ড. ইউনূস কি আইনের ঊর্ধ্বে!
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:৩৮
ড. ইউনূস কি আইনের ঊর্ধ্বে!
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

চলতি বছরের মার্চ মাসে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের ৪০ জন বিশ্বনেতা। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন-এর মতো ব্যক্তিত্বরা ছিলেন।


ওই খোলা চিঠির ধারাবাহিকতায় চলতি মাসে আবারো প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১০০ জনেরও বেশি নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতা একটি নতুন চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসনের মতো ব্যক্তিত্ব।


বিশ্বনেতাদের এমন খোলা চিঠিকে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বিশ্বনেতাদের এমন চিঠির কড়া সমালোচনা করে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, ড. ইউনূস নোবেল বিজয়ী হোন আর রাষ্ট্রপতি হোন; কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি শাস্তি ভোগ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচার হচ্ছে। বহু নোবেলজয়ীর বিচার হয়েছে, জেলখানাতেও গেছে। আর ড. ইউনূস সাহেব নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বলে কি তার শ্রমিকের পাওনা মজুরি মওকুফ হয়ে যাবে?


দলটির নেতারা বলছেন, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ড. কামালের ওপর ভর করেছিল। এবার আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি ড. ইউনূসের ওপর ভর করেছে, তার ইস্যুতে আশ্রয় নিয়েছে। এভাবে আশ্রয় নিয়ে যারা খুনের রাজনীতি করে, মানুষ পোড়ানোর রাজনীতি করে, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করে, খুনের ওপরে যাদের জন্ম, রক্তের ওপরে যাদের রাজনীতি- তাদের দিয়ে দেশের অগ্রগতি হয় না।


বাংলাদেশের প্রতি বিশ্ব নেতাদের সমর্থন আছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বৃহস্পতিবার (সেপ্টেম্বর) প্রথমবারের মতো ঢাকা সফরে আসছেন। আবার ১০ তারিখে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রো দেশে আসবেন। এছাড়া আগামী ৯ তারিখে ভারতের নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়া থেকে শুধু বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে শিল্পায়নে বিশ্ব শীর্ষ ২০ দেশের বর্তমান চেয়ার ভারত। এতে প্রমাণ হয় বিশ্বসম্প্রদায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে আছে।


ড. ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা খোলা চিঠির শুরুতে লেখা হয়েছে, আমরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতার পাশাপাশি বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনাদের জাতি যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে আমরা তার প্রশংসা করি। কিন্তু, সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি দেখেছি তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং নির্বাচনে প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল।


বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তা হলো- নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। আমরা উদ্বিগ্ন যে, সম্প্রতি তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটা ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি বলেই আমাদের বিশ্বাস। এর আগে ৪০ জন বিশ্বনেতা তার নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আপনার কাছে যে আবেদন করেছিলেন এই চিঠিটি তার উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলারই চেষ্টা। আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করছি যে, আপনি অবিলম্বে অধ্যাপক ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন।


বিএনপি ড. ইউনূসকে নিয়ে মাঠে নামতে চায় বলে মন্তব্য করে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা আবার ওয়ান-ইলেভেনের মতো দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।


তিনি বলেন, তাদের এ আশা পূরণ হবে না। গত নির্বাচনে এই অশুভ শক্তি ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে যে খেলা শুরু করেছিল, এ বছর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সামনে রেখে সেই খেলা খেলতে চায়। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।


জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বিবার্তাকে বলেন, বিশ্বের কতোগুলো দেশ, বিশেষ করে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। নির্বাচন নিয়ে তাদের কথা বলার কারণ কিছুটা আমরা বুঝি। তার একটা বড় কারণ, তারা ভাবছে যে দেশে তাদের বিনিয়োগ আছে। তারা উন্নয়ন অংশীদার। বিদেশি চক্রান্ত আছে, আপনারা ভালো করে বোঝেন।


এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বিবার্তাকে বলেন, শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলার আসামি নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিশ্ব নেতাদের বিবৃতি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ।


তিনি বলেন, ২০০৭ সালের কুশীলব ড. ইউনূস আবার মাঠে নেমেছেন। তাকে নিয়ে বিশ্বের অনেক বড় বড় পণ্ডিতরা বিবৃতি দিচ্ছেন। কারণ হলো ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অর্থ আত্মসাতের যে মামলা সেই মামলা বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না কারণ উনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বলে কি তিনি আইনের ঊর্ধ্বে, বিচারের উর্ধ্বে! তাকে কিচ্ছু বলা যাবে না।


মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনি প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করেছেন। বাংলাদেশ থেকে দুই বিলিয়ন ডলার বৈধ পথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাহলে নিশ্চয়ই অবৈধ পথে মানি লন্ডারিং করে টাকা নিয়ে গেছেন। এসব কিছুর তদন্ত করে মানি লন্ডারিং-এর দায়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা উচিত। যে টাকা পাচার হয়েছে সে টাকা ফিরিয়ে নিয়ে আসা দরকার। বাংলাদেশের জনগণের টাকা নিয়ে যাবে আর দেশের মানুষ কথা বলবে না। তার বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না। উনি আইনের ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন? এটা ভাবার কোন কারণ নেই।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com