পুলিশ-আমলার ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় আছে আ.লীগ: ফখরুল
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫:৫১
পুলিশ-আমলার ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় আছে আ.লীগ: ফখরুল
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

পুলিশ ও আমলাদের ওপর নির্ভর করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


বুধবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২৭ মিনিটে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির উদ্যোগে গণঅবস্থানে এ মন্তব্য করেন ফখরুল। সকাল ১০টা ২৭ মিনিটে এ কর্মসূচি শুরু হয়। শেষ হয় বেলা ২টা ১০ মিনিটে।


‘ফ্যাসিস্ট, দুর্নীতিবাজ, গণতন্ত্র হরণকারী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও ১০ দফা দাবি এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে’ এ গণঅবস্থান অনুষ্ঠিত হয়।


আন্দোলন শুরু হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আজকে নয়, এই আন্দোলন শুরু হয়েছে যখন এ সরকার বেআইনীভাবে দুই-দুইবার ভোটব্যবস্থাকে ধ্বংস করে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। আওয়ামী লীগ নিজেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচয় দেয়। আমরা জানি আওয়ামী লীগ পুরোনো পরিচিত দল। কিন্তু আওয়ামী লীগ এখন সম্পূর্ণভাবে তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ এখন গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেজন্য এখন তাদেরকে এখন পুলিশ ও আমলাদের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রক্ষমতাকে জোর করে দখল করে রাখতে হয়।


নেতানকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। আমরা কি সেটি হতে দেবো। কর্মীরা বলেন, না। আবার ফখরুল বলেন, আমরা কি এখানে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠিত হতে দেব। কর্মীরা বলেন- না।


‘সেজন্য আমাদেরকে আরও বেশি করে জেগে উঠতে হবে। আপনারা জেগে উঠেছেন। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। এখন সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদেরকে জাগিয়ে তুলে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’


নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, সুসংবাদ হচ্ছে এটাই যে- আজকে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা এবং সুশীল সমাজ তারা আজকে এগিয়ে আসতে শুরু করেছেন। আজকে অন্যায় হচ্ছে তার বিরুদ্ধে তারা (বাংলাদেশের বরেণ্য নাগিরক) ৬০ জন বিবৃতি দিয়েছেন। তাদেরকে আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, আমাদের মিডিয়া ও গণমাধ্যমের সকল কর্মী ভাইদের। তারা জনগণের আন্দোলনের খবর প্রচার করে তাদেরকে জাগিয়ে তুলছেন।


এই সরকার জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ একটা দেউলিয়া রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। আর এই সরকার সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতিপরায়ণ, জনবিচ্ছিন্ন এবং নির্যাতনকারী সরকার হিসেবে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতাকে দখল করে রেখেছে।


চলমান এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ জন নিহত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আর আমি যখন এখানে কথা বলছি তখন আমার কাছে এসেছে, ফরিদপুরে যে গণঅবস্থান কর্মসূচি চলছিলো- সেখানে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগরা হামলা করে সেই মিটিং পণ্ড করে দেয়ার চেষ্টা করেছে। পুলিশ গুলি চালিয়েছে, আহত হয়েছে অনেকজন। আর ময়মনসিংহে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা করেছে।


নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আমাদের সহকর্মী, বন্ধু-যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন, তাদের প্রায় ৬০০ নেতাকর্মী অবর্ণনীয় এবং অমানবিক কারানির্যাতন করে সেখানে অপেক্ষা করছেন। তারা আজকে এই কর্মসূচির দিকে তাকিয়ে আছেন, এই কর্মসূচিকে কিভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে এদেশ এবং তাদেরকে মুক্ত করবেন।


কর্মসূচির শুরুতেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা উদ্যোগে দলীয় সঙ্গীত ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গান পরিবেশন করা হয়।


সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ৮টা থেকে গণঅবস্থানে অংশ নিতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বিএনপির নেতাকর্মীরা। গণঅবস্থানে দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আছেন দলে দলে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছোট-ছোট মিছিল নিয়ে আসেন। তারা রাস্তায় ত্রিফল বিছিয়ে তার উপর বসেন এবং দলের সিনিয়র নেতাদের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে চেয়ার পেতে দেয়া হয়।


এদিকে ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের হাজার হাজার নেতা কর্মীদের গণঅবস্থানস্থলে উপস্থিত হতে দেখা গেছে। এসময় খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তুলেন তারা।


এছাড়া নেতাকর্মীদের মাথায় বিভিন্ন রঙের ক্যাপ এবং জাতীয় পতাকা পড়ে গণঅবস্থানে অংশ নিতে দেখা গেছে।


সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, গণঅবস্থান ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে কঠোর অবস্থানে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা। কার্যালয়ের আশপাশে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জনসমাগম ঘটিয়ে যাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য সার্বিক প্রস্তুতিও নেয়া হয়।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস, আব্দুল্লাহ আল নোমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, নবী উল্লাহ নবী, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, শিরিন সুলতানা, রকিবুল ইসলাম বকুল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।


বিবার্তা/কিরণ/এসএফ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com