গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলো আওয়ামী লীগ। তবে শেষ পর্যন্ত দল থেকে বহিষ্কার হওয়া সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন ম্যাজিকে পরাজিত হন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। আর পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের শুরুতেই হোঁচট খায় ক্ষমতাসীন দল। সামনে আরো চারটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এর মধ্যে দু'টিতে জয়ের ব্যাপারে নির্ভার থাকলেও বাকি দু'টি নিয়ে বেশ চিন্তা আওয়ামী লীগে।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র ও দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, খুলনায় বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক, বরিশালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সেখান থেকে সহজে জয় নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন তারা। তবে বরিশালে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর সিলেটের রাজনীতিতে নতুন মুখের বিজয় আনতে খানিকটা ঘাম ঝরাতে হবে আওয়ামী লীগকে।
জানা গেছে, চার সিটি মধ্যে খুলনা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনে নৌকার বিজয় হবে এমন ভাবনায় নির্ভার আওয়ামী লীগ। দুই সিটির বর্তমান মেয়রকেই আবারো মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। গেলো মেয়াদে উভয় সিটিতেই উন্নয়ন ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হয়েছে। এছাড়া প্রার্থীদের ব্যক্তি ইমেজও ভালো। কারণ এই দুই সিটিতেই দলের নেতা-কর্মীদের ভেতর ঐক্য রয়েছে। এর বাইরে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় শক্তিশালী প্রতিপক্ষও নেই।
অন্যদিকে বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে বেশ বেকায়দায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নেই কিন্তু ক্ষমতাসীন দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেশ জোরালোভাবে রয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। এমনকি বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথেও সাক্ষাৎ করেছেন দলের কেন্দ্রীয় ও বরিশালের নেতারা। ঢাকায় মিটিংয়ের পর বরিশালেও একাধিক সভা হয়েছে। এসব সভায় অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর চেষ্টা করছেন।
গত ২৬ মে বরিশাল সিটি নির্বাচন কেন্দ্র করে একটি বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী পরিচালনা টিমের নির্দেশে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এই সভা আহ্বান করে। সভায় অংশ নিয়ে দলের নেতাদের বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান। এসময় তিনি বলেন, বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে একটা গন্ধ পাচ্ছি। জেতার আগে যদি কেউ জিতে যায়, তাহলে সে জিততে পারে না। সিটি নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের একটি প্রস্তুতি, রিহার্সাল। এই নির্বাচনে জেতার জন্য যা যা করা দরকার তাই করতে হবে।
সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বিবার্তাকে বলেন, দলের সকল নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন। আমরা ঘরে-বাইরে এক ও অভিন্ন। মনোনয়ন দেয়াকে কেন্দ্র করে কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। সব ভেদাভেদের অবসান হয়েছে। নৌকাকে বিজয়ী করতে সবাই মিলে কাজ করছি।
এদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রবাসী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন মুখ। এই সিটিতে হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী। তবে তিনি দলের সিদ্ধান্তে প্রার্থী হননি। এতে বেশ সুবিধাজনক স্থানে আছেন নৌকার প্রার্থী। এখন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙল প্রতীকের নজরুল ইসলাম বাবুল। এ নিয়ে খানিকটা নির্ভার হলেও দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, গাজীপুরের নির্বাচনের দিকে তাকালে নির্ভার থাকার সুযোগ নেই। নৌকা বিজয় নিশ্চিত করতে আরো সিরিয়াস হওয়া প্রয়োজন।
স্থানীয় রাজনীতিতে গেলো কয়েক বছর আগে হঠাৎ করে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর আবির্ভাব ঘটে। বেশিরভাগ সময় প্রবাসে থাকা আনোয়ারুজ্জামানকে দল মনোনয়ন দেয়ায় দীর্ঘদিনে নগরে রাজনীতি করা দলের নেতারা আশ্চর্য বনে যান। এখন পর্যন্ত দৃশ্যত দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। তবে খানিকটা সংশয়ও কাজ করছে তাদের মাঝে।
সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বিবার্তাকে বলেন, ছাত্র রাজনীতিতে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও তার অবদান উজ্জ্বল। তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে সিলেটের রূপ পাল্টে যাবে। নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে সিলেট আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে গত ৩০ মে নগরের কাজলশাহ এলাকায় ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর বর হাজারীর বাড়ির উঠানে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ লায়েকের নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আব্দুল খালিক বলেন, আমি আল্লাহর কাছে আর শাহজালাল (রহ.) বাবার কাছে চেয়েছিলাম নির্বাচন করব। কিন্তু ভাগ্যে জোটে নাই। জননেত্রী শেখ হাসিনা ওসমানীনগর থেকে একটা আনিয়া (এনে) দাঁড় করাইছে এখানে নৌকা দিয়ে। যাক, এটা আল্লাহর হুকুম। সে তাঁর নৌকা নিয়ে চলুক। আমরাও আছি। দেখি, নৌকাকে কীভাবে কোন দিকে নিয়ে পাস করাইয়া দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন বিবার্তাকে বলেন, উনি বয়স্ক লোক, বীর মুক্তিযোদ্ধা। উনি যে মন্তব্য করেছেন, পরে নিজেই সাংবাদিকদের বলেছেন ভুল করেছেন। এ বিষয়ে আমরা আমাদের প্রার্থীর সাথেও কথা বলেছি, উনি বলেছেন এ বিষয়টি এড়িয়ে, গুরুত্ব না দিয়ে সবাইকে নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এটা উনার ব্যক্তিগত বক্তব্য, আনকনশাসলি বলে ফেলেছেন। এটা তেমন গুরুত্ব বহন করে না। আমাদের প্রার্থীকে নিয়ে আমরা সবাই একসাথে কাজ করছি।
বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]