‘নুর একটা অসৎ ছেলে- ক্রিমিনাল, দুষ্কৃতকারী’
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:৫৯
‘নুর একটা অসৎ ছেলে- ক্রিমিনাল, দুষ্কৃতকারী’
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি (সহ-সভাপতি) নুরুল হক নুর একটা থার্ড ক্লাস দুষ্কৃতকারী, একেবারে রাস্তার দুষ্কৃতকারী, জঘন্য একজন দুষ্কৃতকারী। সে অনেক ধরনের কথাই বলে- এখন তার বাবা নাকি জমিদার হয়েছে! তার বাবা ছিল কৃষক- এখন নাকি প্রচুর জমির মালিক হয়েছে। সে (নুর) তিন কোটি টাকায় একটি অফিস কেনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। আমি ৪০ বছর হালাল পয়সা উপার্জন করেছি চাকরিতে, সে (নুর) ৪০ পয়সা উপার্জন করেছে এরকম কোনো প্রমাণ আমি দেখিনি। সে একটা অসৎ ছেলে- ক্রিমিনাল, দুষ্কৃতকারী। ওর মুখ থেকে অনেক রকম কথা বের হবে- আমি ওইগুলো কোন পাত্তা দিচ্ছি না।


কথাগুলো বলেছেন ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি গণঅধিকার পরিষদের (একাংশের) আহ্বায়ক এবং আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ কিবরিয়ার ছেলে। এর আগে ড. রেজা কিবরিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচন পূর্বে আকস্মিকভাবে ড. কামাল হোসেনের গণফোরামে যোগ দেন। গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছিল ড. রেজা কিবরিয়াকে- নির্বাচনের পর তাকে সাধারণ সম্পাদক করেন ড. কামাল হোসেন। ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া দলীয় পদ ও সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এরপর গণ অধিকার পরিষদ গঠন করলে তিনি আহ্বায়কের দায়িত্ব পান।


সম্প্রতি বিবার্তার সাথে একান্ত কথাবার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবার্তা প্রতিবেদক মোহাম্মদ ইলিয়াস



বিবার্তা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ কীভাবে দেখছেন?


রেজা কিবরিয়া: আমি এটা মানি না বিদেশিদের প্রভাব বাংলাদেশের উপর কখনো ছিল না, হঠাৎ কেন তারা করছে। আমি বলব নবম শতাব্দীর পর থেকে বাংলার উপর দিল্লি একটি প্রভাব আছে। দিল্লির সুলতানরা বাংলার সুলতানদেরকে কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করত এবং মুঘল, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানদের ইতিহাস তো সকলেই জানে। বাংলাদেশের বাইরে থেকে বড় বড় পরিবর্তন এসেছে এটা স্বাভাবিক, আমরা এটা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। তার মানে কি মুক্ত হতে পারব না তা নয়। নতুন প্রজন্মকে বলতে চাই দেশটাকে আমরা যদি সমৃদ্ধ করতে পারি, শক্তিশালী করতে পারি, আমাদের অর্থনীতি যদি সাউথ কোরিয়ার মতো চলে যায় তখন আমরা আসল মুক্তি পাবো। তখন বিদেশি প্রভাবের সম্ভাবনাটা কমে যাবে। কারণ দেশ তখন রাজনৈতিক ভাবে, অর্থনৈতিক ভাবে এবং সামরিক দিক থেকেও শক্তিশালী হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। সেটা ভবিষ্যতে হবে। কিন্তু ইতিহাসে আমরা যে স্বাধীন ছিলাম, এটা মিথ্যে কথা। বিদেশিদের প্রভাব আমাদের ওপর বিভিন্ন ভাবে পরে, আমাদের রেমিটেন্সের উপর তাদের কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) রয়েছে, আমাদের সেনাবাহিনী, শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বড় একটি প্রভাব রয়েছে। এছাড়া গার্মেন্টস মার্কেট তাদের হাতে। তারা অনেক ভাবে অর্থনীতিতে প্রভাবিত করতে পারে এবং ভবিষ্যতেও কিছুদিন থাকবে। যতদিন আমরা শক্তিশালী না হই।


বিবার্তা: গণঅধিকার পরিষদের পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার নিয়ে কী বলবেন?


রেজা কিবরিয়া: আমি এই দলের যোগ দিয়েছিলাম আমার একজন শ্রদ্ধেয় মানুষের অনুরোধে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছিলেন যুবসমাজের এই উদ্যোগকে তুমি সাহায্য করো, তুমি সাপোর্ট করো। এ কারণেই এই দলে যুক্ত হয়েছিলাম। নুর যে টাকার ব্যাপারে এত অসৎ এটা আমি বুঝিনি। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে আমি জড়িত হব এই বয়সে- এটা আমি আশাও করিনি। আমার দলে থেকে সে ইসরাইলের সাথে মিট করে আমাকে মিথ্যা কথা বলেছে, জনগণকে তো বলেছে, সাংবাদিকদেরও বলেছে। সে চেয়েছিল আমি যেন ওর মিথ্যাটাকে প্রচার করি যে ও ইসরাইলের সাথে সাক্ষাৎ করেনি। আমি বলেছি এ ব্যাপারে না বুঝে, না জেনে কিছু করতে পারবো না। তারপরে তো প্রমাণই হলো। মেন্দি সাফাদি সময় টিভিতে বললো এরসাথে (নুর) তিন ঘণ্টা কথা হয়েছে। সো ইসরাইলের সাথে তো আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না।


বিবার্তা: বিএনপি ভাঙার এজেন্ডা নিয়েছে রেজা কিবরিয়া নুরের এমন বক্তব্য কীভাবে দেখছেন?


রেজা কিবরিয়া: সে (নুর) একটা থার্ড ক্লাস দুষ্কৃতকারী, একেবারে রাস্তার দুষ্কৃতকারী, জঘন্য একজন দুষ্কৃতকারী। সে অনেক ধরনের কথাই বলে, এখন তার বাবা নাকি জমিদার হয়েছে! তার বাবা ছিল কৃষক, এখন নাকি প্রচুর জমির মালিক হয়েছে। সে (নুর) তিন কোটি টাকায় একটি অফিস কেনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। আমি ৪০ বছর হালাল পয়সা উপার্জন করেছি চাকরিতে, সে (নুর) ৪০ পয়সা উপার্জন করেছে এরকম কোনো প্রমাণ আমি দেখিনি। সে একটা অসৎ ছেলে- ক্রিমিনাল, দুষ্কৃতকারী। ওর মুখ থেকে অনেক রকম কথা বের হবে- আমি ওইগুলো কোন পাত্তা দিচ্ছি না।


বিবার্তা: বাংলাদেশে এ পর্যন্ত অনেক মামলার রায় হয়েছে কিন্তু আপনার বাবার মামলার রায় এখনো সম্পন্ন হয়নি- বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?


রেজা কিবরিয়া: আমাদের পরিবার থেকে এখনকার চার্জশিট আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। এখনকার তদন্ত একটি সীমিত তদন্ত, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত তদন্ত- আমরা এটাকে প্রত্যাখ্যান করেছি। একটা ডিফেক্টিভ (ত্রুটিপূর্ণ) তদন্তের ভিত্তিতে একটি সঠিক বিচার হতে পারে না- আমরা সেটা বলতে চাই। এই সরকারের অধীনে কোন বিচারের ওপর আমার আস্থা নেই, বিশ্বাস নেই। তাদের প্রত্যেকটি বিচারের ওপরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পর্যন্ত সবকিছুতে সমস্যা আছে। রাজনৈতিক প্রভাবে কোর্ট চলে এটা খুব দুশ্চিন্তার কারণ। এ কারণে কোর্টের ওপরে মানুষের আস্থা কমে গেছে। আইন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। আইনের শাসন ফেরত আনতে অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু এটা অসম্ভব নয়, একটি দেশের পুরো আইনি কাঠামো ধ্বংস হওয়ার পরও এটাকে পুনরুদ্ধার করার পথ রয়েছে। বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থায় ভালো লোক এখনো রয়েছে। আমি সুপ্রিম কোর্টে দেখেছি খুব বুদ্ধিমান এবং দেশপ্রেমিক লোক রয়েছে। তারা সাহায্য করবে এসব ঠিক করার ব্যাপারে।



বিবার্তা: হঠাৎ আদালত ও রাজনীতিতে ড. ইউনূস ইস্যু এ বিষয়ে কী বলবেন?


রেজা কিবরিয়া: রাজনৈতিক কারণে তার ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে লেগেছে কিছুটা ঈর্ষান্বিত হয়ে। সরকার প্রধান ভাবেন যে ওনাকে নোবেল প্রাইজ না দিয়ে ইউনূসকে দেয়া হয়েছে। নোবেল কমিটি ঘুষ খেয়েছে- ওনার লোকজন এই সমস্ত কথাবার্তা বলে। অশিক্ষিত লোকজনরা অনেক কিছুই বলে, এতে রাগ করার কিছু নেই। এটাও বলতে শোনা গেছে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ১০০ জন নোবেলজয়ী সাক্ষর করেছে সেটা নাকি টাকার বিনিময়ে করেছে। আপনাদের তো টাকার কোন সীমা নেই, তাহলে শেখ হাসিনার পক্ষে ১০০ জন নোবেল বিজয়ীকে দিয়ে সাক্ষর করান। প্রত্যেকের জন্য যদি ১০ মিলিয়ন করে বাজেট করেন তারপরও পাঁচটা স্বাক্ষর পাবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে।


বাংলাদেশের আদালতের কোন রায় এখন আমি বিশ্বাস করি না। তদন্ত বিশ্বাস করি না এবং আদালতের রায়গুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ আদালত এখন সরকার দ্বারা রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত। উনার (ইউনূস) বিরুদ্ধে যে সকল কেস করেছে এটা যদি ৩০ হাজার কোটি টাকার মামলা করতো, যারা ইসলামী ব্যাংক লুট করেছে তাদের বিরুদ্ধে করত তাহলে একটি কথা ছিল। তাদেরকে ছেড়ে ওনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে সেটা হাস্যকর। উনি সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। উনার বিরুদ্ধে লেগে থাকা আমার মনে হয় না আমাদের দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য ভালো। অনেক দেশ বাংলাদেশের নাম শোনেনি, কিন্তু ড. ইউনূসকে চেনে। এটা অস্বীকার করে কোন লাভ নেই, আপনি তাকে পছন্দ করেন আর নাই বা করেন এতে কিছু আসে যায় না। তাকে মানুষ সম্মান করে সারা পৃথিবী জুড়ে।


বিবার্তা: দেশের চলমান পরিস্থিতি উত্তরণের পথ কী?


রেজা কিবরিয়া: দেশে একটি বড় পরিবর্তন দরকার। দেশের গণতন্ত্র অবকাঠামোগুলো গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে। বিশেষ করে আমাদের ইনস্টিটিউশনস। বিভিন্ন সংস্থাকে দলীয়করণ করে এবং তাদেরকে দলীয়করণ করে বিনষ্ট করেছেন। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী সব কিছুকে এই সরকার ধ্বংস করেছে। তাদের প্রফেশনালিজম ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তারা ঠিকমতো কাজ করছে না। এখন নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে, কিন্তু দেশের শত্রুর দিকে নজর নেই। নজর হলো বিরোধীদলের দিকে- কারণ তারা সরকারের শত্রু। সরকারি শত্রু এবং দেশের শত্রু বলতে তারা কিছু বোঝে না। নিজেদের ফ্রান্সের রাজার মতো মনে করে সরকার প্রধান। সে মনে করে এটা তার বাপের সম্পত্তি, তিনি সেভাবেই চালাচ্ছে। এটাতে বড় একটি সংস্কার দরকার। আমি মনে করি সেপারেশন অফ পাওয়ার (ক্ষমতা পৃথকীকরণ) দরকার। জুডিশিয়ারিকে আইন ব্যবস্থা থেকে পৃথক করা, তাদেরকে স্বাধীনতা দেওয়া। বড় একটি সংস্কারের পর তাদেরকে পাওয়ার দিতে হবে, এখন দিলে হবে না। কারণ এখন তো সব দলীয়করণ করে ফেলা হয়েছে।



যদি সুষ্ঠু নির্বাচনও হয় পাঁচ বছর পরপর আপনারা একটা স্বৈরাচারকে নির্বাচিত করছেন। তারওপর কোন চেক নাই, কোন কন্ট্রোল নেই, দেশের মধ্য দ্বিতীয় শক্তি নেই তার কোন অনিয়ম ধরবে বা কোন দুষ্কর্ম ধরে দিতে পারবে। চেক এন্ড ব্যালেন্সের ক্ষেত্রে সংবিধান ইফেক্টিভ নয়। আরও অনেক কাজ রয়েছে- ইনস্টিটিউশনকে রিকভার করতে হবে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ এটাকে ঠিক করতে হবে, অর্থনীতির ক্ষেত্রে ডিটেইলস কিছু বলবো না, শুধু বলবো ব্যাংকে যে হরিলুট হচ্ছে সেটাকে বন্ধ করতে হবে। বাজেটের মধ্যে যে টাকা হরিলুট হচ্ছে- যেই প্রজেক্ট হওয়ার কথা সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার, সেটা খরচ করে সাড়ে ১৩ মিলিয়ন ডলার। বাকি টাকা কোথায় গেছে আমরা আন্দাজ করতে পারি। বিদেশে তাদের অ্যাকাউন্টে গেছে। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে এগুলো পরিচালনা করেছে। এগুলোর বড়ো পরিবর্তন দরকার। দেশ চালানোর ব্যাপারে জনগণও বুঝে যে তাদের টাকা চুরি হচ্ছে এবং এই সরকার তাদের ওপর যে ঋণের বোঝা রেখে যাবে এটা খুব দুঃখজনক। এ সরকারের দুর্নীতি দীর্ঘমেয়াদি; এই সরকার চলে গেলেও তাদের লাগামহীন দুর্নীতির প্রভাব নতুন প্রজন্মের ওপর পরবে। ওই করগুলো পরবে দুর্নীতির প্রজেক্টের ঋণগুলো শোধ করার জন্য। সকলের এটাতে একটা ইন্টারেস্ট আছে। এই দুর্নীতি বন্ধ করা এবং দেশটা ঠিক পথে নিয়ে যাওয়া। এটা খুব কঠিন কাজ, জানি না কী করে হবে? কিন্তু আমি জানি বাঙালির মধ্যে সেই সাহস, দৃঢ়তা আছে। একটি জঘন্য পরিস্থিতির মধ্য থেকে একদিন উঠে আসবো, এটা আমি বিশ্বাস করি।


বিবার্তা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


রেজা কিবরিয়া: আপনাকে এবং বিবার্তাকেও ধন্যবাদ।


বিবার্তা/রোমেল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com