মাথায় ক্যাপ সেঁটে কিভাবে শিক্ষক তার পাঠদানকে সহজবোধ্য করে তুলবেন? ভাববার বিষয়। ১৭)। স্বাস্থ্যবিধি মেনে খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা করতে গেলে হারিয়ে যাবে প্রানচাঞ্চল্য। উপরে এর সামান্য আলোকপাত করেছি। ১৮)। তাছাড়া অরিয়েন্টেশন, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম সহ সকল সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান উদযাপনে থাকবে না আগের সেই প্রান। যেমনটি আমরা দেখেছি করোনা-পরবর্তী এবারের পহেলা বৈশাখ ও ঈদ উদযাপন কতটা আনন্দহীন বিবর্ণ ছিল।


সারকথা, শ্রেণীকক্ষে ফেস-টু-ফেস ক্লাসের বদলে এখন অন-লাইনে ক্লাসটাকেই নিউ নর্মালে পরিনত করতে হবে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে একথা সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, করোনা পরবর্তী সময়ে ক্লাস নেয়ার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই জুম, গুগুলমিট, গুগুল ক্লাসরুম কিংবা এ-জাতীয় কোনো একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বেছে নিতেই হবে। মনে রাখতে হবে বিশ্বের তিন’শ মিলিয়ন মানুষ এখন প্রতিদিন জুম সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। আর যে কাজ এখন গুগুল, ফেসবুক, জুম, সান, হুইপ্রো করছে সেটা যদি আমরা করতে না পারি তাহলে ব্যর্থতার দ্বায়ভার আমাদেরকেই বহন করতে হবে।


করোনাকালীন ঘরে থেকে যারা গোঁফ-দাড়ি রেখেছেন তাদের ৫০ শতাংশই নিউ নর্মালে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত। নারীদের লিপষ্টিক প্রসংগ না এনে পারলাম না। নারীদের সবচেয়ে পছন্দের মেকআপ সঙ্গী হল লিপস্টিক। অন্য কোনও সাজগোজ না করলেও ঠোঁটজোড়া একটু রাঙিয়ে নিতে ভালোবাসেন তারা। কিন্তু এবার সেই ঠোঁটের সাজে বাধ সেধেছে কভিড-১৯। মহামারীর কারণে এখন বাইরে বের হলেই পরতে হবে মাস্ক। তাই অনেকটা বিপাকে পড়েছেন নারীরা। পছন্দের লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙাতে পারছেন না তারা। এই অবস্থায় কমছে লিপস্টিকের ব্যবহার। সেলুন ব্যবসার মতো বিউটি পার্লার ব্যবসায়ও তাই ধ্বস নেমেছে। নিউ নর্মালেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে হয়তো।


বদলে যাবে সব। বদলে যাবে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হকারের হাতে মোবাইল-ফ্লাস্কে চা খাওয়ার অভ্যেস। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এমন চা-পান করেন নি তেমন কেউ থাকলে নিঃসন্দেহে তিনি ব্যতিক্রম। কিন্তু আমি তেমনটা নই। সন্দেহ থাকলেও শুধু জিজ্ঞেস করেই ক্ষান্ত হতাম ফ্লাস্কের চা কফিন থেকে সংগ্রহ করা কিনা? কাপতো শত ভাগ কুঁড়িয়ে পাওয়া এতে কোনো সন্দেহ নেই। ভাবিছি টিএসসি, রমনা আর সোহরোওয়ারদী উদ্যানের ফ্লাস্ক হাতে ঘুরে বেড়ানো ঐ সব চা বিক্রেতাদের এখন ক হবে? বদলে যাবে বয়স্ক রিক্সাওয়ালাদের কামাই-রুজি। কেউ আর তাদের যাত্রী হতে চাইবে না। বদলে যাবে রিক্সায় দু’তিনজন গাদাগাদি করে বসার চিত্র। সন্দেহ আর অবিশ্বাসই এখন নিজেকে সুরক্ষা দেয়ার একমাত্র হাতিয়ার। ক্রেতা-বিক্রেতা, শিক্ষক-শিক্ষারথী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার মাঝেই সর্বত্র বিরাজ করছে অবিশ্বাস, সন্দেহ আর ভয়। নিউ নর্মালে একেই সঙ্গী করে বাচতে হবে। নইলে ভেংগে পড়বে সবকিছু।


আমরা নানা ধরনের মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। রোজই হারিয়ে যাচ্ছে প্রিয়মুখগুলো। শবযাত্রার মিছিল ঘিরে ফেলেছে আমাদের চারিপাশ। পালাবার সব কটি পথ অবরুদ্ধ। ক্ষীন হয়ে আসছে বেঁচে থাকার আশা। স্বাভাবিক মৃত্যু দূরে থাকুক, স্বাভাবিক দাফনেরও সুযোগ নেই এখন। অবস্থা এতটাই নির্মম যে, করোনা-আক্রান্ত মাকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে সন্তান। মৃত বাবার দাফনে আসছে না কেউ। আক্রান্ত স্বামীর শুশ্রূষা দূরে থাক, নিজে বাঁচতে ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে স্ত্রী। মোট কথা, এ যেনো করোনা-আক্রান্তের পিকে নয়, নিষ্ঠুরতার চরম শিখরে পৌছে গেছি আমরা। প্রতিটি সকাল এখন বিভীষিকাময়। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিটি পোষ্ট এখন আতংকের। মন খারাপ হবে তাই দ্রুত ড্রপ-ডাউন করে না দেখার ভান করি। কিন্তু চোখ বন্ধ রাখলেই তো আর প্রলয় বন্ধ হয়ে যাবে না। তাই সাহস রাখতে হবে মনে। ইতিহাস স্বাক্ষ্য দিচ্ছে যতবার বিশ্বে এমন চ্যালেঞ্জ এসেছে, পৃথিবীর মানুষ কোনো না কোনোভাবে তাকে মোকাবেলা করেছে। এবারো করবে। বাংলাদেশের জনগণ সেই লড়াইয়ের বাইরে নয়। আমাদের সামাজিক-বৈজ্ঞানিক বা অর্থনৈতিক সামর্থ্য সীমিত হতে পারে, কিন্তু লড়াই চালিয়ে যাওয়ার উদ্যম ব্যাপক। তাইতো হারিনি কখনো। হারতে শিখিনি। ঘুড়ে দাঁড়াতে দরকার সকলের সম্মিলিত প্রয়াস।


(নোটঃ ১৬ই জুন, ২০ তম বিবাহ-বার্ষিকী উপলক্ষে এ লেখাটি আমার প্রিয়তমা স্ত্রী শিপুকে উৎসর্গ করলাম। যার অনুপ্রেরণা আমাকে সবসময় পথ দেখায়।)


লেখক: প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দীন মিতুল, ডিন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
Email: [email protected]


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com