
বলধা গার্ডেন ঢাকা শহরের ওয়ারী এলাকায় অবস্থিত একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বাংলার এ অঞ্চলের এটি অন্যতম প্রাচীন উদ্যান। ভাওয়াল জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ১৯০৯ সালে বাগানটি প্রতিষ্ঠা করেন। বাগানের দুটি অংশ বৃহত্তর সিবিলি (Cybele) ও ক্ষুদ্রতর সাইকি (Psyche)। প্রথমটি গ্রীকদেবীর নাম অনুযায়ী, আকার মোটামুটি আয়তাকার, উত্তরের অংশ কিছুটা কৌণিক, দৈর্ঘ্য ১৩৬ মিটার ও প্রস্থ ৭৬ মিটার। দ্বিতীয়টির অর্থ ‘মানস’, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে যথাক্রমে ১০০ ও ৪৫ মিটার।
বলধা গার্ডেনের আয়তন ৩.৩৮ একর। ১৯০৯ সালের দিকে ঢাকা জেলার (বর্তমান গাজীপুর জেলা) বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানারকম ফুলগাছ ও দুর্লভ উদ্ভিদ এনে লাগান এ উদ্যানে। বলধা গার্ডেনের প্রধান আকর্ষণ নীল, লাল, সাদা, হলুদ জাতের শাপলায় ভরা বেশ কয়েকটি শাপলা হাউজ। এছাড়া, বিরল প্রজাতির দেশি-বিদেশি ক্যাকটাস, অর্কিড, এনথুরিয়াম, ভূজ্জপত্র, বকুল, ক্যামেলিয়া, আশোক, আফ্রিকান টিউলিপস, আমাজান লিলিসহ নানা প্রজাতির গাছগাছালি।
বলধা গার্ডেনে ৮০০ প্রজাতির প্রায় ১৮ হাজার উদ্ভিদ রয়েছে। এখানে যেমন দেশ বিদেশের বিভিন্ন উদ্ভিদ রয়েছে, তেমনি দেশ বিদেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। এই উদ্যান এক সময় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। নিয়মিত গান বাজনার আসর বসতো। কর্মব্যস্ত জীবনে একটু প্রশান্তি পেতে পরিবার নিয়ে এখানে মানুষ ভিড় করতেন। নির্মল হাওয়ায় নির্জনে প্রাকৃতিক সূধা পান করতেন।
নরেন্দ্র নারায়ণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে দুর্লভ প্রজাতির গাছপালা এনে বাগানটি ক্রমাগত সমৃদ্ধ করেছেন, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর বাগানের উন্নয়ন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থা কিছুকাল চলার পর ১৯৬২ সালে এটি সাবেক পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কাছে হস্তান্তরিত হয় এবং বন বিভাগের ওপর সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বর্তায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বন বিভাগ নব-উদ্যোগে উদ্যানের উন্নয়ন শুরু করে, ফলে বাগানের হারানো গৌরব অনেকটা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর দুটি নতুন গ্রীনহাউস নির্মাণসহ সর্বসাধারণের জন্য বাগানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও গড়ে ওঠে। গভীর নলকূপের অত্যধিক ব্যবহারে শহরের পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অন্যান্য পুকুরের মতো বাগানের বিখ্যাত শঙ্খনিধি পুকুরটিও শীতে শুকিয়ে যেত। অবশ্য বর্তমানে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। বলধা উদ্যান বর্তমানে জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটি অংশ হিসেবে বন বিভাগের ব্যবস্থাধীন আছে।
বলধা গার্ডেন দু’টি অংশে বিভক্ত একটি অংশের নাম সাইকী এবং অন্যটি সিবলী। সাইকী অর্থ আত্মা ও সিবলী অর্থ প্রকৃতির দেবী।
সাইকী
এর সাইকী অংশের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে নীল, লাল, সাদা, হলুদ, জাতের শাপলায় ভরা অনেক গুলো শাপলা হাউজ, বিরল প্রজাতির দেশী বিদেশী ক্যাকটাস, অর্কিড, এনথুরিয়াম, ভূজ্জ পত্র গাছ, বিচিত্র বকুল, আমাজান লিলি ও সুরংগ সহ একটি ছায়াতর ঘর।সিবলী
এর সিবলী অংশের মূল আকর্ষণ হচ্ছে শংখ নদ, পুকুর, ক্যামেলিয়া, আশোক, আফ্রিকান টিউলিপস। এখানে আরো আছে সূর্যঘড়ি, জয় হাউজ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এই জয় হাউসে বসে এখানকার ক্যামেলিয়া ফুলের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে তার বিখ্যাত “ক্যামেলিয়া” কবিতাটি লিখেছিলেন।
প্রবেশ মূল্য
বলধা গার্ডেনে প্রবেশমূল্য ২০টাকা। পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের টিকিট লাগে না।
সময়সূচি
সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত খোলা। কোনো মধ্যাহ্ন বিরতি নেই।
যাওয়ার উপায়
যাত্রাবাড়ীর দিকে যাওয়া বা সেখান থেকে ছেড়ে আসা ৮ নম্বর গাবতলী পরিহন, বলাকা সিটিং সার্ভিস, ৩৬ নম্বর আর্ক পরিবহনের বাসে চড়ে রাজধানী সুপার মার্কেটে নামতে হবে। এখান থেকে হাটখোলা রোড ধরে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই যাওয়া যায় বলধা গার্ডেন। ৩০ থেকে ৪০ টাকা ভাড়ায় গুলিস্তান থেকেও রিকশা দিয়ে সরাসরি যাওয়া যায়।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]