নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগে ১১ মাসে তিন কমিটি, তৃণমূলে ক্ষোভ
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৫
নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগে ১১ মাসে তিন কমিটি, তৃণমূলে ক্ষোভ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর। এরপর গেল ১১ মাসে তিনটি কমিটি ঘোষণা করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। ১১ মাসের মধ্যে তিনটি কমিটি ঘোষণা করায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিভক্তি। যার প্রভাব দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়বে বলে মন্তব্য করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।


দলের স্থানীয় নেতারা বলছেন, সম্মেলন ছাড়া উপজেলা কমিটি গঠনের নিয়ম নেই। এছাড়া কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক গঠনতন্ত্র না মেনে নিজেদের খেয়াল খুশি মত কমিটি গঠন করছেন বলেও অভিযোগ তাদের।


দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ আর হাইস্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১১ ডিসেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল ও সম্পাদক মুজিবুল হক মুজিব স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন কালুকে সভাপতি এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ভূঁইয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে তালিকা প্রকাশ করা হয়।


এর চার মাস না যেতেই চলতি বছরের ২৬ মার্চ পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে অধ্যক্ষ আবু ইউসুফকে সভাপতি ও আবু বক্কর ছিদ্দিক আবুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটির অনুমোদন দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল ও সম্পাদক মুজিবুল হক মুজিব। সর্বশেষ গত ২ নভেম্বর রফিকুল হোসেনকে আহ্বায়ক ও অধ্যক্ষ সাদেক হোসেন ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। একই চিঠিতে ১১ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ-এর উভয় কমিটি এবং তাদের গঠিত ইউনিয়ন কমিটিগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।


১১ মাসের ব্যবধানে নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনটি কমিটি গঠন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। শামসুল আলম নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, 'নাঙ্গল কোট উপজেলা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী যদি কোন আওয়ামী লীগার থেকে থাকে আর তাদের ন্যূনতম লজ্জা শরম থাকে লোটাস কামাল লীগের এই কমিটি বয়কট করা উচিত। বছরে কয়েকবার কমিটি গঠন আবার ভেঙ্গে দেয়া পৃথিবীর বৃহত্তম স্বৈরাচারীকে হার মানিয়েছে যাহা দলের একজন নগণ্য সমর্থক হিসাবে লজ্জিত বোধ করছি।'


এদিকে গত সোমবার (৬ নভেম্বর) সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু ইউসুফের নেতৃত্বে হাজারো নেতাকর্মী নাঙ্গলকোটে শান্তি মিছিল করেছেন। মিছিল পূর্ব এক আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে (লোটাস কামাল) হুঁশিয়ার করে আবু ইউছুফ বলেন, মন্ত্রী যদি আর একবার ভুল করেন, বাংলার কোনো লোক স্থানীয় নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমাদের ভুল পথে পরিচালিত করে কমিটি নিয়ে বিভ্রান্ত করলে আপনাকে ছাড় দেয়া হবে না। যদি এ নিয়ে আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা হয়- তাহলে নাঙ্গলকোট অচল করে দেয়া হবে।


দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সামনে রেখে গত ২ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি’র অফিসে বিবাদমান পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে পূর্বের কমিটি বাতিল করা হলেও নতুন কোন কমিটি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দুই পক্ষকে নিয়ে সমঝোতা করার জন্য একটি কমিটি করেন। কিন্তু কমিটির বৈঠক ছাড়া সেই রাতেই কোন সমঝোতা না করেই আ ফ ম মোস্তফা কামাল ও মুজিবুল হক পূর্বের সব কমিটি বাতিল করে উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন।


চলতি বছরের ২৬ মার্চ গঠিত কমিটিতে সভাপতি ছিলেন অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ। জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মানিত সভাপতি-সেক্রেটারি গঠনতন্ত্র কিচ্ছু মানে না। নিজেদের খেয়াল খুশি মত এভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে মীমাংসার জন্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ঢাকা ডেকে নিয়ে বৈঠকে বসেছে। সেখানে লোটাস কামাল সাব ছিল। সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ নির্বাচনের আগে এই মুহূর্তে কোনো কমিটি ভাঙা যাবে না।


আবু ইউসুফ বলেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর মেয়াদে কমিটি থাকে। কিন্তু আমাদের এখানে এক বছরের ভেতর তিনটা কমিটি করা হয়েছে। কমিটি গঠন আর ভাঙার এ খেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। যার প্রভাব আগামী নির্বাচনে পড়বে।


তিনি বলেন, আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব যদি একটা চিঠি দিয়ে দেয় যে, পুরাতন সব কমিটি বাতিল, নতুন কমিটি হয়েছে। তাহলে নতুন কমিটি সবাই মানবে, না হলে এটা কেউ মানবে না। ক্লিয়ার কাট কথা।


একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আবু বকর ছিদ্দিক আবু। তিনি বিবার্তাকে বলেন, উনি (আ ফ ম মুস্তফা কামাল) কান কথা শোনেন। কেউ কিছু বললেই উনি বলে, হ এটা সঠিক। চার-পাঁচজন একসাথে হয়ে যদি বলে এদের দ্বারা নির্বাচন হবে না, আবার তা বাতিল করবে। এখন যাদেরকে দিছে সেটাও বাতিল করে দিবে।


আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর আগে কোনো কমিটি সম্মেলন ছাড়া ভাঙে না। আগেরটাও অবৈধ এখন যেটা করেছে সেটাও অবৈধ। এটা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে নেই। উনারা যদি চালাইতে পারে.... আমি, নৌকার পক্ষে থাকবো সবসময়। কিন্তু এভাবে বারবার কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি করলে আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে।


১১ মাসের ব্যবধানে তিন কমিটি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক রেল মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি বিবার্তাকে বলেন, এ ব্যাপারে নাঙ্গলকোট উপজেলা... ওই এলাকার এমপি অর্থমন্ত্রী মহোদয়। উনি ওই এলাকার এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাননীয় অর্থমন্ত্রী। উনার নির্বাচনী এলাকা, উনার সাথে কথা বলেন। আপনি যা জানতে চান, বিস্তারিত উনার কাছ থেকে জেনে নিবেন, দয়া কইরা।


এ বিষয়ে জানতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত পৃথক দু'টি নম্বর দিয়ে কল এবং এসএমএস করে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com