নয়াপল্টনে মহাসমাবেশে অনড় বিএনপি
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৩, ০১:১২
নয়াপল্টনে মহাসমাবেশে অনড় বিএনপি
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ একদফা দাবিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বিএনপির পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সরকারের অনুমতি না পেয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার ২৮ জুলাই নয়া পল্টনেই মহাসমাবেশের আয়োজন করতে চায় বিএনপি৷



বুধবার (২৬ জুলাই) রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব দলের স্থায়ী কমিটির এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।



সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে দৃঢ় ভাবে বিশ্বাসী বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ২৭ জুলাইয়ের পরিবর্তে আগামী ২৮ জুলাই শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেলা ২টায় নয়া পল্টনে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিচ্ছে।'


তিনি বলেন, 'আমরা আশা করি দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলমান গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আয়োজিত এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানে সরকার কিংবা সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান বাধা সৃষ্টি করবে না।'


সংশ্লিষ্ট সকলকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মহাসমাবেশ সফল করার উদাত্ত আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।


বিএনপি সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টন চাইলেও বুধবার দুপুরে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, বৃহস্পতিবার যেহেতু কর্মদিবস, সে কারণেই নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দিতে চান না তারা। তাদের এখনো কোথাও অনুমতি দেওয়া হয়নি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ব্যাপারে হাই কোর্টের একটা অবজারভেশন আছে। আমরা তাদের গোলাপবাগ মাঠ দেখতে বলেছি।


এমন প্রেক্ষাপটে মহাসমাবেশের ভেন্যুসহ করণীয় নির্ধারণে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বিকেলে স্থায়ী কমিটির জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকের পর বিএনপির তরফ থেকে পুলিশকে জানানো হয়, তারা গোলাপবাগে যাবে না, একদিন পরে পল্টনেই সমাবেশ করবে।


এদিকে বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার ২৮ জুলাই যুগপৎভাবে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করবে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরামসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দল ও জোট। এসব দল ও জোট পৃথক সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতি দিয়ে ২৭ জুলাইয়ের পরিবর্তে ঢাকায় পৃথকভাবে সমাবেশের ঘোষণা দেয়।


মহাসমাবেশের যোগ দিতে রাজধানীতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এসে হাজির হয়েছে। বুধবার বিকেলেও নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আগতদের আনাগোনা দেখা যায়।



গত ১২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশ থেকে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এরপর ১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকাসহ দেশব্যাপী পদযাত্রা দিয়ে একদফা আন্দোলনে নামে দলটি। পরবর্তীতে ২২ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ থেকে ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওইদিন যুগপৎ আন্দোলনের অন্যান্য শরিক দল ও জোটগুলোও ঢাকায় পৃথকভাবে মহাসমাবেশের ডাক দেয়।



বিএনপি সূত্র জানায়, ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করতে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। তারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চায়। সেক্ষেত্রে মহাসমাবেশ থেকে একদফা দাবি আদায়ে সরকারকে ৬০ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিতে পারে দলটি। এ সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া না গেলে আগামী ৩০ জুলাই থেকে ঢাকায় ঘেরাওসহ টানা কর্মসূচিতে যেতে পারে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘেরাওয়ের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচির সূচনা হতে পারে। পরে পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয় ঘেরাওসহ ঢাকায় একাধিক সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে। সপ্তাহব্যাপী কিংবা ১০ আগস্ট পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলতে পারে। এরপর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কারণে সাময়িক বিরতি দিয়ে ২০ আগস্ট থেকে ফের কর্মসূচিতে যেতে পারে বিএনপি। দাবি আদা না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চায় তারা। আলোচনায় রয়েছে সমাবেশে বাধা দিলে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে পালন করা হবে। সেক্ষেত্রে টানা অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।


জানা গেছে, রাজধানীর মহাসমাবেশে সর্বোচ্চ উপস্থিতির পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। সমাবেশ সফল করতে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতা, বিভাগীয় ও বৃহত্তর ঢাকার নেতারা যৌথ সভা করেন। এছাড়া দফায় দফায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন প্রস্তুতিসভা করছে। মেডিকেল টিম, শৃঙ্খলা কমিটি, আপ্যায়ন কমিটি, মঞ্চ কমিটি গঠন করা হয়। সভা থেকে ঢাকার বাইরের প্রতি জেলা থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগ বাড়িয়ে সংঘাতে না জড়াতে দলের সকল সংগঠনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


আগামী শুক্রবার নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি না দিলে বিকল্প কোন চিন্তা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বিবার্তাকে বলেন, নয়পল্টন ছাড়া সমাবেশ করতে বিএনপির বিকল্প কোনো চিন্তা নেই। সমস্যা সমাধানের জন্যই পুলিশ আসছে, এছাড়া পুলিশের কাজ কী? পুলিশের কাজ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা। বিএনপি সমাবেশ ডাকার পরে বারবার তারিখ পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ সমাবেশ দিচ্ছে। তাদেরকে পুলিশ কতবার বলছে। বিএনপি কোন আইন শৃঙ্খলায় এ পর্যন্ত ব্রেক করেনি। বিএনপির সুশৃংখলভাবে প্রত্যেকটি সমাবেশ করেছে। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব আমাদের সমাবেশ করার বিষয়ে যতটুকু সহযোগিতা করার দরকার তারা যাতে ততটুকুই সহযোগিতা করেন।


বুধবার নয়া পল্টনের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'মহাসমাবেশ ঠেকাতে পুলিশ সারাদেশ থেকে নেতা-কর্মীদের আটক করা হচ্ছে। আমাদের মহাসমাবেশ হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। মহাসমাবেশে জনতার ঢল নামবে। আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। নেতা-কর্মীরা সরকারের সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মহাসমাবেশে যোগ দিয়ে সফল করবেন। কারণ, সময় এসেছে রাজপথে ফায়সালা করার।’


বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বিবার্তাকে বলেন, শুক্রবার রাজধানীতে মহাসমাবেশের বিষয়ে বুধবার রাতেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর নিকট চিঠি দিয়েছে বিএনপি।


বুধবার (২৬ জুলাই) রাতে ডিএমপি কমিশনার বরাবর দেয়া চিঠিতে বলা হয়, 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র উদ্যোগে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের তারিখ ২৭ জুলাই বৃহষ্পতিবার এর পরিবর্তে ২৮ জুলাই শুক্রবার অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র ২৮ জুলাই শুক্রবার দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিতব্য মহাসমাবেশের বিষয়টি আপনাকে অবহিত করা হলো।'


বিবার্তা/এমই/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com