সিটি নির্বাচন
আজীবন বহিষ্কারেও প্রার্থীতা ঠেকাতে পারছে না বিএনপি
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৩, ২৩:০২
আজীবন বহিষ্কারেও প্রার্থীতা ঠেকাতে পারছে না বিএনপি
মো. ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিএনপি। যে কারণে চলমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না দলটি। দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তারপরও সিটি নির্বাচনে অনেকে প্রার্থী হচ্ছেন, দলীয় ফোরামের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে আলোচনা ও চিঠি দেওয়ার পরও প্রার্থীতা ঠেকাতে পারছে না বিএনপি। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় ২৯ নেতাকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের এমন কঠোর অবস্থানের পরেও ঝুঁকি নিয়ে প্রার্থী হচ্ছেন নেতাকর্মীরা।


দলটির নেতারা বলছেন, তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকেই স্থানীয় সরকার ও জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন বর্জন করে আসছে। কিন্তু সরকার সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে ‘ফাঁদ’ পেতেছে। বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতেই অত্যন্ত কৌশলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়ে বিএনপিকে তাদের পাতা ফাঁদে আটকাতে চাচ্ছে। তবে বিএনপি সরকারের কোনো ফাঁদে পা দেবে না। তারা মনে করেন, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার উকিল আবদুস সাত্তারের মতো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কাউকে কাউকে মেয়র প্রার্থী করতে চেয়েছিল সরকার। কিন্তু তাতে সফল হয়নি।



গত ৩ এপ্রিল পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচন সমাপ্ত হয়। ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।



দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে অংশ নেয়াশ ২৯ নেতাকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। যদিও বহিস্কৃত ২৯ জনের মধ্যে ১৪ জনই কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এদিকে প্রার্থী হওয়ায় খুলনাশ ৮ জন, বরিশালে ১৯ জন ও সিলেটে ৪৩ নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি।


সর্বশেষ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ১৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।


বহিষ্কৃত নেতারা হলেন :


রাজশাহী মহানগরের রাজপাড়া থানা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান বদি, ১১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু বকর কিনু, শাহ মখদুম থানা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ টুটুল, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান লিটন, রাজশাহী মহানগর যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ বেলাল হোসেন, সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাদক রনি হোসেন রুহুল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান টিটু, রাজশাহী মহানগরের ২২নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা রিপন, বোয়ালিয়া থানা (পূর্ব) যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আলিফ আল মাহমুদ লুকেন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আনোয়ারুল আমিন আজব, মতিহার থানা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি আশরাফুল হাসান বাচ্চু, রাজশাহী মহানগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোসাঃ মুসলিমা বেগম বেলী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আলতাফুন নেসা পুতুল, ১নং যুগ্ম সম্পাদক সামসুন নাহার, সহ-সভাপতি শাহনাজ বেগম শিখা, ৪নং যুগ্ম সম্পাদক আয়েশা খাতুন মুক্তি।


গাজীপুরে যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন, এদের মধ্যে ১১ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বাকি ৫ জন সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সির পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া গত মেয়াদেও সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ৫ জন।


আজীবনের জন্য বহিষ্কার করার পরেও বিএনপি সিটি নির্বাচনে নেতাকর্মীদের প্রার্থীতা ঠেকাতে পারছে না কেন? জানতে চাইলে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিবার্তাকে বলেন, আমাদের কাছে লাঠি-সোঠাও নেই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নেই- কি করে ঠেকাব। কোনো মানুষ যদি তার পার্টির ডিসিপ্লিন এবং আদর্শের বাইরে গিয়ে কাজ করে তাকে কোন ভাবেই ঠেকানো যায় না। লাঠি পেটা করেও ঠেকানো যায় না। লোভ প্রলোভনের ওপর যদি কারো কাজ করে, তাহলে তাকে ঠেকাবেন কি করে। এটাতে কিছু যায় আসে না। একটি বিরাট সমুদ্রের মতো দল যদি মনে করে সে অপরিহার্য- তাহলে সেটা ঠিক নয়। এ পর্যায়ে বহু এরকম তৈরি হবে।


বহিষ্কৃতরা নির্বাচিত হলে দলে ফেরানো হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজীবন বহিষ্কারের কথা বলা হয়েছে। তাকে দলে ফেরানোর কোন কিছু নেই। গাজীপুরে বহিষ্কৃত অনেকে বিজয়ী হয়েছে তাদেরকে দলে ফেরানো হয়নি।


বহিষ্কার করা সত্ত্বেও দলের নেতাকর্মীরা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন কেন জানতে চাইলে বিএনপি'র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বিবার্তাকে বলেন, সমাজের কাছেও তাদের একটি দায়বদ্ধতা রয়েছে। এই যে সমাজ বা পরিবেশের সাথে তারা বসবাস করছেন। সে দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতার কারণেই নেতাকর্মীদের আমরা বলেও থামাতে পারছি না। আজীবনের জন্য বহিষ্কারের নোটিশ দিয়েও খুব বেশি সাড়া পাওয়া যায়নি। সামাজিক এবং পারিপার্শ্বিক যে দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহিতা সেটার কারণেই তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করার জন্য। এটাকে আমরা ভালো-মন্দ কোন কিছুই বলতে পারছি না।


বহিষ্কৃতরা নির্বাচিত হলে দলে ফেরানো হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সময় বলে দেবে। আমরা তো কাউকে আজীবনের জন্য ত্যাজ্য করছি না। সাংগঠনিক নিয়ম মেনে কাজগুলো করছি। পরবর্তীতে যদি সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরে আনার উদাহরণ তারা সৃষ্টি করতে পারে তখন হয়তো বিবেচনা করা হবে।


জানতে চাইলে বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বিবার্তাকে বলেন, বিএনপির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। দলের এই সিদ্ধান্ত সকলকে মানতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন এখন আর স্থানীয় সরকার নির্বাচন নেই। যেহেতু দলীয় প্রতীকে, দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন ব্যবস্থা এ সরকার করেছে- তাই এটা জাতীয় নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। বিএনপি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে। এর আগে আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলের অধিনে অংশগ্রহণ করেছি- সেটা দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল। বিভিন্ন কারণে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে।


তিনি বলস্থানীয় অনেক বিষয়ের সাথে নেতাকর্মীরা জড়িত থাকে। দিনশেষে তারা কিন্তু একটি দলের প্রতিনিধিত্ব করে। দলের সিদ্ধান্ত তাদেরকে মানতে হবে। যখন দেখা যাচ্ছে দলের সিদ্ধান্ত মানছে না তখন দল তাদেরকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়। দল তো শুধুমাত্র সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করে না, জাতীয় প্রেক্ষাপট নিয়েও চিন্তা করতে হয়।


বিবার্তা/এমই/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com