আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা মানে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হওয়া: হানিফ
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৩, ১৯:৪০
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা মানে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হওয়া: হানিফ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা মানে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হওয়া, দেশের উন্নয়ন হওয়া। দেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনার বাইরে আর কেউ নেই।


শনিবার (১৮ মার্চ) কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ও কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী যুবলীগের আয়োজনে জামায়াত-বিএনপি আগুন সন্ত্রাস ও নাশকতার বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


দেশের মানুষ বিএনপির সাজাপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী, খুনীদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না উল্লেখ করে হানিফ বলেন, বিএনপি মানুষকে মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে আন্দোলন করতে চেয়েছিল। সেই আন্দোলন ভেস্তে ঘরে উঠে গেছে। এখন বিএনপি নেতারা সকাল-বিকালে অ্যাম্বাসি যাচ্ছে।


মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণের ওপর আস্থা রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী আর জনগণ আওয়ামী লীগে আস্থা রাখে। বিদেশিদের কাছে দৌঁড়ঝাপ করে কোনো লাভ হবে না। কোনো বিদেশি ক্ষমতায় বসাতে পারবে না। দৌঁড়ঝাপ দৌঁড়ঝাপই রয়ে যাবে।



তিনি বলেন, এখন এমন একটা মাস চলছে অর্থাৎ মার্চ মাস- যেটা বাংলার ইতিহাসে, স্বাধীনতা সংগ্রামে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এই মার্চ মাসের ৭ তারিখে জাতির পিতা স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে আজকেই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই মার্চ মাসের ২৫ তারিখে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে গণহত্যা চালিয়েছিল। যেই গণহত্যায় আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এরপর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা স্বাধীতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বাঙালিরা বিজয় লাভ করেছিলাম। কাজেই মার্চ মাস জাতির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস।


তিনি আরো বলেন, অথচ এই মাসেও কিছু রাজনৈতিক দল যারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের দল দাবি করে- তারা নিজেরা ৭ মার্চ পালন করেন না, তারা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন করেন না। তারা স্বাধীনতাও পালন করতে চান না। আপনারা ৭ মার্চ পালন করেন না অথচ এই ৭ মার্চে জাতির পিতা যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, তা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।


জাতিসংঘের ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এটা শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে। ১৯ মিনিটের ভাষণের মধ্যে একদিকে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছেন, আরেকদিকে দেশকে স্বাধীন করার জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। এই রকম অলিখিত গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ পৃথিবীর কোন রাজনৈতিক নেতা কখনো দিতে পারে নাই।


আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের সাথে স্বাধীনতার ইতিহাস জড়িত। এই ভাষণের মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। মূলত ৭ মার্চের ভাষণের পরে এই দেশ বঙ্গবন্ধুর ‍নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল।


তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম বললেন আমরা এমন বাংলাদেশ চাইনি। আপনার কোন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। আপনারা তো বাংলাদেশই চাননি। আপনারা চেয়েছিলেন পাকিস্তান। অখন্ডতা রাখার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। আপনারা তো বাংলাদেশ চাইবেন না, এটা জানা কথা।


২০০১-২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি বাংলাদেশকে কোথায় রেখে গিয়েছিল তা ভেবে দেখার জন্য বিএনপি নেতাদের আহবান জানিয়ে হানিফ বলেন, আপনারা কোন বাংলাদেশ রেখে গিয়েছিলেন। মির্জা ফখরুল কয়েকদিন আগে একটি ইশতেহার ঘোষণা করলেন। রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে কি করবেন এসব বিষয়ে। আমি বলি, ক্ষমতায় গিয়ে নয়; ক্ষমতায় থাকতে কি করে গেছেন দেশের মানুষকে জানান। ক্ষমতায় থাকতে আপনারা কোন ভালো কাজ করেছেন?


তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশ সন্ত্রাসীদের চারণভূমি বানিয়েছিল। আওয়ামী লীগের ২৬ হাজর নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছিল।বাংলাদেশকে অন্ধকারে তলিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।চরম দরিদ্র ও সন্ত্রাসের দেশ বানিয়েছিল।


আওয়ামী লীগ না-কি ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার জন্য ষড়যন্ত্র করছে- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কেন ষড়যন্ত্র করবে? এই দেশের জনগণ উন্নয়ন, অগ্রগতি চায়। আর এ দেশে উন্নয়নে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। কারণ তিনি বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। অন্ধকার বাংলাদেশকে আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন। শেখ হাসিনার প্রতি বাংলাদেশের পাশাপশি বিশ্বের মানুষেরও আস্থা আছে।


সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০টি আসনও পাবে না বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের সমালেচনায় হানিফ বলেন, আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত। গত নির্বাচনেও ৭টা আসন পেয়েছেন। ২০০৬ সালে খালেদা জিয়া বলেছিলেন আওয়ামী লীগ আগামী ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। নির্বাচনে ৩০টি আসনও পাবে না আর আপনারাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২৯টি আসন পেয়েছিলেন।


তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি দেশের মানুষের যে আস্থা আছে যেকোনো মুহুর্তে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২০০ এর বেশি আসন পাবে। এতো আস্থা থাকলে আপনারা (বিএনপি) নির্বাচনে এসে জনসমর্থন প্রমাণ করুন।


যুবলীগের ইতিহাস বর্ণনা করে হানিফ বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এই আওয়ামী যুবলীগের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন জাতির পিতার সুযোগ্য ভাগ্নে আমাদের প্রয়াত নেতা শেখ ফজলুল হক মনি। শুরু থেকে এই সংগঠন সবসময় সব সময় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে আসছে, যুবসমাজের প্রতিনিধিত্ব করেছে।


তিনি বলেন, সরকারের পাশে থেকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহায়তা করেছে। একইসাথে দুঃশাসন, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের সময়ে শেখ হাসিনার নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তখন যুবলীগের আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মসনদ কেঁপে উঠেছিল। এভাবে যুবলীগ ঐতিহ্যবাহী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আমরা আশা করি এই যুবলীগ অতীতের ন্যায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ গড়ার ক্ষেত্রে তার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করবে। শান্তি সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাংসদ ও আওয়ামী যুবলীগের সভাপতিণ্ডলীর সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ এমপি।


বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া-১ আসনের আ কা ম সরোয়ার জাহান বাদশা এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি সদর উদ্দিন খান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম।


বিবার্তা/সোহেল-রাসেল/রোমেল/এমএ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com