পারস্য উপসাগরের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ফাইলাকা দ্বীপ। যা কুয়েতের অন্তর্ভূক্ত। এটি কুয়েতের মূল ভূখণ্ড থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। হাজার বছরের প্রাচীন এই দ্বীপটি বর্তমানে কুয়েতের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
নৌ-পথে ছোট জাহাজ অথবা বোটে করে সেখানে যাওয়া যায়। এই দ্বীপের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ঐতিহ্য সংরক্ষণে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফাইলাকা দ্বীপটি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। এখানে রয়েছে টুরিস্ট পার্ক, ফ্যামিলি পার্ক, হেরিটেজ পার্ক, স্যানিটোরিয়াম, হোটেল, সুইমিং পুল, তাঁবু ও চিড়িয়াখানা ইত্যাদি।
এই দ্বীপে থাকার জন্য ছোট ছোট রিসোর্ট রয়েছে। রাতে বা ছুটির দিনে অনেকেই তাদের পরিবার নিয়ে থাকতে আসেন। এখানে বৈদ্যুতিক স্কুটার, কায়াকিং, পিকনিক স্পট রয়েছে। ঘোড়ার আস্তাবল ও যাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ রয়েছে। পরিবেশ মনোরম হওয়ায় পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে আসেন অনেকেই।
ফাইলাকা দ্বীপে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের বসবাস ছিল। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া ও অন্যান্য সভ্যতার সময় এই দ্বীপটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। এই দ্বীপে খনন কার্যক্রম চালিয়ে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের হেলেনিস্টিক যুগের সভ্যতা আবিষ্কার করা হয়েছে। যেখানে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর শেষের দিকে ইকারুস নামে একটি গ্রিক উপনিবেশ তৈরি করেছিলেন।
মেসোপোটেমিয়ারা প্রথম ২০০০ খ্রিস্টপূর্বে কুয়েতের দ্বীপ ফাইলাকাতে বসতি স্থাপন করে। সুমারিয়ান শহর থেকে ব্যবসায়ীরা ফাইলাকাতে বসবাস শুরু করে ও ব্যবসা করতে থাকে। এই দ্বীপে অনেকগুলো মেসোপোটেমিয় ধরনের দালান ছিল যেগুলো ২০০০ খ্রিস্টপূর্ব সময়কার ইরাকের দালানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কুয়েতের এই নব-প্রস্তরযুগীয় বসবাসকারীরা পৃথিবীর প্রথম দিককার উপকূলীয় ব্যবসায়ী ছিল। পৃথিবীর প্রথম দিককার খাগড়া ডিঙ্গি উবাইদ সময়ে উত্তর কুয়েতে আবিষ্কৃত হয়।
বসন্তে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে ফাইলাকা দ্বীপ। কুয়েতের মূল ভূখণ্ডের থেকে ফাইলাকার আলাদা ইকোসিস্টেম রয়েছে। এখানকার তাপমাত্রা খুবই সতেজ। যদিও দ্বীপের অবকাঠামো দুর্বল রয়ে গেছে। মাছ ধরা, বোটিং, সাঁতার, নৌকা চালনা ও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে একটি স্থানীয় পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে শুরু করেছে কুয়েত সরকার।
১৯৯০ সালের ২ আগস্ট ইরাক তার প্রতিবেশী দেশ কুয়েতের ওপর দুই দিনব্যাপী কুয়েত আক্রমণ অপারেশন পরিচালনা করে। এর ফলে দীর্ঘ সাত মাসব্যাপী দেশটি ইরাকের অধীনে ছিল।
এছাড়া জাতিসংঘের বেধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে কুয়েত থেকে তাদের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল ইরাক। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে জাতিসংঘের সম্মিলিত সামরিক জোট সামরিক হস্তক্ষেপ করে। এর ফলশ্রুতিতে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং ইরাকি বাহিনী কুয়েত থেকে বিতাড়িত হয়।
এ যুদ্ধে ইরাকের ব্যবহৃত ট্যাংক, কামান, যুদ্ধবিধ্বস্ত পুরানো স্থাপনাগুলো যুদ্ধকালীন সময়ের মতোই রয়েছে। ফাইলাকা দ্বীপে রয়ে গেছে ইরাক আগ্রাসনের সকল চিহ্ন। এই দ্বীপে গেলে স্থানীয় জনগণ ও পর্যটকরা অনুভব করতে পারে দুই দেশের যুদ্ধে কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয় সেটা বাস্তব চিত্র।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]