বিএনপির মহাসমাবেশ
‘সরকার সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়’
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৩, ১৭:৫৯
‘সরকার সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়’
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বিএনপি। চলমান যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) একযোগে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপিসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দল ও জোট। অপরদিকে একইদিনে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গণে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিপরীত মেরুর দুই রাজনৈতিক শিবিরের কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।


বিএনপি সূত্র জানায়, আগামী ২৭ জুলাই মহাসমাবেশ থেকে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে এসব বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতা ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আপাতত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমেই সরকারের ওপর আরও চাপ তৈরি করতে চান তারা। মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে আল্টিমেটাম দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে টানা কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের। এরপর সচিবালয়সহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঘেরাও, রাজধানীর কয়েকটি স্থানে একযোগে লাগাতার সমাবেশ কর্মসূচির বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।


সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ থেকে ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। একই দিন যুগপৎভাবে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরামসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দল ও জোট। এসব দল ও জোট পৃথক সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতি দিয়ে ২৭ জুলাই ঢাকায় পৃথকভাবে সমাবেশের ঘোষণা দেয়।


মহাসমাবেশ সফল করতে সোমবার (২৪ জুলাই) নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতা, বিভাগীয় ও বৃহত্তর ঢাকার নেতারা যৌথ সভা করেন। এছাড়া দফায় দফায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন প্রস্তুতিসভা করছে। মেডিকেল টিম, শৃঙ্খলা কমিটি, আপ্যায়ন কমিটি, মঞ্চ কমিটি গঠন করা হয়। সভা থেকে ঢাকার বাইরের প্রতি জেলা থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগ বাড়িয়ে সংঘাতে না জড়াতে দলের সকলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


জানা গেছে, ২৭ জুলাই মহাসমাবেশে যোগ দিতে সারাদেশ থেকে আগেভাগেই ঢাকায় আসবেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সমাবেশে অংশ নিতে ইতোমধ্যে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী ঢাকায় চলে এসছেন। সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বিএনপি। এজন্য সকল জেলার শীর্ষ নেতাদের ডাক আসার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। মহাসমাবেশের পর ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীদের নিয়ে টানা কর্মসূচি পালনের চিন্তাও আছে বিএনপির হাইকমান্ডের। এ কারণেই ঢাকার বাইরে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।


মহাসমাবেশ সফল করতে সোমবার (২৪ জুলাই) নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা করে বিএনপি। সভা শেষে ২৭ জুলাইয়ের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কা করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যুবলীগের কর্মসূচি ছিল ২৪ জুলাই। আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করার পর যুবলীগ তাদের কর্মসূচি ২৭ জুলাইয়ে নিয়ে গেছে। সংঘাতপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি করতে তারা এটা করেছে, তা পরিষ্কার। কোনো ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’ ফখরুল বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, কয়েক দিন ধরে সরকারের মন্ত্রীরা হুমকি দিচ্ছেন। তারা এমন কথাও বলছেন, ছেঁকে ছেঁকে তোলা হবে। তাদের যে ভাষা, তা সন্ত্রাসী ভাষা। সরকারের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি উস্কানিমূলক কথা বলছেন। একই সঙ্গে তারা উস্কানিমূলক কাজও করছেন বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।


এদিকে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করতে চায় বিএনপি। এ দুটি স্থানের কথা উল্লেখ করে সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) অবহিত করা হয়েছে। দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ডিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত চিঠিতে বলা হয়, ‘শুভেচ্ছা নেবেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির উদ্যোগে আগামী ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। উল্লিখিত যেকোনো একটি স্থানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের বিষয়টি আপনাকে অবহিত করা হলো।’


২৭ জুলাই বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগের পাল্টা কর্মসূচির প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, সরকার যদি মনে করে দেশে আইন-শৃঙ্খলা থাকা দরকার তাহলে একই সময়ে পুলিশ এদেরকে (আওয়ামী লীগ) কর্মসূচির অনুমতি দিচ্ছে কেনো? আমাদের প্রশ্ন বিএনপির কর্মসূচির সময় তারা পাল্টা কর্মসূচি পালন করছে পুলিশ তখন কী করছে? তারা অনুমতি দিচ্ছে কেন, কেন হতে দিচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে দায়িত্ব সেটা তারা পালন করছে কিনা? দ্বিতীয়ত- ওরা যতই সহিংসতার রাজনীতি করুক, বিএনপির আন্দোলন হবে অহিংস ও অত্যন্ত সুশৃঙ্খল। আমরা সহিংসতার দিকে যাব না, অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাব। এটাই আমাদের নীতি, এটাই আমাদের রাজনীতি, এটাই আমরা করছি। যারা সহিংসতা করবে, তারা জনগণের সঙ্গে নেই, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাদের একমাত্র পথ হচ্ছে সহিংসতার মাধ্যমে টিকে থাকা। আমাদের প্রয়োজন নেই, কারণ আমাদের সাথে জনগণ রয়েছে।


মহাসমাবেশ থেকে কি বার্তা দেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু বার্তা যা দেওয়ার সেটা সমাবেশ থেকে দেবে এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।


বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বিবার্তাকে বলেন, আমাদের মহাসচিব বলেছেন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে। আমরা সংঘাত চাই না, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চাই। আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাই বিএনপি যখনই কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তি তৈরি করে। এদিকে ২৭ তারিখে মহাসমাবেশের দিন তারা পাল্টা সমাবেশ ঘোষণা করেছে। তারা দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে চায়। বিএনপির সমাবেশের দিন পাল্টা সমাবেশ ঘোষণা করে যদি কোন সংঘাত তৈরি করতে চায় তাহলে এর দায়ভার তাদেরকে নিতে হবে এবং করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। বিএনপি সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিশ্বাসী। জনগণকে সাথে নিয়েই দাবি আদায় করেই ছাড়ব।


১২ দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বিবার্তাকে বলেন, ২৭ জুলাই মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগের বার্তা দেওয়া হবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা দেখাতে চাই জনগণ এই সরকারের পদত্যাগ চায়। এজন্যই তারা স্বতঃস্ফূত রাজপথে নেমে এসেছে।


২৭ জুলাই রাজধানীতে আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সংঘাতে যাওয়ার কোন পরিকল্পনা নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা তার উল্টো, তারা ইচ্ছে করে কর্মসূচি ২৪ থেকে ২৭ তারিখে নিয়েছে গেছে। যাতে করে সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে। তারা সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়, কিন্তু আমরা চাই না।


বিএনপির সংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালে প্রিন্স বিবার্তাকে বলেন, আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিএনপির মহাসমাবেশের দিন পাল্টা সমাবেশ দিয়েছে। তারা সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। জনগণের আন্দোলনে ভীত হয়ে এখন দমন করার জন্য তারা সংঘাত, সংঘর্ষ, রক্তপাত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। পাল্টা কর্মসূচির মাধ্যমে যদি সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয় এর দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।


তিনি বলেন, আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনে রয়েছি, এই আন্দোলনের একটি পার্ট হচ্ছে মহাসমাবেশ। জনগণকে সম্পৃক্ত করে, আমরা ভিন্নমাত্রায় আন্দোলন করছি। আমরা সরকার কোন ফাঁদেই পা দেব না। সেজন্য আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করে ভিন্নধারার আন্দোলন করছি। সে আন্দোলনে সরকারের ভীত নড়ে উঠেছে। আমরা জনগণের সম্পৃক্ততার মধ্য এই সরকারের পতন ঘটাব।


সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপির) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বিবার্তাকে বলেন, ২৭ জুলাই মহাসমাবেশ থেকে জনগণের ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বাকস্বাধীনতার জন্য যা যা করা দরকার আমরা সেটাই করব। সেটা শান্তিপূর্ণভাবে করব। আমরা ২৭ জুলাই সমাবেশ অনেক আগেই ঘোষণা করেছি। যুবলীগের সমাবেশ ২৪ থেকে পিছিয়ে ২৭ জুলাই দিয়েছে। তারাই সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়। আমরা বলেছি শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ করব। আমরা অশান্তি করতে চাই না, দেশে যদি কোন অশান্তি তৈরি হয় সেটার জন্য দায় দায়িত্ব এ সরকারকে নিতে হবে।


২৭ জুলাই মহাসমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সকলেই একযোগে কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলেও জানান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।


বিবার্তা/রোমেল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com