
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী ও বিপ্রতীপ মতাবলম্বীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ এনে এরশাদ আমলেও এত নিষ্ঠুরতা ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, স্বৈরাচারেরও লজ্জাবোধ আছে, কিন্তু বর্তমান সরকারের নেই।
১৯ মার্চ, মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত ‘গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আলোচনা সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা কি পাকিস্তানের চেয়ে ভালো আছি? পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ১৯৬২ থেকে ১৯৭১ এ রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু এমন নিষ্ঠুরতা দেখিনি। আইয়ুব স্বৈরাচার ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু স্বৈরাচার হলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় এতটা বেপোরোয়া ছিল না।
তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচারেরও লজ্জাবোধ আছে। আর বর্তমানে যিনি ক্ষমতায় আছেন, তিনি লজ্জার আশেপাশেও নেই। এই লজ্জা হলো নৈতিকতার। এরশাদ তো প্রাতিষ্ঠানিক স্বৈরাচার। তার আমলেও এমন নিষ্ঠুরতা ছিল না। ইফতার কেড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। অর্থাৎ, আমারা স্বৈরাচারদের নির্লজ্জ বলি। কিন্তু তাদেরও লজ্জাবোধ আছে। আর এদের (আ. লীগ সরকার) লজ্জাবোধ নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আরো বলেন, আমরা গত ১৫ বছর ধরে ঐক্যের ডাক দিচ্ছি। ঐক্যের জন্য সংগ্রাম করছি। ঐক্য যখন নিশ্চিত হয়, তখন সংগ্রামটা সহজ হয়ে যায়। এই কাজটা যদি আমরা করতে না পারি তাহলে সরকার বিভেদকে নানাভাবে ব্যবহার করবে।
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে ৬-৭ শতাংশের বেশি ভোটার ভোট দিতে যায়নি। আর যারা কেন্দ্রে গেছে বা যেতে বাধ্য হয়েছে, তারাও ভোট দিতে পারেনি। ফটোসেশানের জন্য লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। আজকে বলতে হচ্ছে, ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত। তেমনি শেখ হাসিনা ভোট পাক বা না পাক, পছন্দ করেন আর না করেন, ভোট দেন বা বা না দেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী। এই প্রবাদ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তকা তুলে ধরে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, সংবাদমাধ্যম সত্য তুলে ধরে একটি দেশের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা শুধু রাজনৈতিক দলের জন্য নয়, দেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র কোমায় আছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে একত্রিত হয়ে লড়াই করতে হবে।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে সাংবাদিকেরা সরকার দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন। সরকারের চাপে গণমাধ্যমে সঠিত তথ্য তুলে ধরা যাচ্ছে না। দেশে গণতন্ত্র নেই, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। বাংলাদেশের মানুষ নিজের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে না। সরকারের সমালোচনা করলেই সাংবাদিকদের জেল খাটতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমীন গাজী, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. পারভেজ হোসেন, বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের উপদেষ্টা রোটারীয়ান এম নাজমুল হাসান প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নির্বাচিত নেতাদের বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]