
তারুয়া সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। জেলা সদর থেকে দেড়শ কিলোমিটার দূরে তারুয়া সমুদ্র সৈকতের অবস্থান। একশত পয়ত্রিশ কিলোমিটার পাকা সড়কের পর পনেরো কিলোমিটার নৌ-পথ পেরিয়ে সেখানে যেতে হয়।
আজ থেকে প্রায় ৪২ থেকে ৪৮ বছর আগে বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় বঙ্গোপসাগর এর পাশে জেগে উঠেছিল তারুয়া দ্বীপ। অপরূপ মায়াবী সৌন্দর্যে সেজে আছে এই তারুয়া সমুদ্র সৈকত।
এই সমুদ্র সৈকত বর্তমানে বাংলাদেশের নৈসর্গিক প্রকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান যেখানে এক সাথে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ সহ ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের দেখা মিলে। ভোলা জেলার মূল শহর থেকে ৮০/৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। তারুয়া সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলে ২০০/২৫০ প্রজাতির প্রানি তার ভিতরে হরিণ এবং লাল কাকড়া অন্যতম। ভোলার মূল ভূখণ্ড থেকে ভিন্ন দুটি দ্বীপ চর কুকরি মুকরি এবং তারুয়া সমুদ্র সৈকত। তারুয়া সমুদ্র সৈকতের আরেক নাম হলো ঢালচর।
এই দ্বীপটি রয়েছে ভোলার দক্ষিণে যার পরে আর কোনো দ্বীপ নেই। এই দ্বীপটির এক পাশে রয়েছে মেঘনা নদী এবং অপর পাশে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর যার উত্তাল লোনা পানির ঢেউ আপনাকে মুগ্ধ করে দিবে। তারুয়া সমুদ্র সৈকতে যেতে হলে আপনাকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার নৌ-পথ পেরি দিয়ে যেতে হবে।
ছোট্ট এই দ্বীপে স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরতে আসতেন। তখন জেলেদের জালে তারুয়া নামে একপ্রকার মাছ ধরা পরত। ধারনা করা হয়, এই কারণেই এই এলাকাটির নামকরণ করা হয়েছে তারুয়া। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের চমৎকার এই দর্শনীয় স্থানটিকে সবাই তারুয়া সমুদ্র সৈকত নামেই চিনে।
ভোলা শহর থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর সাগারের মোহনায় জেগে উঠা তারুয়া দ্বীপ। বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে ঢালচর থেকে পূর্বদিকে চর শাহজালাল ও চর আশরাফের মাঝামাঝি বিছিন্ন তারুয়া দ্বীপ। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ।
আগেই বলেছি তারুয়া বিচের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে একই সঙ্গে আপনি বন এবং সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে পলি জমতে জমতে প্রায় ৪২ থেকে ৪৮ বছর আগে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠেছে তারুয়া দ্বীপ। এরপরে বন বিভাগ নানান ধরনের গছপালা রোপন করলে দ্বীপটি সবুজে ভরে ওঠে। ৩১.৩১ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ২৮.২০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে সুবিশাল বনাঞ্চল।
পাখিদের যেন এক অভয়ারণ্যতারুয়া সমুদ্র সৈকত। এখানে পাখির কলতানে মুখরিত থাকে প্রায় সবসময়। তবে শীতকালে অতিথি পাখিদের আগমনে পাখির আনাগোনা কিছুটা বেশি থাকে। এছাড়া, দর্শনীয় স্থান ভোলা ব-দ্বীপের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ঢালচর, কুকরি-মুকরি ও পর্যটন কেন্দ্র তারুয়া বিচে সবসময়ই পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। কোনো হিংস্র পশুর ভয় না থাকলেও এখানে রয়েছে: লাল কাকড়া, শিয়াল, বনবিড়াল, হরিণ, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী।
বাগানের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সরু পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটু ভেতরে গেলেই মনে হবে, এ যেন আরেক ভূবন! সেখানে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিশাল একটি শীতল ছাঁয়া বিশিষ্ট মাঠ। স্থানীয়ভাবে জায়গাটা বরইতলা নামে পরিচিত।
তারুয়া দর্শনীয় স্থানে দেখার মত অনে কিছু রয়েছে। আপনি তারুয়া সমুদ্র সৈকত, বালুকাময় মরুপথ, ম্যানগ্রোভ বন, গো চারণভূমি, জেলে নৌকায় চড়ে মৎসাভিযান, বনের মহিষ, শেয়ালের হুক্কা-হুয়া কোরাস, সাগরের উত্তাল গর্জন এবং হাজারও অতিথি পাখি দেখতে পাবেন। তারুয়া সমুদ্র সৈকতে প্রায় ৩০০ ফুট দীর্ঘ, ল্যান্ডিং ষ্টেশন বানানো হয়েছে যেখানে ট্রলার ও ছোট লঞ্চ ভীড়তে পারবে। এছাড়া সৈকতের বিস্তীর্ণ প্রান্তর-জুড়ে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি ভিন্ন সৌন্দর্য সৃষ্টি করে।
তারুয়া সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার উপায়
আপনি খুব সহজেই দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে তারুয়া সমুদ্র সৈকত যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে প্রথমে চরফ্যাশন যেতে হবে। দেশের উত্তর বা মধ্যাঞ্চল থেকে গেলেআপনি পদ্মা সেতু পার হয়ে সড়কপথে যেতে পারেন, নদীপথে যেতে চাইলে লঞ্চ। সেখানে যাওয়ার পর বাইকে করে যেতে পারেন। চর কচ্ছপিয়া থেকে ট্রলারে করে যেতে চর কুকরি মুকরি, ভাড়া ৪০ টাকা। তবে লোকাল ট্রলারে যেতে চাইলে সকাল ১১:৪৫ এর মধ্যে ঘাটে থাকতে হবে। চর কুকরি মুকরিতে পৌছানোর পরে ট্রলারে করে ঢাল চর যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন খুব সহজেই সহজেই। এছাড়া কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে বিকেল ৩টায় সারাদিনে মাত্র ১টি লঞ্চ ঢালচরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৭০ টাকা।
আপনি চাইলে চর ফ্যাশন থেকেও যেতে পারেন। চর ফ্যাশন বাজার থেকে কচ্ছপিয়া ঘাট বাস কিংবা অটোতে যেতে হবে, সময় লাগবে ঘণ্টা দেড়েক। এরপর কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে ২.৩০ ঘন্টায় তারুয়া/ঢাল চর। নৌকা ভাড়া ৩৫০০-৪৫০০ টাকা।
ভোলা জেলা নারিকেল এবং মহিষের দুধের দই এর জন্য বিখ্যাত। তাছাড়া পাবেন, মহিষের দুধে তৈরি দই, রসগোল্লা। প্রাণভরে সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। রূপালী ইলিশ, খালের টাটকা গলদা চিংড়ী, জালি ডাব, নারকেল দিয়ে রান্না করা কাঁকড়া, খেজুরের রস ইত্যাদি। তবে শীতের সময় ছাড়া খেজুরের রস পাবেন না।
কোথায় থাকবেন
তারুয়া দ্বীপে থাকার মত কোন হোটেল নেই। আপনি এখানে ক্যাম্প করে থাকতে পারেন। এখানে রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত ঘাস এর সবুজ মাঠ।
তারুয়া ভ্রমণ টিপস গুলো দেয়া হলো:
১। এখানে রাতে একা ক্যাম্প করে না থাকাই ভালো।
২। সাঁতার না জানলে বেশি দূর কখনো যাবেন না।
৩। ভ্রমণ স্থানকে ময়লা ফেলে নোংরা করবেন না।
৪। জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিন।
৫। সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
৬। গ্রীষ্মে এখানে ভ্রমণের সময় সাথে ছাতা অথবা রেইনকোট নিতে ভুলবেন না।
৭। একজন ভ্রমণ কারীর সাথে ক্যামেরা থেকে শুরু করে মোবাইল, ল্যাপটপ, ড্রোন ইত্যাদি থাকে। তাই নিরিবিলি স্থানে ভ্রমণ করার সময় সদা সতর্ক থাকা উচিত। বলাতো যায়না কখন বিপদ ঘটে যায়।
৮। ভ্রমণে পান করার জন্য সাথে ফ্রেশ পানি নিয়ে নিবেন। সাথে শুকনো খাবার নিতে ভুলবেন না।
৯। অপরিচিত কারো দেওয়া কিছু খাবেন না।
১০। কোন ইভেন্ট বা অপরিচিত কারো সাথে ভ্রমণে যেতে চাইলে ভ্রমণ সঙ্গী কীভাবে নির্বাচন করবেন তা পড়ে নিন।
১১। মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখুন।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]