একদফা আন্দোলন থেকে সরে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের পরিকল্পনা বিএনপির
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৩০
একদফা আন্দোলন থেকে সরে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের পরিকল্পনা বিএনপির
মাইদুর রহমান রুবেল
প্রিন্ট অ-অ+

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার পতনে টানা কর্মসূচি পালন করলেও নির্বাচনের পর অনেকটা চুপসে গেছে বিএনপি। কেউ কেউ বলছে আন্দোলন করে ক্লান্ত হয়ে গেলো না তো? বিএনপির ক্লান্তির কারণেই আন্দোলনে বিরতি- নাকি আন্দোলনের নতুন ছক করছে দলটি?


অনেক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত সরকারকে ভোট থেকে নিবৃত করতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। জানা গেছে ভোটের পর থেকে তাই নতুন ছক এঁটে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। ভোট হয়ে গেলেও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে স্বীকৃতিও দিতে চায় না বিএনপি।


তৃণমূল চাইছে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি, তারা যেন মাঠে নামতে পারে। একই সঙ্গে বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দিক থেকে বার্তার অপেক্ষায় থাকবে বলেও শোনা যাচ্ছে। তৃণমূলের নেতারা বলছে, নিস্তেজ হয়ে পড়া দল গুছিয়ে আনতে হয়তো ব্যস্ত সময় পার করছে বিএনপির নেতারা।


বিএনপি নেতারা জানান, চলমান আন্দোলন বেগবান করতে শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এ কর্মসূচির মাধ্যমেই জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে।


দলীয় সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ঠেকাতে না পারলেও এই সংসদ বেশিদিন টিকবে না- এমন বার্তা দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে ঘর-বাড়ি ছাড়া মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের সাহস ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, সারাদেশের ভোটের পরিস্থিতি থেকে যেসব তথ্য-প্রমাণাদি পাওয়া যায় তা সংরক্ষণ করে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে উপস্থাপনের পাশাপাশি জাতিসংঘসহ বিদেশি দূতাবাসগুলোতেও দলের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। সেখান থেকে কি বার্তা আসে তা পর্যবেক্ষণ করে নতুন কর্মসূচি দেয়া হতে পারে- তাই কিছুটা সময় লাগছে।


দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্মসূচি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন আলোচনা রয়েছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি যেসব কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে, সেখানেই তারা ধরাশয়ী হচ্ছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা এমন কর্মসূচি চাইছেন যেন তারা মাঠে নামতে পারেন। সেক্ষেত্রে সভা-সমাবেশের পক্ষে মত তাদের। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের যদি কোনো পদক্ষেপ থাকে সেক্ষেত্রে হরতাল-অবরোধ-অসহযোগসহ যে কোনো কর্মসূচি দেয়া যেতে পারে।


বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু বিবার্তাকে বলেন, হরতাল-অবরোধ-অসহযোগ যেভাবে চলছে, এভাবেই চলবে। এর থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। দেশের জনগণসহ গোটা বিশ্ব আওয়ামী লীগের এই ডামি নির্বাচন দেখল। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের আন্দোলন থেকে পিছ’পা হওয়ার সুযোগ নেই। নেতাকর্মীরা যে কোনো কর্মসূচি পালনের জন্য প্রস্তুত। দলীয় হাইকমান্ড যে কর্মসূচি নেবে, সেটাই পালন করব।


বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা প্রসঙ্গে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বিবার্তাকে বলেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন না, বিশ্বের যতগুলো গণতন্ত্রকামী দেশ আছে যারা ডেমোক্রেটিক প্রসেসটা ধরে রেখেছে তারা সবাই বলছেন- বাংলাদেশে গত ১০ বছরে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যা করা ডেমোক্রেসি ফেরত আসুক। শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন নয়, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ গণতন্ত্রকামী সব দেশেই চাচ্ছে।


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, বিএনপি হতাশ হয়ে আন্দোলন বন্ধ করে দেয়নি। এমনকি বিএনপির আন্দোলন দুর্বলও হয়নি। দলের নেতারা হারিয়ে যায়নি, পালিয়েও যায়নি। চলমান আন্দোলন থেকে এভাবে মাঠ ছেড়ে দেবে না বিএনপি। তারা আন্দোলনের নতুন কৌশল ঠিক করতে কাজ করছে। শীঘ্রই সেটি আপনারা দেখতে পাবেন।


চতুর্থ দফায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ফেলেছে এমন প্রশ্নের জবাবে নিতাই রায় বলেন, দেশে কোন নির্বাচন হয়নি। কারণ ৯৫ শতাংশ মানুষ ভোট কেন্দ্রেই যায়নি। সরকার তাদের অবৈধ্য ক্ষমতা নবায়ন করেছে- এটাকে তো ভোট বলা যাবে না।


তিনি বলেন, বিএনপি বা সমমনা দলগুলোর লড়াই সংগ্রাম চলছে, চলতেই থাকবে- যতক্ষণ না পর্যন্ত দেশের হারানো গনতন্ত্র উদ্ধার না হচ্ছে। দেশের জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে বিএনপির এই আন্দোলন। মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য লড়াই করছে বিএনপি।


বিএনপির এই নেতা বলেন, সকল রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেও তারা কেন্দ্রে ভোটার নিতে পারেননি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি ২৫০টির বেশি সিট পেত আর আওয়ামী লীগ ২০/৩০টির বেশি সিট পেতো না।


আন্দোলনে ভাটা পড়ায় কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি কর্মীদের অসীম আত্মত্যাগ রয়েছে। ৩০ হাজারেও বেশি কর্মী এখনো জেলে। খুন-গুম হয়েও পিছু হটেনি দলের জন্য নিবেদিত কর্মীরা। তারা নিস্তেজও হয়ে পড়েনি। সময় মতো তারা আবারো আন্দোলন চাঙ্গা করে এই সরকারকে বিদায় করবে।


ভোট পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বিবার্তাকে বলেন, বিএনপি জনগণকে সম্পৃক্ত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে আছে। এ অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথে নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম করে যাবে।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীন সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বিবার্তাকে বলেন, দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরামে আলোচনা চলছে। সেখান থেকেই ঠিক করা হবে নতুন কি কর্মসূচি আসছে। তার জন্য একটু সময় তো দিতে হবে।


বিবার্তা/রুবেল/রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com