
সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ এক দফা দাবিতে রাজপথে নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের অধীন ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার সাফ ঘোষণাও দিয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক জোটগুলো। তবে এরইমধ্যে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এমনকি আগামী নভেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
চলতি মাসের শুরুতে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান জানিয়েছেন ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এখনো ভোটগ্রহণের কোনো নির্ধারিত তারিখ ঠিক হয়নি। সরকার বিরোধী দলগুলো রাজপথে আন্দোলন করলেও সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। তাই সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি মানার সুযোগ নেই। আর এ লক্ষ্যে ভোটের প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজপথে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় প্রস্তুতিও রয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক জোটগুলোর আন্দোলন মোকাবিলা করার পাশাপাশি ভোট প্রস্তুতি নিতে দলের নেতা-কর্মীরা কাজ শুরু করেছে। এছাড়া আন্দোলন করলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে বলেও আশা প্রকাশ করছেন তারা।
জানা গেছে, গত ১২ আগস্ট গণভবনে অনুষ্ঠিত হওয়া সর্বশেষ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া তৃণমূলে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দূর করা, বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা ও তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের করা উন্নয়নের চিত্র জনগণের কাছে তুলে ধরার নির্দেশনা দেন।
সভায় প্রত্যেক সম্ভাব্য প্রার্থীকেই এলাকায় গিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা দলের নেতাদের বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষেকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। আবারো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। আওয়ামী লীগের অন্যতম লক্ষ্য আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়া।
কার্যনির্বাহী কমিটির এ সভায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের পর জেলা পর্যায়ে সমাবেশের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। ভোটের প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এসব কর্মসূচির অংশ হিসেবে চলতি মাসের পহেলা সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ। পরদিন ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে সুধী সমাবেশে ঢাকা বিভাগের নেতা-কর্মীদের এনে নিজেদের শক্তি জানান দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন পর্যন্ত ভোটের প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজপথের কর্মসূচিতেও থাকবে দলটি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিবার্তাকে বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনমুখী দল, সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জনগণের ভোটাধিকার সংরক্ষণে সবসময়ই লড়াই করেছে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচনের দাবি করলে তা মানা সম্ভব নয়। দেশের গণতন্ত্রকে আরো শক্তিশালী করার পথেই আমাদের হাঁটতে হবে। এখন কেউ যদি সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন ঠেকাতে চায়, তবে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে তারা কী চায়।
তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার ও সংসদ উপনির্বাচনের মাধ্যমে সব মহলের আস্থা অর্জন করেছে। এই স্বাধীন নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম। নির্বাচন সামনে রেখে অতীতে বিএনপি সহিংস কর্মকাণ্ড করে দেশ ও মানুষের ক্ষতি করেছে। ভবিষ্যতে কেউ যেন আর কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার মাধ্যমে জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যাপারে দলের নেতা-কর্মীরা সতর্ক রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বিবার্তাকে বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী নির্বাচনমুখী দল। আওয়ামী লীগ সব সময় গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাস করে এবং ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন চায়। নির্বাচন সামনে রেখে অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলার লক্ষ্যে আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো অব্যাহত আছে। এটা নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
কুমিল্লায় নিজ নির্বাচনী এলাকায় কয়েক মাস ধরে গণসংযোগ, মতবিনময় সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর। তিনি বিবার্তাকে বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে আসতে ভয় পাচ্ছে বিএনপি। জননেত্রী শেখ হাসিনাই আগামীতে টানা চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন। তিনি দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা দেশের সব সেক্টরে উন্নয়ন করেছেন। সেই সুফল দেশের জনগণ পেতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন। দেশে অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু এসব উন্নয়ন কার্যক্রম দেখে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তারা চায় না দেশ উন্নত সমৃদ্ধ হোক। এরা চায় দেশকে জিম্মি করে রাখতে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে সকল ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে সামনে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]