‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩, ১৩:১৫
‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সুপরিকল্পিত ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


১২ মার্চ, রবিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।


পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ঘটনা-পরম্পরার গভীরে গেলে এটা স্পষ্ট যে এটা কোনো আকস্মিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং এটি রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সুপরিকল্পিত। নির্বাচনের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিশেষ করে শাসকদলের একমাত্র প্রতিদ্বদ্বী বৃহৎ জনপ্রিয় দল বিএনপির উপর দোষ চাপিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের পূর্বের খেলা নতুন করে শুরু করেছে। বিএনপিকে আতঙ্কের মধ্যে রাখার নীল নকশার অংশ হিসেবে এই ন্যক্কারজনক হামলা করেছে। পুলিশ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে এ পর্যন্ত ২০টি মামলা দিয়েছে, ১২ হাজারেরও বেশি জনকে আসামি করেছে এবং এ পর্যন্ত ১৮৭ জনকে গ্রেফতার করেছে।


‘এমনকি পঞ্চগড় থেকে অনেক দূরের উপজেলার নেতাকর্মীদেরকেও এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আটক করেছে, অভিযান চালিয়ে হয়রানি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। বিএনপি ও অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীরা কেউ নিজ বাড়িতে থাকতে পারছেন না। প্রকৃত ঘটনা কে বা কারা ঘটিয়েছে পুলিশসহ সকলেই তা জানে, অথচ গ্রেফতার করা হচ্ছে নির্বিচারে বিএনপি নেতাকর্মীদের। পুলিশ ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। এতে বোঝা যায় পুলিশ এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে পূর্বের ন্যায় 'উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে' চাপিয়ে সারা দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা করে দেশে ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টায় নেমেছে। কিন্তু জনগণ সবই বোঝে।


মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রের যে কোনো নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। পুলিশ জনগণের নিরাপত্তা বিধানে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সময়মতো কঠোর ব্যবস্থা নিলে হয়তো এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটত না। পূর্বপরিকল্পিত বিধায় পুলিশ এই ঘটনার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে নীরব ভূমিকা পালন করে যাতে আহমদিয়াদের ঘরবাড়িতে দুষ্কৃতিকারীরা অগ্নি সংযোগ ও লুটপাটের সুযোগ পায়। ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারের পূর্বানুমতি নিয়েই তাদের বার্ষিক জলসার দিন ও স্থান নির্ধারণ করে। এ জলসার বিরোধিতা করে কিছু ধর্মীয় সংগঠনের স্থানীয় লোকজন মিছিল মিটিং করে। যা প্রশাসনের গোচরীভূত ছিল। জলসা বন্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনও করে কিছু সংগঠন।


‘এরপরও পুলিশ নিরাপত্তামূলক কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শত শত লোক একত্রিত হয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়ি ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে এই হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা নীরব দর্শকের মত দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের চোখের সামনেই এসব তান্ডব চালানো হয়। কিন্তু পুলিশ তখন কোনো বাধা না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।’


তিনি বলেন, আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের ভিকটিমরা প্রকাশ্যই বলেছে, আওয়ামী লীগের লোকজন বিশেষ করে পঞ্চগড় সদরের সংসদ সদস্য ও বর্তমান রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের নেতৃত্ব ও সক্রিয় অংশগ্রহণে এ ঘটনা ঘটিছে। ঘটনার পর রেলমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসলে ক্ষতিগ্রস্তরা চিৎকার করে তাকে বলেন যে ঘটনায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী আব্দুর রহমান ও তার ছেলে মোতাহার মন্ত্রীর আশেপাশেই উপস্থিত আছে। এই হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা না হলে তারা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন।


রেলমন্ত্রীর কোনো সদুত্তর না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা তার সামনেই নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন এবং হাউমাউ কান্না শুরু করেন।


তিনি বলেন, এই ঘটনায় দুইজনের প্রাণহানি ঘটেছে, বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শতাধিক বাড়ি অগ্নিসংযোগ হয়েছে, শতাধিক মানুষ হতাহত হয়েছে। অথচ এ পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি। আমাদের বিশ্বাস সরকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন থেকে জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এই ভয়ানক হীন ঘটনা ঘটিয়েছে।


বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মানবতাবিরোধী ও মানবাধিকারবিরোধী রাষ্ট্রযন্ত্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী কুখ্যাতি অর্জন করেছে। তাই বিএনপির বিরুদ্ধে সরকার সাম্প্রদায়িক অসহিঞ্চুতার সেই পুরনো ধোয়া তুলে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি আকর্ষণের ব্যর্থ চেষ্টা করছে। প্রকৃতপক্ষে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নেই। মানুষের মানবাধিকার আজ ভুলুণ্ঠিত। তাই তো এই অবৈধ সরকার এমন সন্ত্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তাই আসুন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এ দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করি এবং দেশে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করি। তবেই দেশে আইনের শাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।


বিবার্তা/কিরণ/কেআর

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com