শেষ পর্ব
'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার সহযাত্রী হতে চান সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:১২
'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার সহযাত্রী হতে চান সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা
সোহেল আহমদ
প্রিন্ট অ-অ+

চলতি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এরপরই শুরু হবে ভোটের ডামাডোল। ইতোমধ্যে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।


মনোনয়নের জন্য এরই মধ্যে প্রার্থীদের আমলনামা তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। বরাবরের মতো এবারও মাঠে সক্রিয় তারা। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা সাবেক ছাত্রনেতাদের সাথে কথা বলেছে বিবার্তা। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার তাদের প্রত্যাশা বেশি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট ও তরুণ নেতৃত্ব প্রয়োজন। বিষয়টি বিবেচনা করবে দল, এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।


ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ নবী নেওয়াজ। আশির দশকে স্কুল পড়াকালীন সময়ে ছাত্রলীগে রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। সফলতার সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়েও দায়িত্ব পালন করেছেন।


নবী নেওয়াজ বিবার্তাকে বলেন, দশম সংসদে আমি এমপি ছিলাম। পাঁচ বছরে রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ উন্নয়নমূলক যে সমস্ত কাজ করেছি- আমি মনে করি এই পরিমাণ অনেকের তুলনায় অনেক বেশি। এটি সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে, মানুষ বলে এবং স্বীকার করে যে আমি প্রচুর উন্নয়ন করেছি।


তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে দলের নেতা-কর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছি এবং সাংগঠনিকভাবে সকল প্রোগ্রামগুলোতেও নিয়মিত অংশ নিচ্ছি। এলাকার মানুষের সাথে সার্বক্ষণিক সম্পৃক্ত আছি। বিগত পাঁচ বছর আমি এমপি না থাকলেও মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়িয়েছি। কোটচাঁদপুর-মহেশপুর এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে এই বিশ্বাস আছে, আমি উন্নয়ন করতে পারি। দল থেকে মনোনয়ন দিলে আমার বিশ্বাস নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবো।


খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী খুলনা মহানগর যুবলীগ সভাপতি সফিকুর রহমান পলাশ। ১৯৮৮ সালে স্কুল জীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে জড়িত। সফলতার সাথে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিবার্তাকে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপের কারণে আজ বাঙালি সারা বিশ্বে সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে পরিচয় পেয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমার প্রথম প্রত্যাশা
আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় আসুক।


তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, ছোটবেলা থেকে পারিবারিকভাবে এই দলের সাথে আমরা সম্পৃক্ত। স্কুলজীবন থেকে রাজনীতির সাথে যুক্ত। স্বপ্ন ছাড়া তো মানুষ বাঁচে না। স্বপ্ন দেখি মানুষের সেবা করার। সেই সেবা করার জায়গায় যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচন করবো। যেহেতু মানুষের সাথে থেকে পাশে থেকে রাজনীতি করি, মানুষ আমাকে নিরাশ করবে না।


সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রফিকুল ইসলাম। তিনি খুলনা বিএল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও তালা উপজেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি তৃণমূলের রাজনীতির সাথে জড়িত। সাতক্ষীরা-১ আসনের তরুণ প্রজন্ম পুরোপুরি আমার পক্ষে, সাধারণ ভোটাররাও আমাকে চায়। সাধারণ মানুষও চায় ক্লিন ইমেজের লোক আসুক। দল এবং দলের বাইরে যারা সাধারণ ভোটার আছে তারা চায় যোগ্য মানুষ জনপ্রতিনিধি হোক। এখানে আওয়ামী লীগ বা জোটগত যারা প্রার্থী আছেন আমি আমার ডেডিকেশনের দিক থেকে, ব্যক্তিগত স্বচ্ছতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা সবমিলিয়ে তাদের মধ্যে নিজেকে যোগ্যতর মনে করি।


তিনি বলেন, দল কাকে মনোনয়ন দিবে জানি না। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে আমি ছাড়া কেউ পাশ করবে না।


ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে প্রত্যাশা কি- জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, ছাত্রলীগে যারা একসময় নেতৃত্ব দিয়েছে, সংকটে-সংগ্রামে যে মুখগুলো ছিল তারা যাতে আগামী দিনের রাজনীতিতে আসতে পারে সেইভাবে চিন্তা করা দরকার। যারা এলাকায় যায়, মানুষের সাথে সম্পর্ক আছে, গ্রহণযোগ্যতা আছে, বদনাম নেই এবং দলের নামে কখনো ফায়দা লোটেনি; মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে এরকম মানুষকে বিবেচনা করা উচিত। দলের চিন্তা করা উচিত কোন নেতৃত্ব আসলে জনগণ ভালো থাকবে এবং কর্মীগণও ভালো থাকবে। এটার মধ্য থেকেই দেশ ভালো থাকবে।


তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করতে আসি- রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমাদের প্রথমে জায়গায় থাকে দেশের জন্য কাজ করবো, সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করবো। দেশ এবং সমাজ পরিবর্তনের কমিটমেন্ট নিয়ে যারা রাজনীতি করে, যাদের সাথে মানুষের সম্পর্ক আছে, মানুষের বিপদ-আপদে পাশে থাকে। আমি মনে করি দেশের প্রতি, দলের প্রতি এবং নেত্রী ও বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে আপসহীন থাকে সেই রকম নেতৃত্বকে আওয়ামী লীগ মনোনীত করবে।


মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এমএএস ইমন সরকার। ১৯৯১ সালে মেহেরপুর সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়াকালীন সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক ও পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।


ইমন সরকার বিবার্তাকে বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে জনগণের সঙ্গে আছি। তৃণমূলের সঙ্গে আমার নিবিড় যোগাযোগ আছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সরকারের সাফল্য তুলে ধরছি।


তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে প্রত্যাশা জরিপের ভিত্তিতে যাতে মনোনয়ন দেয়া হয়। মনোনয়নে যাতে জনগণের মত প্রতিফলিত হয়।


মুন্সিগঞ্জ-১ (শ্রীনগর-সিরাজদিখান) নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।


তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমি গত ১৫ বছর ধরে নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছি। ২০১৪ সালে নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চেয়েছি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে হার্ড অ্যান্ড সোল চেষ্টা করেছি, সেই জায়গায় জোট থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। গত পাঁচ বছরে জোটের এমপি এলাকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। এলাকার আওয়ামী লীগ, স্থানীয় জনগণ চায়- আমি যেন এলাকার সেবা করি, জনগণের প্রতিনিধি হই। তাই ভোট করার জন্য আমার সকল ধরণের প্রস্তুতি আছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি অংশ নিব এবং এলাকার মানুষ আমাকে বিজয়ী করবে ইনশাআল্লাহ।


বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড সবসময় জনমত জরিপকে প্রাধান্য দেয়। আমাদের মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান আমাদের আস্থার ঠিকানা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে এবং জনপ্রিয়তা যাচাই করেই সবসময় মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। এবারও সেটাই হবে। যাদের জনসমর্থন আছে তারাই মনোনয়ন পাবেন। অতীত জননেত্রী যেভাবে করেছেন সেভাবেই মনোনয়ন দিবেন।


তিনি বলেন, আমি দলের পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করেছি। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার বিজয় নিশ্চিতে আমি অতীতের মতো সবসময় মাঠে থাকবো।


কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হাসান ভূঁইয়া রুমি। তিনি বর্তমানে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবে;দায়িত্ব পালন করছেন। জানতে চাইলে এহতেশামুল হাসান ভূঁইয়া বিবার্তাকে বলেন, বুড়িচং–ব্রাহ্মণপাড়ার প্রত্যেকটস মানুষের সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক। মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। শুধু মানুষের সুখে নয়; দুঃখেরও ভাগিদার হয়েছি। আওয়ামী লীগের গুজব বিরোধী কর্মকাণ্ডের সঠিক জবাব দিতে আমি অন্তত ১৮০টি মসজিদে জুমআর নামাজ আদায় করে মানুষের কাছে বাস্তব চিত্রটা তুলে ধরেছি।


ব্রাহ্মণপাড়ায় ৮২টি গ্রাম। এই ৮২টি গ্রামের মানুষের সাথে আমি দেখা করেছি। বুড়িচংয়ে ২৮৪টি গ্রাম, ১৭ টি ইউনিয়ন। প্রত্যেকটা ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লায় আমি বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের উন্নয়ন বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। প্রায় ৩ লাখ লিফলেট মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।


তিনি বলেন, সামগ্রিক কার্যক্রম বিবেচনা করলে আমি একজন যোগ্য প্রার্থী হতে পারি, এটা আমার বিশ্বাস। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে বলেছিলেন, শত ফুলকে ফুটতে দিন। আমি মনে করি, শত ফুলের মাঝে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবচেয়ে পরিশ্রমী, সবচেয়ে মেধাবী এবং সবচেয়ে যোগ্য ফুলটা হতে পারি, এটা আমার বিশ্বাস।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com