হার্ড লাইনে বিএনপি
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:৩৬
হার্ড লাইনে বিএনপি
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। সমমনা দল ও জোট নিয়ে ধাপে ধাপে আন্দোলনে পরিবর্তন আনছে তারা।


এরই মধ্যে পদযাত্রা, সমাবেশ, গণমিছিল, কালো পতাকা মিছিল, রোডমার্চসহ বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করেছে দলটি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমেই দাবি আদায় করতে চায় তারা।


চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার যদি দাবি মেনে না নেয় তাহলে কঠোর কর্মসূচির দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।



আগামী জানুয়ারির শুরুতে ভোটগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান। এছাড়া নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। তফসিল ঘোষণার আগেই চলমান এক দফার আন্দোলনকে চূড়ান্তের দিকে নিয়ে যেতে চায় বিএনপি। তাই অক্টোবর মাসে রাজপথে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লাগাতার কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করতে চায় দলটি।


বিএনপি সূত্র জানায়, আগামী ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগীয় রোডমার্চের মধ্য দিয়ে শেষ হবে টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি। এরপর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে গিয়ে কর্মসূচির ধরনে আসতে পারে পরিবর্তন। সেই সময় ঢাকায় ফের মহাসমাবেশ, গণসমাবেশ বা বড় ধরনের কর্মসূচির চিন্তা রয়েছে হাইকমান্ডের। এর মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের ‘শেষ ধাপ’ শুরু হবে। তখন কর্মসূচি হবে ফের ঢাকাকেন্দ্রিক। ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন কমিশন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়ের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘেরাওয়ের কর্মসূচি আসতে পারে। সাথে হরতাল, অবরোধ, ঘেরাও, অসহযোগ এবং অবস্থান কর্মসূচির ভাবনা রয়েছে বিএনপির নীতি নির্ধারকদের।



ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এজন্য এই সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলের এমন সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা উপনির্বাচন ও স্থানে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খন্দকার, কুমিল্লার মনিরুল হক সাক্কু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আব্দুস সাত্তারসহ বহু নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।



বিএনপি নেতারা বলছেন, হয়তো অক্টোবরের মধ্যেই চূড়ান্ত ফয়সালা হবে। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ ভাবছে নির্বাচন করলে সব শেষ হয়ে যাবে। সরকার ১৪ এবং ১৮ সালের মতো যতই সামনের দিকে এগোবে সেটা সম্ভব হবে না। কারণ সেই পরিস্থিতি দেশে এখন নেই।আন্দোলনে যদি সরকারের বোধ উদয় হয়, কেয়ারটেকার ফিরিয়ে আনে, সংবিধানে সংযোজন করে তাহলে তো মিমাংসা হয়ে গেল। না হলে আন্দোলন বলতে দেশের মানুষ যেটা মিন করে সেটা সরকারের মুখোমুখি হতে হবে। শেখ হাসিনা ৯৬ সালে যে আন্দোলন করেছে সেই আন্দোলনের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে। আওয়ামী লীগ যেটা করেছে সেটা আবার ফিরে আসতে পারে।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বিবার্তাকে বলেন, আমাদের আন্দোলন চলছে চূড়ান্তটা যখন হবে তখন দেখতে পাবেন। আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে এগোচ্ছি। আমরা নির্বাচন করব কি করব না সেটা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের একটাই দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আমরা অংশগ্রহণ করব, নিরপেক্ষ সরকারের বাইরে আমরা অংশগ্রহণ করব না; এটা পরিষ্কার কথা। তবে এ নিয়ে আর কোন কথা নেই।


১৪ এবং ১৮ সালের মতো নির্বাচন হলে বিএনপি কী করবে বিএনপি প্রশ্নের জবাবে সেলিমা রহমান বলেন, তখন আমরা কি করব, কি হবে, কি না হবে সেটা পরিস্থিতি বলে দেবে।


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বিবার্তাকে বলেন, আমরা মনে করি চলমান আন্দোলন সফল হবে। কারণ পুরো দেশবাসী একটি জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। সরকার সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন আর ব্যবসায়ীরা ছাড়া সরকারের পক্ষে আওয়ামী লীগের লোক রয়েছে কিনা সেটাও সন্দেহ। সরকার প্রধান বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে গেছে। সারা বিশ্ব তার বিপক্ষে চলে গেছে। প্রকাশ্যে যাই বলুক যারা সামর্থ্যবান তাদের অধিকাংশের ছেলে মেয়ে স্ত্রী আমেরিকায় অথবা কানাডায়। ভিসা নীতির যে প্রতিফলন শুরু হয়েছে এটা মোকাবিলা করা আওয়ামী লীগের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। সাম্প্রতিক প্রধানমন্ত্রীর ভাষা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হয় না উনি স্বস্তিতে রয়েছেন।



শামসুজ্জামান দুদু বলেন, হয়তো অক্টোবরের মধ্যেই চূড়ান্ত ফয়সালা হবে। রাজনীতি শেষ কথা বলে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ ভাবছে নির্বাচন করলে সব শেষ হয়ে যাবে। আমার কাছে মনে হচ্ছে ১৪ এবং ১৮ সালের মতো যতই সামনের দিকে এগোবে সেটা সম্ভব হবে না। কারণ সেই পরিস্থিতি দেশে এখন নেই। তারা এক সময় কেয়ারটেকার সরকারের জন্য আন্দোলন করেছে এখন তারা কেয়ারটেকার সরকারের বিরোধিতা করে। সেলফি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বললেন- 'এক সেলফিতে বিএনপি নেতাদের ঘুম হারাম'। প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে থাকা অবস্থায় যখন ভিসা নীতি প্রয়োগ শুরু হয়েছে তখনই তাদের মুখটা শুকিয়ে গেছে। সে যেন করে ফেললাম (নির্বাচন) আর হয়ে গেল সেই পরিচিতি এখন আর নেই।



তিনি বলেন, আন্দোলনে যদি সরকারের বোধ উদয় হয়, কেয়ারটেকার ফিরিয়ে আনে, সংবিধানে সংযোজন করে তাহলে তো মিমাংসা হয়ে গেল। না হলে আমার বিশ্বাস আন্দোলন বলতে আমাদের দেশের মানুষ যেটা মিন করে সেটা সরকারের মুখোমুখি হতে হবে। শেখ হাসিনা ৯৬ সালে যে আন্দোলন করেছে সেই আন্দোলনের মুখোমুখি হওয়া লাগতে হতে পারে। আওয়ামী লীগ যেটা করেছে সেটা আবার ফিরে আসতে পারে।


বিএনপি'র যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বিবার্তাকে বলেন, এখন আমাদের চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচি চলছে। সরকার যদি দাবি না মানে তাহলে ৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াত যে কর্মসূচি দিয়েছিল সরকারকে বাধ্য করেছিল আমরা একই রকম কর্মসূচি দেব।



খোকন বলেন, তারা যতই বক্তব্য দেক না কেন ১৪ এবং ১৮ সালের মতো নির্বাচন দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। সরকার তো দেশ চালাতে পারছে না। দেশের অর্থনীতির অবস্থা প্রচন্ড খারাপ। জিনিসপত্রের দাম এতটাই বেড়েছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। করোনার সময় ইন্ডিয়ার সাথে ভ্যাকসিনের জন্য চুক্তি করেছিলো তারা পারেনি পরে আমেরিকা সাহায্য করেছে এখন তাদেরকে গালি দিচ্ছে। ডেঙ্গুতে শত শত লোক মারা গেলেও সরকারের কোন কার্যক্ষমতা নেই। শ্রীলংকার থেকেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। তারা বাংলাদেশের দেনা শোধ করছে, আর বাংলাদেশে এখনো ঋণ নিচ্ছে। এলসি করতে পারছে না। বিদ্যুৎ খাতে বড় বড় দুর্নীতি, ব্যাংক সব লুট করে নিয়ে গেছে টাকা নেই। সাধারণ মানুষ বিদেশ থেকে পাঠায়, আর তারা সব বিদেশে পাচার করে দেয়।



বিবার্তা/এমই/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com