পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করছে সরকার: ফখরুল
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৪, ১৬:২০
পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করছে সরকার: ফখরুল
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলছে। স্থায়ী কমিটি এই চুক্তিগুলিকে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করে।


২৫ জুন, মঙ্গলবার বেগম জিয়ার অসুস্থতা ও সমসাময়িক ইস্যুতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি এসব কথা বলেন।


তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তা স্বার্থবিরোধী। ভারতকে সব প্রকার সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ আদায় করতে শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন এবং এটা সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বহিঃপ্রকাশ।


বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশি- বিদেশি সংস্থার প্রচেষ্টার পরও পরিবারের আবেদন নাকচ করে দেন সরকারপ্রধান। রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতেই সরকারের এই ষড়যন্ত্র।


বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে বন্দি করে রাখা হয়েছে৷ তাকে বেআইনি ও অমানবিকভাবে জামিন দিচ্ছে না সরকার। বরং তার সাজা ৫ থেকে ১০ বছর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে আদালত ব্যবহার করে। তা না হলে এতদিনে বেগম জিয়া মুক্ত হয়ে যেতেন।


‘দুবছর পরিত্যক্ত কারাগারে রাখা হয়েছে। এরপর তাকে বের করা হলে লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে। তার যে সঠিক চিকিৎসা সেটা দেশে সম্ভব নয়। তাকে বাইরে পাঠানোর জন্য সব ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছিল। পরিবার আবেদন করার পর প্রধানমন্ত্রী তা বাতিল করে দিয়েছেন।


তিনি আরও বলেন, বেগম জিয়া এ বয়সেও কারাবন্দি অবস্থায় গণতন্ত্রের জন্য লড়ে যাচ্ছেন। মিয়ানমারের অং সান সূচি আর বেগম জিয়া গণতন্ত্রের জন্য এখনও লড়ে যাচ্ছেন। বেগম জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে বুধবার (২৬ জুন) কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।


সভায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সেদেশের সঙ্গে দুটি চুক্তি, পাঁচটি সমঝোতা স্মারক ও তিনটি চুক্তি নবায়নসহ ১০টি নথি সই হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সম্পাদিত চুক্তিগুলির কারণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় সভায়।


মির্জা ফখরুল বলেন, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলির পানিবণ্টনের কোনো চুক্তি না করা, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা বন্ধ না করা হলেও একতরফাভাবে ভারতকে সব সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। কানেকটিভিটির নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত রেল যোগাযোগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগের সমঝোতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতা, ওষুধ সংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ, ভারতের ইনস্পেস এবং বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা, সমুদ্র বিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতা ইত্যাদি সমঝোতাগুলোতে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে।


ফখরুল জানান, সভার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত সংবাদ সম্মেলন আগামী ২৮ জুন (শুক্রবার) বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে।


বিএনপি মহাসচিব বলেন, সভায় সম্প্রতি মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত জলসীমায় নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ফলে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেন্টমার্টিনের যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, সরকারের নতজানু পরারষ্ট্র নীতির কারণেই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বারবার হুমকির মুখে পড়ছে। এ বিষয়ে সরকার জনগণকে সুস্পষ্টভাবে কোনো তথ্য সরবরাহ করছে না।


বিএনপির স্থায়ী কমিটি অনতিবিলম্বে মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের সীমান্তে গুলিবর্ষণ বিষয়ে জনগণের কাছে ব্যাখ্যা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।


ফখরুল বলেন, সভায় বৃহত্তর সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। সভা মনে করে, কিশোরগঞ্জে হাওরের মাঝখানে সড়ক নির্মাণ এবং বেশ কিছু এলাকায় মাটি ভরাট করে কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ করায় ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নিষ্কাশিত না হওয়ার কারণে এই ভয়াবহ দুর্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহরসহ বিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা পানির তলে যাওয়ায় অসংখ্য মানুষ সীমাহীন দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। দুর্গত এলাকায় সরকারের কোনো ত্রাণ তৎপরতা দেখা যায়নি। অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের জন্য সভায় দাবি জানানো হয়।


বিএনপির একটি ত্রাণ টিম অতিদ্রুত সিলেট সফর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান মহাসচিব।


তিনি বলেন, সভায় গত ১ মাসে ওষুধের মূল্য ১০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভায় এই মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগের জন্য সরকারের দুর্নীতি ও ভ্রান্তনীতিকে দায়ী করা হয়। অবিলম্বে ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যহ্রাসের জোর দাবি জানানো হয়।


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com