ডামি ভোটের সমর্থন পেতে দেশে দেশে ধরনা দিচ্ছে সরকার: রিজভী
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:২১
ডামি ভোটের সমর্থন পেতে দেশে দেশে ধরনা দিচ্ছে সরকার: রিজভী
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের জনগণকে উপেক্ষিত রেখে জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার যেকোনো উপায়ে বিদেশি রাষ্ট্রের সমর্থন জোগাড় করতে ব্যস্ত। দেশে দেশে ধরনা দিয়ে কাকুতি মিনতি করছেন। ডামি ভোটের নকল সরকার হীনম্মন্যতায় ভুগছে। কিন্তু ধরনা দিয়ে অভিনন্দন বার্তা আনা দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। লুটের টাকায় ক্রয়কৃত অভিনন্দনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা বড় হাস্যকর।


তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগের এই একদলীয় পাতানো নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি, ভোট কেন্দ্রে না যাওয়াটাই সেটির প্রমাণ। “আমরা আর মামু”দের ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দ্বিতীয় বাকশাল সরকারের বৈধতা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। জনগণ এই নির্বাচন, এই অবৈধ সংসদ কখনও মেনে নেবে না। জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ডামি সরকারের পতন ঘটাবে।


২১ জানুয়ারি, রবিবার সকালে নয়া পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।


তিনি বলেন, সাজানো পাতানো ভাগ বাটোয়ারার নির্বাচনি প্রহসনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী ডামি সরকার বিএনপিকে দমন করতে গিয়ে বাংলাদেশকে পরাজিত করে ফেলেছে। জনগণের কথা শোনার কেউ নেই। দেশে চারদিকে হাহাকার। আওয়ামী সিন্ডিকেট কবলিত দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। মানুষ চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে, সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, ধার-দেনায়ও সংসার চালাতে পারছে না। কাঁচা মরিচ থেকে সোনাদানার বাজারদর আকাশ স্পর্শ করেছে। গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। গ্যাসের অভাবে একদিকে বাসাবাড়িতে চুলায় আগুন জ্বলছেনা, অপরদিকে একেরপর এক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোডশেডিং সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। গ্যাসের অভাবে গাজীপুরে অর্ধেক শিল্প কারখানা বন্ধ হওয়ার সংবাদটি আজকের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রামের অবস্থা আরও ভয়াবহ।


রিজভী বলেন, একদিকে অর্ধাহার অনাহার, অপরদিকে হাড় কাঁপানো তীব্র শীতের যাতনা। অবৈধ ক্ষমতার দাপটে ফ্যাসিবাদী সরকার উষ্ণতা অনুভব করলেও শীত কাতর, খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানহীন মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। জনগণের প্রতি দখলদার সরকারের ন্যূনতম ভ্রুক্ষেপ নেই। যেহেতু নিপীড়ক শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, এ কারণেই তিনি জনগণকে বন্দি, পরাধীন এবং বেঁধে রাখতে চান স্বৈরশৃঙ্খলে।


তিনি বলেন, বাজারদরের ভয়াবহ অবস্থা। সম্ভবত প্রতারণার ডামি ভোট বর্জনের কারণে জনগণকে শায়েস্তা করতে নির্বাচনের পরই দেশের মানুষকে ঘুষখোর, মুনাফাখোর, দুর্নীতিবাজ, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে নতুন করে সমর্পণ করেছেন শেখ হাসিনা। ডামি সরকারের শপথের পরদিনই চালসহ কিছু নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করা অভিসন্ধিপ্রসূত। ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। প্রতি কেজি চালের দাম গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা।


রিজভী আরও বলেন, দশ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর কথা বলে একসময় ভোট চাইলেও বর্তমানে মোটা চালের দামও ৫৫-৬৫ টাকার নিচে নয়। অন্যান্য চাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সিন্ডিকেটের লোকেরা ভোট ডাকাতির নির্বাচনে সহযোগিতা করে এখন ফায়দা নিতেই চালের দাম বৃদ্ধি করেছে। যাকে খাদ্যমন্ত্রী করা হয়েছে তিনি চাল মিলের মালিক। খাদ্যমন্ত্রী চাল সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, চালের দাম সর্বোচ্চ ৬ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৫ দিন আগে খাদ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন চারদিনের মধ্যে চালের দাম কমিয়ে আনতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। বাজারে দায়সারা তদারকির নামে চুনোপুঁটি ধরতে ব্যস্ত প্রশাসন। রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বাস্তবতা হলো- কোনো চেষ্টায় কাজ হবে না। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙবে না। ডামি সংসদের প্রায় সবাই ব্যবসায়ী। মজুতদার, মিল মালিক, লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী, লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ী সব সরকারের লোক।


তিনি বলেন, সরকারের টপ টু বটম সিন্ডিকেট করে দেশ লুটেপুটে খাচ্ছে। জনগণ চরম অসহায়। দ্রব্যমূল্য না কমলে মানুষ বাঁচবে না। কারণ আয় বাড়েনি, যে শ্রমিকের বেতন ৩০০ টাকা ছিল, এখন ৭০০ টাকা দিলেও তাদের পোষায় না। তারা বাজারে গিয়ে জিনিসপত্র কিনতে পারেন না। তারা ইলিশ মাছ-গরুর মাংস খেতে পারে না। বেগুন খাবে, সেটাও হয় না। এক দেড় বছর আগে চিনির দাম ছিল ৮৮-৯০ টাকা, এখন তা ১৪০-১৪৫ টাকা, ডিমের হালি এখন ৪৮-৫২ টাকা, রসুনের দাম বেড়েছে ২২৯ শতাংশ। শীতের বাজারে ভরা মৌসুমেও সবজি উৎপাদন বেশি হলেও ১০০ থেকে ১৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। আগে তারা বলেছিল আলু খেতে, কিন্ত এখন চালের চেয়েও আলুর দাম বেশি। গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি, রুই মাছ সবকিছুর দাম বেড়েছে। সিন্ডিকেট করে যে সবকিছুর দাম বাড়ানো হয় গরুর মাংস তার বড় উদাহরণ। কত রকমারি প্রতারণা জানে এই ডামি সরকার। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর থেকেই অত্যাচারী আর অনাচারী হয়ে ওঠা একটা রাজনৈতিক দল।


শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, এই সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই শেয়ার বাজার লুট করে। তারা ৯৬, ২০১০ সালে শেয়ার বাজার কারসাজি করে লক্ষ কোটি টাকা লোপাট করেছে। লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথের ফকির করেছে। শেয়ার বাজারের হতাশায় বহু বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা করেছে। এরইমধ্যে আবার শুরু হয়েছে কারসাজি। আবারও শেয়ার বাজারে ধ্বস নেমেছে। দীর্ঘদিন মার্কেটকে ধরে রাখা ফ্লোর প্রাইস হুট করে তুলে দেয়া হয়েছে কাউকে কাউকে বিশেষ সুবিধায় শেয়ার ক্রয়ের জন্য। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নেই, কিন্তু লুটপাটের টাকা আছে শেখ হাসিনার উপদেষ্টাসহ আওয়ামী নেতাদের কাছে। বিএসইসি’র এই ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার হঠকারী সিদ্ধান্তে আবারও অসংখ্য বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএসইসি’র এই সিদ্ধান্তে তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই এবং অবিলম্বে ফ্লোর প্রাইস পুনর্বহালের জোর আহ্বান জানাই।


বিবার্তা/রুবেল/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com