আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (১১ মার্চ) নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ কথা বলেন তিনি। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

'বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, চিনি ও আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, দমন-পীড়ন বন্ধ, বেগম খালেদা জিয়ারসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী গণবিরোধী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে' এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতায় টিকে থাকতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। আর এখন তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে চায়। কিন্তু আমাদের কথা পরিষ্কার, এই দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে না। তাই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।

নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সামনে বিকল্প কোনো পথ নেই। এই সরকার অনেক রকমের চক্রান্ত শুরু করেছে। এজন্য তারা পঞ্চগড়ের সাম্প্রদায়িকতার ঘটনা তৈরি করতে চেয়েছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না দেশের মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না। আর বিএনপি যখন তাদের (সরকার) অনিয়ম-দুর্নীতির কথা বলছি, তখন তাদের গাত্রদাহ শুরু হয় এবং নানা ধরনের উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করছে।

নতুন ইসির মাধ্যমে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে মানুষ দাঁড়িয়েছে। আর দিন দিন আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সেই আন্দোলনের উত্তাল তরঙ্গের মতো ভাসিয়ে নিয়ে যাবে এই সরকারকে। তখন আর তারা পালানোর পথ পাবে না।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ুন, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করুন এবং সংগঠিত হন। কারণ উত্তাল তরঙ্গের মতো আন্দোলন সৃষ্টি করে এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে।

এই সরকার বিএনপিকে নির্মূল ও বিএনপির নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। আর এই সরকার আজকে ঘুষ দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।

এসময় আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তিকে সমর দেশবিরোধী চুক্তি বলে অ্যাখায়িত করেন বিএনপি মহাসচিব।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ১০টা থেকে মানববন্ধনে অংশ নিতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীরা। মানববন্ধনে দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা আসেন দলে দলে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে ছোট-ছোট মিছিল নিয়ে আসেন। এসময় খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তুলেন তারা।

সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, মানববন্ধনকে ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে কঠোর অবস্থানে ছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা। কার্যালয়ের আশপাশে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জনসমাগম ঘটিয়ে যাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য সার্বিক প্রস্তুতিও নেয়া হয়।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সস্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বক্তব্য রাখেন।

বিবার্তা/কিরণ/এনএস