শিরোনাম
তৃণমূল বিএনপি নিয়ে শঙ্কিত নয় বিএনপি নেতাবৃন্দ
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০৯
তৃণমূল বিএনপি নিয়ে শঙ্কিত নয় বিএনপি নেতাবৃন্দ
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। একই দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিরোধী দল ও জোটগুলো।


এমন পরিস্থিতিতে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কীভাবে অংশগ্রহণমূলক করা যায় সেই কৌশল আঁটছে ক্ষমতাসীন দল। এমন সময় শুরু হয়েছে নতুন দল ও জোট গঠনের প্রক্রিয়া।


এরই অংশ হিসেবে কাউন্সিলের মাধ্যমে মাঠে নেমেছে বিএনপির সাবেক প্রয়াত নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার গঠন করা দল তৃণমূল বিএনপি। কিন্তু নাজমুল হুদার এই দল নিয়ে মোটেই শঙ্কিত নয় বিএনপি।


আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে এর চেয়ারপারসন এবং মহাসচিব হয়েছেন বিএনপি’র সাবেক দুই নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। মঙ্গলবার ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের প্রথম সম্মেলন ও কাউন্সিলে দলটির ২৭ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদাকে দলটির নির্বাহী চেয়ারপারসন নির্বাচিত করা হয়েছে।


শমশের মুবিন চৌধুরী কর্মজীবনের শুরুতে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গুরুতর আহত হওয়ায় স্বাধীনতার পর তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। তিনি পরবর্তী সময়ে পররাষ্ট্রসচিব ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর যোগ দেন বিএনপিতে, হন দলটির ভাইস চেয়ারম্যানও। তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে ঘিরে হতাশা ও অভিমান থেকে ২০১৫ সালের অক্টোবরে দলটি থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া শমশের মুবিন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আবার নতুন দলের নেতৃত্ব নিলেন।


তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে দলের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচন করায় বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ক্ষমা চেয়ে দলে ফিরতে চাইলেও তাকে আর স্থান দেয়া হয়নি।


প্রথম কাউন্সিলে দলটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘সংবিধান মেনে নির্বাচনে যাবো আমরা। আমাদের বিশ্বাস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, প্রশাসনসহ অন্যরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।


পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে জনগণের প্রত্যাশিত সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।’


কাউন্সিলে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘বিএনপি আমাকে বহিষ্কারের পর দেড় বছর অপেক্ষা করেছি। তৃণমূল বিএনপিতে কাউকে এভাবে অবহেলা করা হবে না। এই দল জনগণের রাজনীতি করবে। কোনো প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হবে না।’


বিএনপি নেতারা বলেন, সরকার নির্বাচনের পূর্বে জাতীয় পার্টির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না বলেই তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দিয়েছে। তারা আবার নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করছে। এতেই বোঝা যায় নির্বাচন কমিশন যে নিবন্ধন দিয়েছে এটা পক্ষপাতমূলক। এই দল সরকারের পক্ষে থাকবে এজন্যই নিবন্ধন দিয়েছে। এটা আওয়ামী লীগের একটি নতুন ফ্রন্ট। এটা চেষ্টা করেছিল মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিন; তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে আওয়ামী লীগ। এতে বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই।


বিএনপি নেতারা আরও বলেন, তৃণমূল প্রতিষ্ঠা করেছে নাজমুল হুদা তিনি বিতর্কিত একজন মানুষ ছিলেন। তিনি মারা গেছেন কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল বিএনপিকে ডিস্টার্ব করে সরকারকে সহায়তা করা। নির্বাচনের একটা কৌশল হিসেবেই এই দলের উত্থান হয়েছে।


বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বিবার্তাকে বলেন, যারা তৃণমূল করেছে তারা বিএনপির কেউ নয়। একজনে বিএনপি'র বহিষ্কৃত, আরেকজনে অব্যাহতিপ্রাপ্ত। তৃণমূল প্রতিষ্ঠা করেছে নাজমুল হুদা তিনি বিতর্কিত একজন মানুষ ছিলেন। তিনি মারা গেছেন কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল বিএনপিকে ডিস্টার্ব করে সরকারকে সহায়তা করা। যারা ওখানে গিয়েছে তারা সরকারের লোক। যারা ২৭ সদস্যের কমিটি গঠন করতে পারে না তারা ৩০০ আসনে নমিনেশন দেবে! সরকার উদ্যোগ নিলে ৩ শত আসন কেন ১ হাজার আসনেও নমিনেশন দিতে পারবে। এটা আওয়ামী লীগের একটি নতুন ফ্রন্ট। এটা চেষ্টা করেছিল মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিন; তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে আওয়ামী লীগ। এতে বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, গণতন্ত্র মানে তারা মানুষের ব্যক্তি অধিকার, সাংগঠনিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করে না। কিন্তু এখন গণতান্ত্রিক সরকার বা রাষ্ট্র নয়, এটা একটা ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী। সেই জন্য আওয়ামী লীগ গৃহপালিত বিরোধী দল বানিয়েছে। গৃহপালিত একটি রাজনৈতিক দল তৈরি করেছে।


তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি থেকে আরো অনেকেই চলে আসবে, একটু অপেক্ষা করলে তা দেখা যাবে।


ড. হাসান মাহমুদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, তথ্যমন্ত্রী যেহেতু আওয়ামী লীগের লোক তিনি ওই দলে যোগ দিলে আরো ভালো হয়। বিশ্বাসযোগ্যতার বাড়বে। তৃণমূলের যে কী হবে তথ্যমন্ত্রীর মাথাব্যথাই সেটা প্রমাণ করে।


বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বিবার্তাকে বলেন, তৃণমূল বিএনপি'র যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা বিএনপি নেতা নয়। বিএনপি থেকে কেউ যায়নি। ২০১৪ সালে শমসের মবিন চৌধুরী আন্দোলন সংগ্রামের ভয়ে পদত্যাগ করেছে।


আরেকজনকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কার (তৈমুর আলম খন্দকার) করা হয়েছে। তৃণমূল বিএনপি থেকে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও শক্তিশালী অনেক দল রয়েছে। সরকার জাতীয় পার্টির উপর আস্থা রাখতে পারছে না। এতগুলো রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র দুটো দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে এবং তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। এতেই বুঝা যায় নির্বাচন কমিশন যে নিবন্ধন দিয়েছে এটা পক্ষপাত মূলক। এই দল সরকারের পক্ষে থাকবে এজন্যই নিবন্ধন দিয়েছে।


তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ বিএনপি করে। এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় এসে বিএনপি'র প্রায় নেতাদের নিয়ে গিয়েছিল। সেগুলোর এখন আর অস্তিত্ব নেই। আওয়ামী লীগ থেকেও অনেকে গেছে কিন্তু সেগুলো নেই। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ বড় দুটি দল এখান থেকে অনেকে রাগে ক্ষোভে, লোভে বিভিন্ন কারণে তারা ভাগ হয়। কিন্তু তারা এত বেশি ভালো করতে পারে না। এতে বিএনপির কোনো ক্ষতি হবে না।


বিএনপির সংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বিবার্তাকে বলেন, নির্বাচনের কিছু লোক নিজেদেরকে জাহের করা এবং চাহিদা পূরণের জন্য আত্মপ্রকাশ ঘটে। সারা জাতি জানে এটা একটি অবৈধ সরকার। অবৈধ সরকার কোন বৈধ নির্বাচন দিতে পারবে না এবং করবেও না। এখন অবৈধ কে যারা বৈধ করতে যাবে তারা অবৈধর দোষর ছাড়া কেউ নয়। তৃণমূল ৩০০ আসন প্রার্থী দিবে নেই তিনজন লোক। এখন দলে যোগ দিয়েই একজন চেয়ারম্যান একজন মহাসচিব হয়ে গেলেন। এই দলের জন্মই হয়েছে অবৈধ সরকারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য। ৩০০ আসনে নির্বাচন করার জন্য সক্ষমতা তাদের নেই। আওয়ামী লীগের সহতাকার জন্যই তাদের পরামর্শে, তাদের সহায়তায় ৩০০ আসনের লোক দিতে পারে। কিন্তু জনগণ তাদেরকে গ্রহণ করেনি এবং করবেও না।


বিবার্তা/এমই/এসবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com