নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগে ১১ মাসে তিন কমিটি, ক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:২১
নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগে ১১ মাসে তিন কমিটি, ক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

'আমরা মাননীয় মন্ত্রীকে (অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল) ও মুজিবুল হক সাহেবকে বলতে চাই, আপনারা সাংগঠনিক লোক, জেলার নেতৃবৃন্দ। আমরা আপনাদের সম্মান করি। এই কমিটি নিয়ে যদি কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, নেতা-কর্মীদের যদি আহত করা হয়, নেতা-কর্মীদের যদি বিভিন্নভাবে জেল-জুলুম দেয়া হয়- তাহলে নাঙ্গলকোট অচল হয়ে যাবে। নাঙ্গলকোটে আপনি টিকে থাকতে পারবেন না। মাননীয় মন্ত্রী যদি আবার লড়াই-সংগ্রাম চলে, নাঙ্গলকোটের মানুষ নিয়ে লড়াই-সংগ্রাম করবো।- কথাগুলো বলেছেন সদ্য বিলুপ্ত নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ।


বিগত ১১ মাসে নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগে তিনটি কমিটি ঘোষণা করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ গত ২ নভেম্বর পূর্বের কমিটি বাতিল করে আহ্বায়ক কমিটি করে জেলা আওয়ামী লীগ। গত ৬ নভেম্বর হাজারো নেতাকর্মী নাঙ্গলকোটে শান্তি মিছিল করেন। মিছিল পূর্ব এক আলোচনায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে (লোটাস কামাল) হুঁশিয়ার করে তিনি এসব কথা বলেন।


আবু ইউসুফ বলেন, মাননীয় মন্ত্রী আপনি আমাদেরকে ভালোবাসেন আমরাও আপনাকে ভালোবাসি। এই ভালোবাসার মর্যাদা আপনি দিবেন। আর সে মর্যাদা যদি না দেন আপনি দেখবেন যে এর পরিণতি কি হয়! আমরা আপনাকে অসম্মান করতে চাই না।


সমাবেশে তিনি বলেন, আমরা ইরান-ইরাকের মতো যুদ্ধ চাই না। আমরা ইউক্রেনের মতো যুদ্ধ চাই না, ফিলিস্তিনের মতো যুদ্ধ চাই না। আমরা শান্তি চাই। যদি যুদ্ধ লাগে এই যুদ্ধ থামাবার কোনো শক্তি নাই। নাঙ্গলকোটের যুবলীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রলীগ বসে থাকবে না।


দলীয় সূত্রে জানা যায়, নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর। এরপর গেল ১১ মাসে তিনটি কমিটি ঘোষণা করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। ১১ মাসের মধ্যে তিনটি কমিটি ঘোষণা করায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিভক্তি। দলের স্থানীয় নেতারা বলছেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক গঠনতন্ত্র না মেনে নিজেদের খেয়াল খুশি মত কমিটি করছেন। এছাড়া কমিটি গঠনে বাণিজ্য হচ্ছেও বলে মন্তব্য অনেক নেতার।


সম্প্রতি নাঙ্গলকোট উপজেলার যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রীর পিএস রতন বাবুকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন নেতারা। বারবার কমিটি গঠন করায় জেলা আওয়ামী লীগের সমালোচনাও করেন তারা। এসময় বক্তারা নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে বাণিজ্যিক শ্রেণি গড়ে উঠেছে বলেও মন্তব্য করেন।


জানা যায়, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ আর হাইস্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১১ ডিসেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল ও সম্পাদক মুজিবুল হক মুজিব স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন কালুকে সভাপতি এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ভূঁইয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে তালিকা প্রকাশ করা হয়।


এর চার মাস না যেতেই চলতি বছরের ২৬ মার্চ পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে অধ্যক্ষ আবু ইউসুফকে সভাপতি ও আবু বক্কর ছিদ্দিক আবুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটির অনুমোদন দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল ও সম্পাদক মুজিবুল হক মুজিব। সর্বশেষ গত ২ নভেম্বর রফিকুল হোসেনকে আহ্বায়ক ও অধ্যক্ষ সাদেক হোসেন ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। একই চিঠিতে ১১ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ-এর উভয় কমিটি এবং তাদের গঠিত ইউনিয়ন কমিটিগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।


এদিকে ১১ মাসে তিন কমিটি দেয়ায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সদ্য গঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য।


গত ৯ নভেম্বর নাঙ্গলকোট সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আবুল হাশেমের পক্ষে এই নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. ইব্রাহীম জুয়েল। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গত ১১ মাসে তিনবার দেয়ার কারণ জানতে চেয়ে এবং পূর্বের কমিটি পুনর্বহাল রাখার প্রস্তাব দিয়ে তিনি এ নোটিশ দিয়েছেন। এছাড়া ১১ মাসে তিনবার কমিটি দেয়া গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যথায় গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ করায় দেশের প্রচলিত আইন ফৌজদারি/রিভিশন মামলা করা হবে বলেও জানানো হয়।


জানতে চাইলে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বিবার্তাকে বলেন, এটা আমাদের হাতে পৌঁছে নাই। যারা উকিল নোটিশ করছে, তাদেরকে বলেন আমাদের হাতে পৌঁছাইতে। তারপর জবাব দিব।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট মো. আবুল হাশেম বিবার্তাকে বলেন, চিঠি পাঠিয়েছি। চিঠি কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের অফিস পাঠিয়েছি। উনি হয়তো ভাবছেন ঢাকায় পাঠিয়েছি।


তিনি বলেন, ওনারা কমিটির খেলা খেলে আওয়ামী লীগকে তছনছ করে দিয়েছে। নাঙ্গলকোট আওয়ামী লীগকে দুই-তিন ভাগ করে দিয়েছে। আগে আমরা সবাই একসাথে ছিলাম, আওয়ামী লীগ তিনভাগ হয়নি। এখন হাইব্রিড, জামায়াত-বিএনপি কতগুলো ঢুকিয়েছে। যুবলীগের যুগ্ম আহ্ববায়ককে সদস্যসচিব বানিয়েছে, যে আওয়ামী লীগের সদস্যও না।


আবুল হাশেম বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে আওয়ামী লীগ করি, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমরা তো এসব সহ্য করতে পারি না। আমরা ওনাদের কাছ থেকে কখনো দশ টাকা চাইনি। আমাদেরকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে কেন? আমরা যারা তৃণমূলের রাজনীতি করলাম, তাদের কোন মূল্যায়ন নাই।


১১ মাসের ব্যবধানে নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনটি কমিটি গঠন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। শামসুল আলম নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, 'নাঙ্গলকোট উপজেলা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী যদি কোন আওয়ামী লীগার থেকে থাকে আর তাদের ন্যূনতম লজ্জা শরম থাকে লোটাস কামাল লীগের এই কমিটি বয়কট করা উচিত। বছরে কয়েকবার কমিটি গঠন আবার ভেঙ্গে দেয়া পৃথিবীর বৃহত্তম স্বৈরাচারীকে হার মানিয়েছে যাহা দলের একজন নগণ্য সমর্থক হিসাবে লজ্জিত বোধ করছি।'


পিংকি আক্তার নামে একজন ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব থাকার কথা ছিল না। পাঁচমিশালি আওয়ামী লীগ যারা সৃষ্টি করেছে সারা বাংলাদেশ এদের চিহ্নিত করতে না পারলে। অনেক খেসারত দিতে হবে আওয়ামী লীগকে।


বিগত ১১ মাসে তিন কমিটি গঠনের ব্যাপারে জানতে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com