গণতন্ত্র মঞ্চের টিকে থাকা নিয়ে সংশয়!
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:১৩
গণতন্ত্র মঞ্চের টিকে থাকা নিয়ে সংশয়!
কিরণ শেখ
প্রিন্ট অ-অ+

বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্যে সাত দলীয় জোটের ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এই জোট যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে গত ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।


অনেকের প্রত্যাশা ছিলো যে, ৩০ ডিসেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চ রাজপথে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটাবে। কিন্তু তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। মূলত গণমিছিলে মাত্র চার থেকে পাঁচশত মানুষের সমাগম ঘটাতে পেয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। আর গুটি কয়েক লোক নিয়ে সমাবেশ করায় গণতন্ত্র মঞ্চের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে তৃণমূলের কর্মীরা।



তারা বলছেন, ৭টি রাজনৈতিক দল নিয়ে এই গণতন্ত্র মঞ্চ গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দল যদি ১ হাজার করে কর্মী নিয়ে আসত তাহলেও ৭ হাজার কর্মী রাস্তায় থাকত। কিন্তু তারা সেটাও করতে পারেননি। মাত্র গুটিকয়েক লোক নিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং গণতন্ত্র মঞ্চের টিকে থাকা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ মাঠ পর্যায়ের কর্মী ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল টিকে থাকতে পারে না। আর এই রকম সাত দলীয় জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ তো আরো টিকে থাকতে পারবে না।



গত ১৭ ডিসেম্বর যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে ৩০ ডিসেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চ গণমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের প্রথম কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।


এই কর্মসূচি থেকে আগামী ১১ জানুয়ারি রাজধানীতে গণঅবস্থানের কর্মসূচি দিয়েছে সাত দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। এরআগে প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে গণমিছিল বের করে গণতন্ত্র মঞ্চ। মিছিলটি পুরানা পল্টন ও বিজয় নগর হয়ে কাকরাইল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।



সরেজমিনে দেখা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার স্লোগান নিয়ে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণমিছিল করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। কয়েক শত লোকের জমায়েত নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের থেকে এই মিছিল শুরু হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় গিয়ে শেষ হয়।



এরআগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে আগামী ১১ জানুয়ারি বিভাগীয় পর্যায়ে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। তবে গণতন্ত্র মঞ্চের গণমিছিল থেকে সমাবেশে আরো কম লোকসমাগম দেখা গেছে।


এবিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বিবার্তাকে বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর অনেক বাধা এবং এই শহরে নিষেধাজ্ঞা ছিল বলে লোক সমাগম কম হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বাস এবং গাড়ি আটকিয়ে দেয়া হয়েছে। পুরো শহরে (ঢাকা) অনেক বাধা ও নিষেধাজ্ঞা ছিল। যার কারণে লোকসমাগম কম হয়েছে।


জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চে শীর্ষ নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বিবার্তাকে বলেন, ৩০ ডিসেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের গণমিছিলে লোকসমাগম কম হয়েছে, এটা অমূলক সংশয়।


গণতন্ত্র মঞ্চের আরেক শীর্ষ নেতা ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বিবার্তাকে বলেন, এটা ঠিক যে- লোকসমাগম কম হয়েছে। কিন্তু মিটিংয়ের চেয়ে গণমিছিলে লোক সমাগম অনেক বেশি ছিল। আর আগামী ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচিতে আরো বেশি লোক সমাগম হবে। এনিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।


গণঅবস্থান থেকে নতুন কর্মসূচি দেবে গণতন্ত্র মঞ্চ:


বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে আগামী ১১ জানুয়ারি বিভাগীয় পর্যায়ে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। ঢাকার এই কর্মসূচি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হবে। আর এই গণঅবস্থান থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে কি ধরণের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে তা এখনও নির্ধারিত হয়নি।


গণতন্ত্র মঞ্চের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সরকার পতন আন্দোলনে আগামী ১১ জানুয়ারি ঢাকায় যুগপৎভাবে দ্বিতীয় কর্মসূচি সফল করতে গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। আগামী ১০ জানুয়ারি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকেই পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে এবং ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান থেকে সেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।


যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বিবার্তাকে বলেন, পরবর্তী কর্মসূচি নিশ্চয়ই দেয়া হবে।


কি ধরণের কর্মসূচি আসতে পারে জানতে চাইলে জোনায়েদ সাকি বলেন, কর্মসূচি এখনো নির্ধারিত হয়নি।


জানতে চাইলে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বিবার্তাকে বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকেই যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। আর ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।


গত ৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাত দলীয় জোটের ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই মঞ্চের জোটভুক্ত দলগুলো হলো: জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।


বিবার্তা/ কিরণ/ রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com