বঙ্গবন্ধু হত্যার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন জিয়াউর রহমান : হানিফ
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১৩:৫০
বঙ্গবন্ধু হত্যার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন জিয়াউর রহমান : হানিফ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।


তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যায় জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন তার প্রমাণ তিনি নিজের একাধিক কর্মকাণ্ডে রেখে গেছেন। যদিও তার বিচার হয়নি, তিনি মারা গেছেন। কিন্তু তার মরণোত্তর বিচার চেয়েছে এদেশের জনগণ।


বুধবার (৯ আগস্ট) সকালে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে কলেজ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।



বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত না থাকলে জিয়া কেন খুনিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করলেন- এমন প্রশ্ন রেখে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, কর্নেল ফারুক, রশীদরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে জিয়াউর রহমানের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেছিলেন। তিনি তাদের এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ, পরামর্শ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাদেরকে শুধু পুরষ্কৃত করে ক্ষান্ত হননি ইনডেমনটি করে খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।


তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার কারা হত্যা করল, কারা জড়িত ছিল? বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে। কোন হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে? যারা সরাসরি অংশ নিয়েছিল। কিন্তু এরাই মূল অংশগ্রহণকারী নয়, এরা শুধু দায়িত্ব পালন করেছিল। এর পেছন থেকে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল তারা কারা? তাদের বিচার হয়নি। আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুক, রশীদরা অনেক তথ্য দিয়ে গিয়েছে। কারা সহায়তা করেছে বলে গিয়েছে।


তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে অনেক বড় বড় শক্তি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন আর আমাদের পাশে ছিল প্রতিবেশী বন্ধু ভারত। এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। আমাদের স্বাধীনতার জন্য যা দরকার সব করেছিল। এর পাশাপাশি আমাদের বড় বন্ধু ছিল রাশিয়া। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরও পরাশক্তি আমাদের বিপক্ষে ছিল, যাতে করে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে না পারে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী না হতে পারে সেজন্য ষড়যন্ত্র করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মূল চক্রান্ত করেছিল একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তান ও তাদের পরাশক্তি প্রভুরা। একাত্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধের জন্য তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। এদেশের সৈনিকদের ভাড়া করেছিল।



হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধু্ শূণ্য হাতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়ে মাত্র সাড়ে তিন বছরে রাষ্ট্রের একটা পূর্ণাঙ্গ কাঠামো দাঁড় করিয়েছিলেন। প্রশাসন ঢেলে সাজিয়েছিলেন। সেনা বাহিনী, বিমান ও নৌবাহিনী, পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা সেক্টর ঢেলে সাজিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ যখন সকল দুর্যোগ কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল সেই সময় তাকে হত্যার শিকার হতে হয়েছিল।


বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপি নামক দলটি কথায় কথায় আইনের শাসনের কথা বলে। এই দেশে আইনের শাসন লঙ্ঘন করেছিল কারা? বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করে প্রথম আইনের লঙ্ঘন করা হয়েছিল। বিএনপি নেতারা মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে কান্নাকাটি করেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর পরিবারের নারী ও শিশুদের নৃশংস হত্যার মধ্য দিয়ে মানবতার লঙ্ঘন ঘটিয়েছিল। এর চেয়ে বড় নৃশংসতা পৃথিবীতে আর হয়নি। এই নৃশংসতা কে করেছিল? এই জিয়াউর রহমান করেছিল।


হানিফ বলেন, জিয়াউর রহমান একটা সেক্টরের দায়িত্ব ছিল এজন্য অনেকে বলেন মুক্তিযোদ্ধা। আমি খুব একটা ভাবি না। জিয়া সিলেট অঞ্চলে দায়িত্বে ছিলেন। আমি সিলেটের প্রত্যেকটা উপজেলায় গিয়েছি। বহু জনসভায় আহবান করেছি জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে জানা আছে কি না? জিয়াউর রহমান পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন আজ পর্যন্ত একজন মানুষও এমন তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি।


বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিশ্ব নেতাদের মন্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মহান নেতা ছিলেন বিশ্ববাসী বলেছে। ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল আমেরিকার নিউজউইক পত্রিকা বঙ্গবন্ধুকে উপাধি দিয়েছিল 'পোয়েট অব পলিটিক্স', রাজনীতির কবি। বঙ্গবন্ধু রাজনীতির কবি ছিলেন। গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখেছিল তার মধ্যে ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেক বড় বড় নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। মুসলিম ভ্রাতৃত্বের একজন নেতা ইয়াসিন আরাফাত আক্ষেপ করে বলেছিলেন, বিশ্ব একজন মুসলিম বন্ধু হারাল এবং মহান নেতা হারাল। বঙ্গবন্ধু মতো নেতা দ্বিতীয়বার আসবে না।



হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ক্ষুদ্ধ হয়ে ইরাকে আমাদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিলেন এবং দেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। এবং বলেছিলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর মতো নেতাকে হত্যা করতে পারে তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। কিউবার ফিদের কাস্ত্রো বলেছিলেন, আই হ্যাভ নট সিন হিমালয়স, বাট আই হ্যাভ সিন শেখ মুজিব। হুজ পরসোনালিট এন কার্জড লাইক হিমালয়স। আমি হিমালয় পর্বত দেখিনি কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি, যার ব্যক্তিত্ব ও সাহস হিমালয়ের মতো। আমি তাঁর মধ্য দিয়ে হিমালয় দেখেছি। ১৯৯০ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া মিতেরঁ বাংলাদেশে এসে এরশাদকে ডেকে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো দ্বিতীয় নেতা আর হবে না।


আলোচনা সভা শেষে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যার কথা শুনে তা সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি। সভায় কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ শিশির কুমার রায়, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ সভাপতি ফেরদৌস খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/সোহেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com